Tue. Apr 22nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪,শুক্রবার ৩১মে ২০১৯ঃ ঈদ এলেই কদর বেড়ে যায় রাজশাহী সিল্কের। সিল্ক শাড়ি কিংবা সিল্কের পাঞ্জাবি ছাড়া জমে না অনেকের ঈদ আনন্দ। পোশাকপ্রিয় এসব মানুষের কথা চিন্তা করে ঈদকে ঘিরে সিল্ক পণ্যের নানা পসরা নিয়ে নিজেদের শোরুম সাজিয়ে তুলেছে রাজশাহীর সিল্ক হাউসগুলো। হাতের নাগালে ঈদ চলে আসায় রাজশাহী নগরীর বিসিক এলাকায় অবস্থিত সিল্কের শোরুমগুলো ক্রেতাদের ভিড়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি চলছে কেনাকাটা। রাজশাহী সিল্কের সুনাম থাকায় স্থানীয়রা ছাড়া বাইরে থেকেও ক্রেতারা আসছেন শোরুমগুলোতে।

এবারের রমজান মাসের প্রায় পুরোটাই রয়েছে উষ্ণ। এই গরমের মধ্যে ঈদের আনন্দ যেন অস্বস্তিকর না হয়, সিল্কের শাড়ি, থ্রিপিস, পাঞ্জাবি ও বাচ্চাদের পোশাক তৈরিতে সেদিকটি লক্ষ রেখেছেন রাজশাহীর রেশম ব্যবসায়ীরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্রেতাদের রুচি, চাহিদা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের কথা মাথায় রেখে নতুন নতুন পণ্যে তাঁরা সাজিয়ে তুলেছেন শোরুমগুলো।

রাজশাহী সিল্ক মানে তুতগাছ থেকে পাওয়া গুটি সুতা দিয়ে তৈরি রেশম কাপড়, এমনটা আর এখন নেই। দেড় দশক ধরেই রাজশাহী সিল্কের যেসব পোশাক বাজারে পাওয়া যায়, তা তৈরি হয়ে থাকে বিদেশি সুতা দিয়ে। মূলত চীন থেকে আসা সুতা দিয়ে তৈরি হয় রাজশাহী সিল্ক। তবে সুতা বাইরে থেকে এলেও রাজশাহীর কারিগরদের হাতের নিপুণ কাজ মন জয় করে অগণিত মনকে।

নগরীর সিল্ক শোরুমগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সিল্কের শাড়ি, পাঞ্জাবি, শেরওয়ানি, থ্রিপিস, শার্ট, হিজাব, ওড়না, স্কার্ফ প্রভৃতি পোশাক বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা ব্যস্ত তাঁদের পছন্দের পোশাক পছন্দ করতে। বিক্রেতারা ব্যস্ত ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পোশাক দেখাতে।

রাজশাহী সিল্ক ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী আবদুল কাদের মুন্না জানান, অন্যবারের মতো এবার ঈদেও ব্যবসা ভালো হচ্ছে। শাড়ি, পাঞ্জাবি, শেরওয়ানি, থ্রিপিস, শার্টসহ বিভিন্ন পোশাক বিক্রি হচ্ছে। বলাকা, মক্কা, কাতান, ছিপ কাতানসহ বিভিন্ন নামের শাড়ি এক হাজার থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। পাঞ্জাবি এক হাজার থেকে সাত হাজার টাকা, শেরওয়ানি আট হাজার থেকে ২৫ হাজার, থ্রিপিস এক হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। সিল্কের থ্রিপিস, হিজাব, ওড়না, স্কার্ফ এবং মসলিন, মটকা, তসর কাতান, বলাকা কাতান, সাটিং সিল্ক ও এন্ডি প্রিন্টের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে রাজশাহী সিল্ক ফ্যাশনের শোরুমে।

রাজশাহী সিল্ক ফ্যাশনের মার্কেটিং ম্যানেজার ইউসুফ আহমেদ জানান, এখন অনলাইনেও অনেক বেশি পোশাক বিক্রি হচ্ছে। ঘরে বসে থেকেই সবাই সবকিছু কিনতে পারছে।

সপুরা সিল্কের ম্যানেজার সাইদুর রহমান বলেন, ‘সারা বছরই আমাদের ব্যবসা চলে। তবে ঈদের সময় একটু বেশি ভালো হয়। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার ক্রেতাদের সমাগম বেশি আছে। রাজশাহী ছাড়াও খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, ঈশ্বরদী, পাবনা, নাটোর, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতারা আসছেন।

বিশেষ করে রাজশাহীর সঙ্গে ট্রেনের যোগাযোগ আছে, সেসব এলাকা থেকে ক্রেতারা আসছেন। সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বেচাবিক্রি হচ্ছে। মাঝে ইফতারি ও নামাজের জন্য কিছুক্ষণ বিরতি দেওয়া হয়।

সপুরা সিল্কের ম্যানেজার জানান, মসলিন সিল্ক, এন্ডি সিল্ক, বলাকা সিল্ক, সফ্ট সিল্ক, র সিল্কসহ বিভিন্ন নামের শাড়ি দুই হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন তাঁরা। পাঞ্জাবি তিন হাজার ৭০০ থেকে আট হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর দুই হাজার ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে থ্রিপিস।

আমেনা সিল্কের মালিক আমিনুল ইসলাম বাবু জানান, ঈদকে ঘিরে এবার ব্যবসা ভালো হচ্ছে। তাঁরা সিল্কের পাশাপাশি সুতি ও প্রিন্টের পোশাকও বিক্রি করছেন। বেনারসি, জামদানি, কাতান, সিল্ক কাতান, ফুল সিল্ক জামদানিসহ বিভিন্ন নামের শাড়ি বিক্রি করছেন। এগুলো দুই হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন। এ ছাড়া পাঞ্জাবি-শেরওয়ানি এক হাজার থেকে ১৬ হাজার, থ্রিপিস এক হাজার থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন।

অনলাইনে বেচাবিক্রির জন্য ক্রেতার সংখ্যা কম কি না জানতে চাইলে আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অনলাইনে যতই বিক্রি হোক, ঈদের আগে মার্কেটে বা শোরুমে গিয়ে পোশাক কেনার একটা মজা আছে। শিশুরা তো বাজারে ঘুরে ঘুরে ঈদের পোশাক কিনতে পছন্দ করে।

আমেনা সিল্কের সুপারভাইজার নোবেল হক অভিযোগ করে বলেন, ‘ব্যবসা হচ্ছে, কিন্তু লোডশেডিংয়ের জন্য খুব ঝামেলায় আছি। গরমে অনেক সময় ক্রেতারা বেশিক্ষণ থাকতে পারছে না।