Wed. Apr 23rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪, শনিবার২৫ মে,২০১৯ঃ ভারতে ১৭ তম লোকসভা নির্বাচনে বিরাট জয়ে যখন উল্লসিত মোদীর ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), ঠিক তখন নির্বাচনে ভরাডুবিতে মান-অভিমান ও ভাঙনের সুর ভারতের সবচেয়ে ইতিহাস সমৃদ্ধি দল কংগ্রেসে।

সাতদফা ভোটগ্রহণের পর  বৃহস্পতিবার ফল ঘোষণা করে দেশটির নির্বাচন কমিশন। যেখানে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে নয়া উত্থান ঘটে মোদী ও তার দল বিজেপির।

আর গত বছরের তুলনায় কিছুটা উন্নতি হলেও, ভরাডুবি থেকে রেহাই মেলেনি রাহুল গান্ধী ও তার দলের। এমনিক নিজ আসনেও জিততে পারেননি রাহুল।

নির্বাচনে এতো বাজেভাবে হারায় রাহুল ও দলের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে রাজনৈতিক মহলে। মোদীর যোগ্য প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে অনেকটা ব্যর্থ রাহুলের। তাই গুঞ্জন ওঠে পদত্যাগের।

এমনকি ভারতীয় অনেক সংবাদমাধ্যম রাহুলের পদত্যাগের খবর প্রচার করে। সত্যিই কি রাহুল পদত্যাগ করছেন?

ভারতীয় গণমাধ্যমসহ বিশ্বের অনেক সংবাদমাধ্যমে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে মোদীর নতুন রাজ্যভিষেক নিয়ে যতটা আলোচনা হওয়ার কথা, তারচেয়ে  আলোচনার শীর্ষে ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির প্রধানের পদত্যাগ নাটক।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, কংগ্রেসের এমন লজ্জাজনক হারে নিজেকে দায়ী করেই কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে সরে যাচ্ছেন রাহুল। হ্যা ঘটনা অনেকটা সত্যই। তবে, তা আর চূড়ান্ত রুপ নিতে দেননি কংগ্রেসের প্রবীন নেতারা।

নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ ও দলের ভারসাম্য ঠিক রাখতে শনিবার দিল্লীতে আলোচনা সভার আয়োজন করে কংগ্রেস। যেখানে ওয়ার্কিং কমিটিতে সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন রাহুল গান্ধী। কিন্তু কমিটির সকলেই একযোগে রাহুলের সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন।

রাহুলের বিপরীতে এমন অবস্থায় সভাপতির হাল ধরার মতো যে কেউ নেই, সে ইঙ্গিতও দেন তারা।

এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, “রাহুল ইস্তফার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু তা সরাসরি খারিজ করে দেওয়া হয়।”

বৈঠকে সোনিয়া গান্ধী, রাহুল, প্রিয়ঙ্কা, মনমোহন সিংহসহ দলের শীর্ষ নেতারা ছিলেন। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, দলের ভরাডুবির জন্য নিজের দায় স্বীকার করে নিয়ে বৈঠকে সকলের কাছে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন রাহুল।

তবে সেই ইচ্ছাকে সরাসরি খারিজ করে দেন দলের সামনের সারির নেতারা। রাহুলের ইস্তফার ইচ্ছাপ্রকাশ নিয়ে খবর আসা শুরু করতেই কংগ্রেসের তরফে তা খারিজ করে দেওয়া হয়।

রাহুল কি কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেবেন, না কি ওই পদেই থাকবেন, লোকসভার ফল বেরনোর পর থেকেই এ নিয়ে জল্পনা ছিল তুঙ্গে। সেই জল্পনার পারদ আরও চড়ে শনিবার।

গোটা রাজনৈতিক মহলে এ দিন সবচেয়ে বড় চর্চার বিষয় ছিল রাহুলের পদত্যাগের বিষয়টি। কিন্তু সেই জল্পনায় দাঁড়ি টানে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি।

কোলকাতা ২৪ এর খবরে বলা হয়, বৈঠকে লোকসভা নির্বাচনে দেশ জুড়ে দলের ভরাডুবির বিষয়টি নিয়ে নিয়ে চুলছেঁড়া বিশ্লেষণ চলে।  কেন এমন ফল হল, কোথায় কোথায় ত্রুটি ছিল এসব নিয়ে আলোচনা।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস পেয়েছিল ৪৪টি আসন। গত বারের তুলনায় এবার টেনেটুনে আরও ৮টি আসন বাড়াতে পেরেছে তারা।

মোদীকে ঠেকাতে দেশ জুড়ে যে মোদী বিরোধী ঝড় তুলতে চেয়েছিলেন রাহুল, সেই প্রচেষ্টা থমকে গিয়েছে মোদী-শাহের কৌশলে। আগের বারের তুলনায় আরও ২১টি আসন বাড়িয়ে বিপুল জয় নিয়ে এসেছে বিজেপি।

মোদী ম্যাজিকের কাছে পুরোপুরি ফ্লপ রাহুলের ‘চৈকিদার চোর হ্যায়’। ভোটের ফল দেখার পরই দলের বিপর্যয়ের দায় নিজের ঘাড়ে নিয়েছেন রাহুল।

এরপরই কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়ছিলেন রাহুল গান্ধী। তাকে প্রশ্নও করা হয়েছিল, তা হলে কি এবার সভাপতির পদ ছাড়তে চলেছেন রাহুল? এ প্রসঙ্গে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “ওয়ার্কিং কমিটি ও আমার উপর বিষয়টা ছেড়ে দেওয়াই ভাল।”

রাহুলের এই উত্তরে জল্পনা বেড়েছে বই কমেনি। বিভিন্ন সূত্র থেকে এমনও খবর ছড়িয়েছে, এই ‘সিদ্ধান্ত’ থেকে তাকে বিরত রাখতে নাকি দলের নবীন নেতারা রাহুলকে বোঝানোর চেষ্টা করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রাহুল ইস্তফা দেবেন কি না সেটা যেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, দলের কাছে তেমনই গুরুত্বপূর্ণ এবারের ভোটে বিপর্যয়ের কারণ খোঁজার বিষয়টা।

কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলসহ ১৭টি রাজ্যে পুরোপুরি ধরাশায়ী কংগ্রেস। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল যে ছত্রিশগড়, রাজস্থান এবং মধ্য প্রদেশে বিধানসভার জয় কংগ্রেসকে লোকসভা নির্বাচনে লড়ার বাড়তি অক্সিজেন জুগিয়েছিল, সেই তিন রাজ্যেই মোদী ঝড়ে উড়ে গিয়েছে রাহুলের ক্যারিশমা।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, যে উত্তরপ্রদেশে ভোট ধরে রাখতে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে ময়দানে নামিয়ে বাজিমাত করতে চেয়েছিলেন রাহুল, সেখানেও সফল হননি রাহুল।

এদিকে, রাহুলের পদত্যাগের গুঞ্জন ওঠার সাথে উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, কর্নাটক— এই তিন রাজ্যের দলীয় প্রধান ইস্তফাপত্র শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়েছেন বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে বলা জানানো হয়েছে।

দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত রাহুল নতুন নাটকের জন্ম দেন কিনা।