Mon. Apr 21st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
বিরোধিতাকারীদের আর নৌকা নয়- জানিয়ে দিলেন শেখ হাসিনা

খােলাবাজার ২৪,শনিবার, ০৬ এপ্রিল ২০১৯ঃ সম্প্রতি ৪ ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতাকারী নেতাদের আর নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের বিরুদ্ধে শোকজ লেটার (কারণ দর্শানোর নোটিশ) ইস্যু করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার গণভবনে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম- কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

সূত্র জানায়, বৈঠকে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা (যুগ্ম-সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক) উপজেলা নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবির চিত্র তুলে ধরেন। এর কারণ হিসেবে দলীয় নেতা, এমপি-মন্ত্রীর বিরোধিতা ও স্থানীয় কোন্দলকে দায়ী করে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন তারা। এতে নৌকার বিরোধিতাকারী অনেকের নামও উল্লেখ করা হয়। সবার তালিকা করে শোকজ করতে নির্দেশ দেন দলীয় সভাপতি এবং সাফ জানিয়ে দেন এদের আর নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেয়া হবে না।

বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৪ দফায় অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড যাদের হাতে নৌকা তুলে দিয়েছে, তাদের অনেকেই বিজয়ী হতে পারেননি। স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় কোন্দল, কিছু মন্ত্রী-এমপির বিরোধিতা এবং জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরাও অনেক জায়গায় নৌকার বিরোধিতা করার  কারণে এ অবস্থা হয়েছে। তাদের অনেকের তালিকা করা হয়েছে। আরো করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা নৌকার বিরোধিতা করেছেন, নৌকার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছেন, মারামারি করেছেন তারা যাতে আর কোনোদিন নৌকা প্রতীক না পায়, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সাংগঠনিক সম্পাদকরা তাদের রিপোর্টে নৌকার বিরোধিতাকারীদের নাম প্রকাশ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি এ ব্যাপারে খুব কঠোর মনোভাব দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা বিরোধিতা করেছেন, তারা দলের যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। প্রত্যেককে কেন্দ্রীয়ভাবে শোকজ করা হবে। এ প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন তিনি।

বৈঠক সূত্রে আরো জানা গেছে, তৃণমূলে সংগঠনের কোন্দলের চিত্র তুলে ধরে বক্তব্য রেখেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। তিনি অবিলম্বে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছেন।

সূত্র জানায়, বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন নৌকার বিরোধিতা করে প্রচার চালানো এমপি-মন্ত্রীদের বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী অভিযুক্ত এমপি-মন্ত্রীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার নির্দেশ দেন। আরো বলেন, এসব এমপি-মন্ত্রীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আগামীতে তারা যেন নৌকা না পান।

এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিভিন্ন দিক নিয়ে বক্তব্য রাখেন দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক  জাহাঙ্গীর কবীর নানক, বি এম মোজাম্মেল হক, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।

দলের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, আজ-কালের মধ্যেই শোকজের চিঠির খসড়া (ড্রাফট) রেডি করে প্রধানমন্ত্রীকে দেখানো হবে। তারপর চলতি সপ্তাহেই অভিযুক্তদের কাছে এ চিঠি পাঠানো হবে। সাত থেকে দশ দিনের সময় দিয়ে এ শোকজ নোটিশ পাঠানো হবে।

মোট কতজন এমপি-মন্ত্রী এ তালিকায় আছেন- তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এ তালিকায় রয়েছেন অন্তত অর্ধশত এমপি-মন্ত্রী।

বৈঠকে ৮টি বিভাগে ৮টি কেন্দ্রীয় টিম গঠন করার ওপর জোর তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, বিভাগীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সমন্বয়ে এ টিম গঠন করা হবে। দ্রুত তারা তৃণমূল সফর করবে। যেখানে কমিটির মেয়াদ অনেক আগে শেষ হয়েছে, সেখানে ইউনিটে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গঠন করবেন তারা। এ তালিকায় বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনও আছে। এ ছাড়া তৃণমূলে মুজিব বর্ষ উদযাপনেও এ কমিটিকে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়।

প্রতি জেলায় সাংগঠনিক সফরের জন্য গঠিত খসড়া টিমগুলোতে আর কাউকে যুক্ত করা যায় কি না- তা দেখে শিগগিরই সাংগঠনিক সফরে নামার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন আগামী ৫ মে ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হিসেবে ইকরামুল হক টিটুকে সমর্থন দেয়ার কথা জানায় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি।

এদিকে, বৈঠকে আরো সিদ্ধান্ত হয় যে, তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রত্যেক নেতাকর্মীর ডাটাবেজ করা হবে। সেখানে প্রত্যেক নেতাকর্মীর নাম-ঠিকানা ও যোগাযোগ চ্যানেল উল্লেখ থাকবে। চলমান এ কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিকেল ৫টায় শুরু হওয়া এ বৈঠক চলে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উপস্থিত ছিলেন সভাপতিমন্ডলীর সদস্যদের মধ্যে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, ড. আবদুর রাজ্জাক, ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, রমেশ চন্দ্র সেন, এডভোকেট আবদুল মান্নান, পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য। এ ছাড়াও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের বিভিন্ন সম্পাদক ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।