Mon. Jun 16th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
 
খােলাবাজার ২৪,বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০১৯ঃবাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গত কয়েকদিনে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে কারান্তরীণ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি। গণমাধ্যমে ‘প্যারোল’ বিষয়টি উঠে আসলেও দলটির উচ্চ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার প্যারোল নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। প্যারোলে মুক্তিকে তারা গণমাধ্যমের ‘মিথ্যাচার’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

যদিও দলের বিভিন্ন সূত্রের খবর, প্যারোলে হলেও খালেদা জিয়ার মুক্তি দেখতে চান দলের একটি অংশ। অন্তত তার স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ‘প্যারোল সমঝোতা’র পক্ষে তারা।

হঠাৎ করেই খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি উঠে এসেছে মুলত সংবিধান অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ নেওয়ার সময়সীমা সামনে আসায়। আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বিএনপির নির্বাচিত ছয় সংসদ সদস্যকে শপথ নিতে হবে। অন্যথায় তাদের সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবে। একই সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি নিয়ে বিএনপির মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ আছে। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে বিএনপির নীতি নির্ধারকরা বৈঠক করেছেন।

দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের মধ্যে একটি বড় অংশ এখনও মনে করেন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির মাধ্যমেই সুচিকিৎসা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজনে নির্বাচিত সাংসদদের শপথ নেয়ারও পক্ষে তারা। তাদের মতে, প্যারোলে না হলে আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার জামিন পাওয়া সম্ভব নয়। এজন্য প্যারোলে মুক্তি না পেলে কিভাবে জামিন সম্ভব সেটি নিয়েও উদ্বেগ আছে তাদের মধ্যে।

তবে দলের অপর একটি অংশ মনে করছেন, খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিদেশে গেলে তার এবং বিএনপির রাজনীতির এখানেই সমাপ্তি ঘটবে। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার আপোষহীন তকমাটাও আর থাকবে না। যদিও দলটির নীতি নির্ধারকরা খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়েছেন। বিষয়টিকে সরকারের ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছেন তারা।

যেমনটি বলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রীর প্যারোল নিয়ে যে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে তার সঙ্গে  সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জড়িত। খালেদা জিয়া চরম অসুস্থ, তার ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই, তিনি তার পছন্দমত একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চাচ্ছেন। এ বিষয়ে তো কোনো প্রতিবেদন করা হয় না, তাহলে তার প্যারোল নিয়ে নোংরা মিথ্যাচার কেন?’

সম্প্রতি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও নজরুল ইসলাম খান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে হাসপাতালে সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাৎ শেষে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) বেশ অসুস্থ, এখনও খেতে পারছেন না। পা ভাজ করতে পারেন না। তার বাম হাত সেই আগের মতোই রয়ে গেছে। অর্থাৎ বাম হাতটা ঠিকমতো কাজ করছে না। এ অবস্থার মধ্যে তিনি আছেন। এক কথায় ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) যথেষ্ট অসুস্থ।’

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতে তার প্যারোল নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথম হচ্ছে, প্যারোল নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। প্যারোল আমাদের দলের বিষয় নয়। এটা খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের বিষয়। সুতরাং এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করিনি।’

তবে দলের বেশ কয়েকটি সূত্র বলছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে ভালো চিকিৎসার জন্য প্যারোলের চেষ্টা চালাচ্ছেন তার পরিবারের সদস্যরা। তাদের কাছে এ মুহূর্তে বিএনপির কারাবন্দী নেত্রীর স্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। সেজন্য প্রতিনিধির মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

এদিকে বিএনপির একটি অংশ প্যারোল বিষয়টিকে উড়িয়ে দিলেও দলটির নীতি নির্ধারকদের একজন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই বিষয়ে তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন। দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘যে যাই বলুক, প্যারোল বিষয়টি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যাপার। এটা তার স্বাস্থ্য ও শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভরশীল। এটা নিয়ে রাজনীতির কোনো কারণ নেই। তিনি যা চাইবেন সেটিই আসল কথা।’ দলের নীতি নির্ধারকদের বৈঠকে তার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হরেও প্যারোল নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান তিনি।

দলের একটি সূত্র বলছে, সমঝোতার মাধ্যমে হলেও দলের একটি অংশ খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে আগ্রহী। কিন্তু খালেদা জিয়া এখন পর্যন্ত প্যারোল বা কোনো ধরনের সমঝোতায় তার মুক্তির ব্যাপারে আগ্রহী নন। তিনি নিজে এই বিষয়ে কোনো মত দেননি। হয়তো তিনি আরো ভাবছেন। খালেদা জিয়ার কারামুক্তি এবং তার চিকিৎসার ব্যাপারে দলে কারও ভিন্নমত নেই। সবাই চান, দ্রুত কারামুক্ত হয়ে খালেদা জিয়া দলের নেতৃত্ব দিন।

এদিকে সংসদে শপথ নেওয়ার গুঞ্জনকে নাকচ করে দিয়ে বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা বলছেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে তারা যাবেন না। এক্ষেত্রে বিএনপির নেত্রীর জামিন হলে সংসদে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক থাকবেন বলে তারা জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে বগুড়া ৪ আসনের বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. মোশাররফ হোসেন জানান, ব্যক্তিগতভাবে তিনি মনে করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের যেসব মামলা চলমান রয়েছে সেগুলোতে তার জামিন পাওয়া উচিত। নেত্রী জামিন পেলে সংসদে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক থাকবেন তারা, তবে প্যারোলে মুক্তিতে নয়। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে তিনি যাবেন না বলে জানান।

চাপাইনবাবগঞ্জের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্যারোল মুক্তির বিষয়টি ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) একান্ত বিষয়। কারণ এর সঙ্গে তার স্বাস্থ্যের বিষয়টি জড়িত। তবে দলীয় সিদ্ধান্তর বাইরে আমি যাবো না। দল যে সিদ্ধান্ত নেবে আমি সেদিকেই যাবো।’

খালেদা জিয়ার প্যারোল নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান  বলেন, ‘যে বিষয়টি (প্যারোলে মুক্তি) নিয়ে আমরা কোনো আলোচনাই করিনি সে বিষয়টি নিয়ে এতো কথা কেন? খালেদা জিয়ার যে মামলাগুলো চলছে সেগুলোতে তিনি জামিনযোগ্য। তাহলে প্যারোলে মুক্তি কেন নেবেন তিনি। জামিনে মুক্ত হলে তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি কোথায় চিকিৎসা করাবেন-দেশে না দেশের বাইরে।

আমরা চাই সরকার মানবিক হোক। যেহেতু তারা যে করেই হোক ক্ষমতায় আছে, চাইলে বা সহযোগিতা করলে খালেদা জিয়া জামিন পাবেন। কারণ, সরকারই খালেদা জিয়ার জামিনে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তিনি জামিন পাওয়ার পর কি করবেন তা তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন।’