
এরপর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হলে সৃষ্টি হয় হাস্যরসেরও। গরুর ধাক্কায় ট্রেন বিকল হওয়ায় সিলেট আখাউড়া রোডে চলাচলকারী ঝুঁকিপূর্ণ রেললাইন ও ইঞ্জিনের সক্ষমতা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। দীর্ঘদিনের পুরাতন জরাজীর্ণ রেললাইন, ট্রেন ও ইঞ্জিন মেরামত কিংবা নতুন নির্মাণ না হওয়ায় প্রায় ঘটছে এ ধরনের ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ জেলার বাসিন্দারা। স্থানীয়রা জানান, রোববার সন্ধ্যার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি কুলাউড়ার হাজীপুর ইউনিয়নের ২০৫ নং পলকি ও ২০৬ নং মনু ব্রিজের মধ্যখানে মাহতাবপুর এলাকায় পৌঁছামাত্র একটি গাভী গরুকে ধাক্কা দেয়। এ সময় গরুটি ঘটনাস্থলেই মারা গেলেও ট্রেনটির ইঞ্জিনের সামনের একটি হুইস পাইপ ভেঙে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ায় ঘটনাস্থলেই থেমে যায় ট্রেন। এ সময় ট্রেনটিতে থাকা যাত্রীদের মধ্যে দেখা দেয় আতঙ্ক। এমন দৃশ্য আর চিৎকার চেঁচামেচিতে মাহতাবপুরসহ আশপাশের গ্রামের লোকজনও ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তারা জানান, হঠাৎ ওখানে ট্রেন থামা দেখে তাদের বড় ধরনের দুর্ঘটনার ভয় হয়েছিল। কারণ ওই দু’টি ব্রিজের রেললাইনই রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। পরে আটকেপড়া ট্রেনটির ইঞ্জিন মেরামত শেষে সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে পলকি ব্রিজ পাড়ি দিয়ে মাহতাবপুর এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটে। পরে সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে ৭টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত পাইপ মেরামতের পর ট্রেনটি আবার সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। জানা যায় ওই গাভী গরুটি ছিল মাহতাবপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের। রাস্তার পাশের জমিতে চরানো গরুটি ট্রেনের হর্নে ভয় পেয়ে দৌড় দিলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। জয়ন্তিকা ট্রেনের যাত্রী সিলেটের সাব্বির আহমদ, তায়েফ আহমেদ আদনান ও সুলেমান চৌধুরীসহ অনেকেই জানান, হাজীপুর ইউনিয়নের পলকি ব্রিজের উত্তর পাশে গরুকে ধাক্কা দিলে ট্রেনটির ইঞ্জিনের একটি পাইপ ভেঙে যায়। এ সময় ট্রেনে ঝাঁকুনি দেয়। তখন যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্গ দেখা দেয়। কারণ কিছুদিন আগে কুলাউড়ার বরমচাল বড়ছড়া ব্রিজের ওই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রায় তিন শতাধিক আহত ও চারজন নিহত হয়েছিলেন। এরপর থেকে সিলেট-আখাউড়া লাইনের রেলযাত্রীরা অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ পথে চলাচল করছেন। তাই যে কোনো দুর্ঘটনার ভয় তাদের সবসময়ই। এই খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রচার হলে ঘটনার পরদিন সোমবার জেলাজুড়ে সবার মুখে মুখে ছিল ওই দুর্ঘটনার খবর। এ অঞ্চলের অনেকেই রেললাইনের এমন দুর্দশা নিয়ে ক্ষোভে বিদ্রূপ ও ব্যঙ্গ করে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তোলেন। গাভী গরুর ধাক্কায় ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল- এমন শিরোনামে দিনভর এ ঘটনা নিয়ে জেলাজুড়ে নানা তীর্যক ও হাস্যরসের কথা ছিল সবার মুখে মুখে। স্থানীয় বাসিন্দা ও ট্রেনের যাত্রী জানান, ওই দুর্ঘটনার পর মেরামত শেষে ট্রেনটি আবার যাত্রা শুরু করে। তারা আক্ষেপ করে বলেন- এই রুটের যেমন ট্রেন। তেমন তার ইঞ্জিন ও লাইন। এমন দুর্বল লাইন ও ইঞ্জিন থাকায় প্রতিনিয়তই মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে আমরা এই রুটে যাতায়াত করি। সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি- আমরা এই দুর্দশা থেকে মুক্তি চাই। এই রুটে নিরাপদে রেল ভ্রমণ করতে চাই। কুলাউড়া রেল স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মুহিব উদ্দিন জানান, কুলাউড়ায় জয়ন্তিকা ট্রেনটি আসার সময় ছিল সাড়ে ৬টা। কিন্তু ট্রেনটি কুলাউড়ায় এসে পৌঁছায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে।