
খােলাবাজার ২৪, শনিবার, ১৩ এপ্রিল ২০১৯ঃ শেষ চৈত্রের আগুন রঙ এখন প্রকৃতিতে। আর মাত্র একদিন পরই বাঙালির উৎসবের দিন পহেলা বৈশাখ। উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা, আবেগ আর উল্লাসে নতুন করে জেগে উঠবে বাঙালি, বরণ করবে নতুন বঙ্গাব্দ ১৪২৬’কে। তারই আয়োজন চলছে সবখানে।
‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানের সঙ্গে চির নতুনের ডাকে পহেলা বৈশাখের ভোরে জেগে উঠবে বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত।
প্রাণের ঢাকায় রমনার বটমূলে ‘ছায়ানট’-এর বর্ষবরণের নানা গান আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের মঙ্গল শোভাযাত্রার পাশাপাশি রাজপথে মানুষের আনন্দ যাত্রা উৎসব প্রিয় বাঙালিকে নতুন করে জাগিয়ে দেবে।
১৪২৬ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিতে এরই মধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে রমনার বটমূল। আসছে রোববার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই এখানে ছায়ানটের শিল্পীরা একসঙ্গে গলা মিলিয়ে গেয়ে উঠবেন ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো।’
আয়োজকরা জানান, এবারও ছায়ানটের শিল্পীরা পহেলা বৈশাখ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রমনার বটমূলে সম্মিলিত কণ্ঠে গান গেয়ে নতুন বছরকে আহ্বান জানাবেন। ছায়ানটের এবারের ভাবনা- ‘সম্প্রীতি ও স্বদেশ’। এখানে গান গাইবেন অতিথি শিল্পী ও ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও শিল্পীরা।
ছায়ানট বাংলাদেশের অন্যতম সংস্কৃতিক সংগঠন। ১৯৬১ সালে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও উৎসব পালন করা ছাড়াও এই সংগঠন বাদ্যযন্ত্র, সঙ্গীত, নৃত্য প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান ও সঙ্গীত বিদ্যালয় পরিচালনা করে থাকে।
পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠির নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ১৯৬৭ সালে (১৩৭৪ বঙ্গাব্দ) প্রতিবাদের অনন্য ভাষা হিসেবে রমনা বটমূলে পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু করে ছায়ানট। ১৯৭১ সালে বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধের বছর ছাড়া প্রতিটি পহেলা বৈশাখেই সুরের মূর্ছনা আর কথামালায় রমনা বটমূলে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে ছায়ানট।
এবারের পহেলা বৈশাখে ৫২ বছরে পদার্পণ করছে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ উৎসব। এই অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি বিভিন্ন টেলিভিশন।
বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে রমনা পার্ককে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার বিকালে সরেজমিনে রমনা পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, রমনা বটমূলে (অশ্বত্থ গাছ) মঞ্চ তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
পার্কের দেয়ালে দেয়ালে আঁকা হচ্ছে নানা রঙের আল্পনা ও চিত্রকর্ম। এছাড়া পুরো রমনা পার্ক জুড়ে লাগানো হচ্ছে শতাধিক সিসি ক্যামেরা। পাশাপাশি পুলিশ ও র্যাবের কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হচ্ছে। বসানো হচ্ছে ওয়াচ টাওয়ার।
বাঙালির বর্ষবরণের আরেকটি প্রধান কর্মযজ্ঞ মঙ্গল শোভাযাত্রা। যেখানে নানা প্রতীক, চিত্র আর মুখোশের মাধ্যমে অশুভ শক্তির বিনাশ কামনা করা হয়; প্রার্থনা করা হয় সত্য, সুন্দর এবং মঙ্গলের জন্য। ১৪২৬ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদেও এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বিশাল এই কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে চারুকলা প্রাঙ্গণে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী।
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, এবার পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নৈবেদ্য কাব্যগ্রন্থের ৪৮ নম্বর কবিতার একটি লাইন- ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’। বর্তমানে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তারপরও আমরা নানা ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। সে জন্যই এবার মঙ্গল শোভাযাত্রায় অনুপ্রেরণার উৎস সন্ধান করা হবে। যে কারণে এই বছর পাখির মোটিভগুলোকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ বছর একটা সমস্যা রয়েছে যে, আমাদের দুই পাশের রাস্তা বন্ধ। মেট্রোরেলের কাজ চলছে। সে কারণেই এবার শোভাযাত্রার প্রদক্ষিণের পথটা ছোট হয়ে গেছে। তাই শাহবাগ মোড় থেকেই আমাদের ঘুরে আসতে হবে। পাখির মোটিভ ছাড়াও প্রতি বছরের মতো অন্যান্য মোটিভগুলোও থাকবে শোভাযাত্রায়, তার সবগুলো নিয়ে হয়তো এ বছর মুভ করা যাবে না। তাই কিছু মোটিভ রাস্তায় দাঁড় করে রাখা হবে।
মঙ্গল শোভাযাত্রার সমন্বয়কদের একজন তন্ময় দেবনাথ। তিনি জানান, এ বছর শোভাযাত্রায় ১০টির মতো শিল্প কাঠামো থাকবে। এর মধ্যে রয়েছে ঘোড়া, পাখি ও উল্টা কলসি। সবচেয়ে আর্কষণীয় কাঠামো হিসেবে থাকছে বাঘ ও বক। রূপকথার ওপর ভিত্তি করে এ শিল্প কাঠামোটি তৈরি করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জয়নুল গ্যালারির দক্ষিণ পাশে চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে চলছে শোভাযাত্রার প্রতিকৃতি তৈরির কাজ। সেখানে পাখির শিল্পকর্মের পাশাপাশি বানানো হচ্ছে বাঘ, বক, ঘোড়া, উল্টা কলসি, পেঁচা, কাঠঠোকরাসহ বিভিন্ন প্রতিকৃতি।