Thu. Aug 7th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪,বৃহস্পতিবার, ২৫এপ্রিল ২০১৯ঃ  বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত সমুদ্র সৈকত। অপূর্ব সুন্দরের এক লীলাভূমি। ভ্রমণ পিয়াসীদের তীর্থস্থান বলা হয় কুয়াকাটাকে। দেশ বিদেশের লাখো পর্যটক ভিড় জমান এই কুয়াকাটায়, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার নেশায়।

কিন্তু কিভাবে যাবেন, কোথায় ঘুরবেন আর থাকবেনই বা কোথায়? তাই আপনারদের জন্য পূর্ণাঙ্গ একটি ভ্রমণ গাইড দেয়া হলো আজ।
ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেন:
কুয়াকাটা দুই পথে যেতে পারেন। নৌপথ আর সড়কপথ। নৌপথে যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে যেতে হবে ঢাকা সদর ঘাট। সেখান থেকে প্রতিদিন পটুয়াখালীর উদ্দেশে যাত্রা করে ৪টি অত্যাধুনিক লঞ্চ। তবে লঞ্চে যেতে চাইলে অন্তত একদিন আগেই লঞ্চের টিকিত কেটে রাখা ভালো।
সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া লঞ্চ ভেদে ১২০০ থেকে ২০০০ টাকা। এ ছাড়াও আছে লঞ্চের ডেক, যার ভাড়া আরো কম। আপনি চাইলে লঞ্চেই রাতের খাবার অর্ডার করতে পারেন অথবা নিজের বাসা থেকে নিয়ে যেতে পারেন। লঞ্চের ভ্রমণ খুবই উপভোগ্য।
লঞ্চে প্রথম ভ্রমণ হলে আপনি আপ্লুত হয়ে পড়বেন। বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার ভেতর লঞ্চ ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। সকাল ৬টা বা ৭ টা নাগাদ পটুয়াখালী পৌঁছুবেন। সকাল ৬টা থেকেই প্রতি ১ ঘণ্টা পরপর কুয়াকাটার বাস ছেড়ে যায় পটুয়াখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে। লঞ্চ ঘাট থেকে বাস স্ট্যান্ড এর ভাড়া ২৫-৩০ টাকা।
সড়কপথে যেতে হলে আপনাকে যেতে হবে গাবতলী বাস স্ট্যান্ড। এসি, নন-এসি দুই ধরনের বাস সার্ভিসই পাবেন। নন এসি বাস ভাড়া ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা। সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ৪টা বাস ছেড়ে যায় ঢাকা থেকে। আর নাইট কোচ এর সময় শুরু সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। আর গাবতলী থেকে দুই একটা বাস সরাসরি কুয়াকাটার উদ্দেশে ছেড়ে যায় তবে সেগুলোর সার্ভিস তেমন ভাল নয়।
সড়ক পথে রাস্তার অবস্থা খুবই ভাল। পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটার ভাড়া জন প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।
** একটা জিনিস অবশ্যই মাথায় রাখবেন, সন্ধ্যা ৫টার পর আর কোনো বাস পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটা যায় না। 
কুয়াকাটা যেখানে থাকবেন:
কুয়াকাটা থাকার জন্য অনেক হোটেল রয়েছে। ৩ স্টার মানের হোটেল আছে দুটো। তাছাড়া আছে সরকারি ডাকবাংলো। এ ছাড়া মাঝারি মানের অনেক ভাল হোটেল রয়েছে। সিঙ্গেল বেড এর ভাড়া এইসব হোটেল ৩০০ টাকা থেকে শুরু। আর ৬-৭ জন থাকার জন্য ৪ বেডের রুম নিতে পারেন যার ভাড়া পড়বে ৮০০-১৫০০ টাকার মত। সব হোটেল গুলোই সৈকতের কাছে।
কোথায় খাবেন: 
খাবারের জন্য কুয়াকাটাতে অনেক রেস্তোরাঁ রয়েছে, তবে অর্ডার দেওয়ার আগে অবশ্যই দামটা জেনে নেবেন।
কুয়াকাটা গেলে যা দেখে আসতে কখনোই ভুলবেন না:
কুয়াকাটাতে দেখার মত অনেক কিছুই রয়েছে। সৈকতের কাছেই রয়েছে একটা বৌদ্ধ মন্দির যা আপনার মন কেড়ে নেবে। এই মন্দিরের পাশেই রয়েছে কুয়াকাটার সেই বিখ্যাত কুয়াটি। পাশেই আছে রাখাইন মার্কেট। কেনা-কাটা যা করার এখান থেকেই করতে পারেন। এখানে রয়েছ অসম্ভব সুন্দর সব তাঁতের কাজ। আর বার্মিজ আঁচারের পসরা।
সৈকত থেকে ৬ কিমি দূরে মিছরি পাড়াতে রয়েছে ৩ তলা সমপরিমাণ উচ্চতার আরেক বৌদ্ধ মূর্তি। সৈকতের ঝাউবন থেকে কিছু দূরেই রয়েছে কুয়াকাটা ইকো পার্ক। খুবই নয়নাভিরাম পার্ক। এছাড়া কুয়াকাটা থেকে ট্রলারে করে সাগরের মাঝখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন কিছু সময়ের জন্য। সাথে দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর মত দেখে আসতে পারবেন সুন্দরবনের কিছু অংশ।
সূর্যোদয় হলো সাগর পাড়ের আরেক সৌন্দর্য। যারা কুয়াকাটা আসেন তারা কেউই এই বিষয়টা মিস করেন না। সূর্যোদয় দেখতে হলে আপনাকে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে এবং যেতে হবে সৈকত থেকে কিছুটা দূরে কাউয়ার চর নামক জায়গায়। যেতে পারেন মোটরসাইকেলে করে। সূর্যোদয় দেখার দৃশ্য যে একবার দেখেছে সে কখনো ভুলতে পারবে না। এছাড়া কাউয়ার চরে দেখতে পাবেন লাল কাঁকড়ার ছুটোছুটি। কুয়াকাটাতে রয়েছে জেলে পল্লী। সৈকতের পশ্চিম দিকে। চাইলে দেখে আসতে পারেন। আর সমুদ্রের পানি যদি গায়ে লাগাতে চান, তাহলে বিনা দ্বিধায় নেমে পড়তে পারেন সাগরের পানিতে।
এখানে কক্সবাজারের মত চোরাবালি টাইপের কিছু নেই। আর কোনো চোরা খাদও নেই। সৈকতে যারা বাইক চালাতে চান তাদের জন্যও আছে সুখবর। কিলোমিটার হিসেবে বাইক ভাড়া পাওয়া যায়। প্রতি কিলো ১০টাকা। সব শেষে প্রিয়জনের সাথে এক মনে দেখে নেবেন সূর্যাস্তের সেই হৃদয় ভোলানো দৃশ্য। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল নির্জনতা। ঢেউ এর গর্জন, তীরে আছড়ে পড়া ঢেউ আপনাকে অন্য জগতে নিয়ে যাবে। সাগরের সাথে একাত্ম হওয়ার এমন সুযোগ কখনোই হারাবেন না।

অন্যরকম