খােলাবাজার ২৪,বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৯ঃ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চলমান লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীর হয়ে প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন বাংলাদেশি অভিনেতা ফেরদৌস।
মঙ্গলবার ভারতের ফরেনার্স ডিভিশনের আদেশে তিনি দেশে ফিরে এলেও বিজেপির নেতাকর্মীরা তার কঠোর সমালোচনা করছেন বলে জানায় ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো।
দেশটির জি নিউজ জানায়, বুধবার সকালে বাগুইআটিতে নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়ে দমদম লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, তৃণমূল বাংলাদেশ থেকে ভোটার নিয়ে গিয়ে নির্বাচনে জয় লাভ করতে চাইছে।
‘ওপার বাংলা থেকে ভোটার এনে ভোট বৈতরণী পার করতে চাইছে তৃণমূল। সেই কারণেই বাংলাদেশের তারকাদের প্রচারে ব্যবহার করা হচ্ছে,’ বলেন তিনি।
শমীক ভট্টচার্য আরও বলেন, ‘ফেরদৌস বা অন্য কোনও বিদেশি তারকাকে ভোট প্রচারে আনা অসাংবিধানিক। তৃণমূল আসলে কোনও রাজনৈতিক দলই না। এখানকার সংখ্যালঘু মানুষদের অন্য চোখ দিয়ে দেখে তৃণমূল কংগ্রেস। কোনো মানুষের ধর্ম তার রাজনৈতিক পরিচয় হতে পারে না।’
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, নির্বাচনী প্রচারণায় ফেরদৌসের যোগদান নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও) আরিজ আফতাবের কাছে অভিযোগ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির নেতারা।
বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ বলেন, ‘কোনও বিদেশি নাগরিক কোনও ভাবেই আমাদের দেশের রাজনৈতিক বিষয়ে বা সরকার গঠনে নাক গলাতে পারেন না। অর্থাৎ ভোটের প্রচারে নেমে জনমতকে প্রভাবিত করার অধিকার বিদেশি নাগরিকের নেই। তা সত্ত্বেও তৃণমূল ইসলামপুরে দুই বাংলাদেশি অভিনেতাকে এনে প্রচার করিয়েছে। কারণ, দলীয় কর্মী এবং নিজেদের শিবিরের চিত্রতারকাদের উপরে আর তাদের ভরসা নেই।’
রাহুল দাবি করেন, ফেরদৌস-সহ দুই বাংলাদেশি অভিনেতাকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা উচিত ছিল। যে তৃণমূল নেতা বা কর্মীরা তাদের ডেকে এনেছেন, তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা উচিত।
‘বাংলাদেশের জামাতে ইসলামির সঙ্গে তৃণমূলের যোগসাজশের ফলেই এমনটা ঘটেছে বলে আমাদের সন্দেহ। তাই আমরা এই ঘটনায় এনআইএ তদন্ত চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিচ্ছি,’ বলেন রাহুল।
অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সঞ্জয় বসু জানান, এই ঘটনায় জেলা নির্বাচন অফিসার তথা জেলা শাসকের রিপোর্ট চাওয়া হয়। সেই রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হয় নির্বাচন কমিশনে। ওই কমিশন সূত্রের ব্যাখ্যা, কোনও রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর হয়ে বিদেশিদের প্রচারের বিষয়টি নির্বাচনী বিধিভঙ্গ কি না, সেটা কোথাও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। সম্প্রতি কোথাও এই ধরনের বিষয় সামনে আসেনি। সেই জন্যই বিষয়টি নিয়ে কমিশনকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।
রাজ্যসভার বিজেপি সদস্য স্বপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘এই ঘটনাকে ছোট করে দেখলে চলবে না। কারণ, এই উদাহরণ থেকে গেলে পাকিস্তান থেকেও কেউ এসে এখানে ভোটের প্রচারে নেমে পড়তে পারেন।’
অভিযোগের জবাবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’
ফেরদৌস রায়গঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালের হয়ে প্রচার করেছেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। তৃণমূল জানিয়েছে, ১৪ এপ্রিল উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ ব্লকের হেমতাবাদ, বাঙালবাড়ি, নওদা, বিষ্ণুপুর ও চইনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকা এবং রায়গঞ্জ ব্লকের মাড়াইকুড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় রোড শো করে নির্বাচনী প্রচার চালান ফেরদৌস। ১৫ এপ্রিল তিনি করণদিঘি ও ইসলামপুর ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতেও প্রচার করেন তিনি।
কানাইয়ালাল অবশ্য মঙ্গলবার দাবি করেন, ফেরদৌস তার সমর্থনে হেমতাবাদ ও রায়গঞ্জে রোড শো করে প্রচার চালিয়েছেন বলে তার জানা নেই। তবে জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য বলেন, ‘উত্তর দিনাজপুরের সঙ্গে বরাবর যোগাযোগ রয়েছে ফেরদৌসের। এর আগে তিনি ছবির শুটিং করতে একাধিক বার এই জেলায় এসেছেন।’
সংবাদমাধ্যমে ফেরদৌসের ভোট-প্রচারের খবর দেখে তথ্য যাচাই করে দিল্লি। কলকাতার ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (এফআরআরও) থেকে সবিস্তার রিপোর্ট পেয়েই উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপারের মাধ্যমে ফেরদৌসকে দেশ ছাড়ার নোটিস ধরানো হয়। ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করায় ভবিষ্যতে তার ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে দাড়াতে পারে বলে জানাচ্ছেন দিল্লির কর্মকর্তারা।
আনন্দবাজার বলছে, বাংলাদেশি অভিনেতার এভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার খবর ঢাকার মন্ত্রণালয়কেও জানিয়েছে দিল্লি। এক মুখপাত্র জানান, ভিসার শর্ত মানাই শেষ কথা নয়, বিদেশে গিয়ে সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রচার করা অনৈতিক। ফলে ফেরদৌসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া অপরিহার্য ছিল।