Sun. Apr 20th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪,মঙ্গলবার,০৯জুলাই,২০১৯ঃরোমাঞ্চ, ক্লাইমেক্স, অ্যান্টিক্লাইমেক্স, আশা, আশাভঙ্গ, সুযোগ আর সুযোগ নষ্ট, অবাস্তব স্বপ্ন নিয়ে মাতামাতি; কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্রিকেট নাট্যমঞ্চের গ্রিনরুমে সেমিফাইনালের অপেক্ষায় এখন ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড, যাদের বিজয় ক্রিকেটবোদ্ধারা আগাম বলে দেন। প্রথম তিনটি দেশ নিয়ে পণ্ডিতরা মোটামুটি নিশ্চিত ছিলেন, তাঁদের চিন্তায় নিউজিল্যান্ড (২০১৫ সালে বিশ্বকাপে রানার্স-আপ) বিষয়টি তেমন জোরালো ছিল না, আর এটা খেলার শুরু থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বোঝা গেছে। শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড পিছিয়ে পড়েও দারুণ ‘কাম ব্যাক’ করেছে। এ ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের দলগত সংহতি, সামর্থ্যের প্রতি সুবিচার এবং দৃঢ় পেশাদার মানসিকতা কাজ করেছে। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মাঠে সেরাটা ঢেলে দিয়ে লড়াইয়ের তো বিকল্প নেই। সময় এবং সুযোগকে কাজে লাগাতে না পারলে পিছিয়ে পড়তেই হবে। বাংলাদেশ লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে বিশ্বকাপ শেষ করেছে অষ্টম স্থান নিশ্চিত করে। কেউ কেউ হয়তো বলবেন, সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ ছিল, সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি—এখন আর অবস্থান! এর পরও পঞ্চম স্থানে থাকতে পারলে কিছুটা হলেও সান্ত্বনা পেত অগণিত ক্রিকেট অনুরাগী, যারা ভালো এবং খারাপ উভয় সময় ক্রিকেটারদের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।

এত আয়োজন, এত ক্রিকেট এক মাসেরও অনেক বেশি সময় ধরে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্রিকেট তো সেই গণ্ডির মধ্যেই আছে। বৈচিত্র্য কোথায়? ক্রিকেট মজা করে, রহস্য করে, কাউকে দেয় আবার কারো সঙ্গে নিষ্ঠুরতা করে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তো মাঠে যোগ্যদের গলায় মালা পরায়। জীবনধর্মী এই খেলা ঘিরে তাহলে সন্দেহে ভোগা কেন? অনিশ্চয়তা খেলার স্বাদকে অন্য রকম করার জন্য। ইংল্যান্ডের ক্রিকেট এখন পর্যন্ত তো যোগ্যদেরই স্বীকৃতি দিয়েছে।

ব্রিটিশ ক্রিকেট লেখক জন রোডস লিখেছেন, অবাস্তব স্বপ্ন দেখতে কেউ মানা করতে পারে না, তবে এটি একসময় বড় ধাক্কা দেয়, হতাশা এবং মনোব্যঞ্জনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনিশ্চয়তা ক্রিকেটের সৌন্দর্য। মাঠে কিন্তু শেষ পর্যন্ত শ্রেয় দলই জেতে। লর্ডসের ফাইনালে যোগ্য দলের হাতেই ট্রফি দেখা যাবে।

বিশ্বকাপ কেন গণ্ডির বাইরে বেরোতে পারল না—এটি সচেতন মহল বুঝতে পেরেছে। যারা সেমিফাইনালে পৌঁছেছে, তাদের ক্রিকেটকাঠামো, সংস্কৃতি, ক্রিকেটীয় অ্যাপ্রোচ, দৃষ্টিভঙ্গি, মনমানসিকতা, আত্মবিশ্বাস এবং পেশাদারি আছে। যারা লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি, তাদের সঙ্গে আছে অনেক ফারাক। তবে যোগ্য দলের কাপ জয়ের বিষয়টি কিন্তু ভিন্ন। ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দল এখন পর্যন্ত শিরোপা জিততে পারেনি।

আবহাওয়া, উইকেট, আম্পায়ারিং নিয়ে কথা, তারপর একটি সময় থেকে সব উইকেটের আচরণ কমবেশি একই ছিল। এখন পর্যন্ত সব কিছুই আইসিসির চিন্তা অনুযায়ী হয়েছে। ক্রিকেটের সঙ্গে বাণিজ্য জড়িয়ে আছে। আর এই বাণিজ্য আইসিসির কাছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উপমহাদেশ থেকে ভারত পয়েন্ট তালিকায় সেরা হয়েই সেমিফাইনালে উঠেছে। একটি খেলায় পরাজিত হয়েছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। বাণিজ্যিক আবেদনে আইসিসির কাছে উপমহাদেশের দেশগুলোর আলাদা একটি গুরুত্ব আছে। আইসিসির জন্য সোনায় সোহাগা হতো যদি উপমহাদেশের আরেকটি দেশ সেমিফাইনালের তাঁবুর মধ্যে স্থান করে নিতে পারত। উপমহাদেশ থেকে পাকিস্তান ১৯৯২ সালে চ্যাম্পিয়ন এবং ১৯৯৯ সালে রানার্স-আপ হয়েছে। শ্রীলঙ্কা ১৯৯৬ সালে চ্যাম্পিয়ন এবং ২০০৭ ও ২০১১ সালে রানার্স-আপ হয়েছে। বিশ্বকাপ আবার উপমহাদেশে ফিরে আসছে ২০২৩ সালে। বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে ভারতে। আর এই বিশ্বকাপ থেকে আইসিসির আয় অনেক বেশি হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

ভারত ও অস্ট্রেলিয়া এই দুটি দল দুর্দান্ত খেলে শক্তিশালী দল হিসেবেই সেমিফাইনালে উঠেছে। ভারত দলটি পুরোপুরি ভারসাম্যময়। খুব ভালো সময় এখন পার করছে। ইংল্যান্ডের চলতি এই বিশ্বকাপের অনেক আগে থেকেই ভারত সাহসী এবং আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছে। অনেক আগে থেকেই তাদের একমাত্র টার্গেট শিরোপা জেতা, যা ২০১১ সালের পর আর পারেনি। ভারত প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছে ১৯৮৩ সালে লর্ডসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে কপিল দেবের নেতৃত্বে। এবার আবার ইংল্যান্ড স্বাগতিক দেশ, ১৯৯৯ সালের পর। ভারতের স্বপ্ন আবার ইংল্যান্ড থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে দাপটের সঙ্গে খেলে বিশ্বকাপ জয়। ভারত দলের খেলোয়াড়রা দারুণ ছন্দে আছেন। তাঁদের ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে দুর্বলতা নেই। যা কিছু ছিল, তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে দলটি সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। ভারতীয় দলের সৌন্দর্য হলো—ব্যাটিং ও বোলিংয়ে একক নৈপুণ্যের পাশাপাশি দলগত নৈপুণ্য। বিরাট কোহলির নেতৃত্বে ভারতীয় দল খেলছে একটি ইউনিট হিসেবে। সবাই জানেন তাঁদের লক্ষ্য এবং কাকে কী দায়িত্ব পালন করতে হবে মাঠে। ভারতের বিপক্ষে আজ সেমিফাইনালে লড়বে ওল্ডট্র্যাফোর্ডে নিউজিল্যান্ড। কাগজে-কলমে দলগত শক্তিতে ভারতের বেশ পেছনে নিউজিল্যান্ড। নড়বড়ে অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে কেন উইলিয়ামসনের দল। এখন তারা আত্মবিশ্বাসী। সময়মতো মেলে ধরার অপেক্ষায় আছে। অনেক ক্রিকেটবোদ্ধা একটি সময় পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড সেমিফাইনালে আসবে—এটা ভাবতে পারেননি। চমৎকার বোলিং (গেম আক্রমণ) নিউজিল্যান্ডের প্রধান শক্তি। ব্যাটিংয়ে পার্টনারশিপ গড়ে নিউজিল্যান্ড ভারতকে চ্যালেঞ্জ করলে বিস্মিত হওয়ার কিছুই থাকবে না। নিউজিল্যান্ড এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ শিরোপা জেতেনি। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে রানার্স-আপ হয়েছে। এবার তিন খেলায় পরাজয় এবং একটিতে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেও শেষ পর্যন্ত একটির পর একটি খেলায় জিতে আজকের অবস্থানে চলে এসেছে। ভারত দলে চাপ আছে, তবে খলোয়াড়রা মানসিকভাবে দৃঢ়চেতা, জয়ের ক্ষুধা সবারই।

দ্বিতীয় সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে এজবাস্টনে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যে। আসন্ন অ্যাশেজ সিরিজের আগে ওয়ানডেতে ক্রিকেটের গৌরবের লড়াই। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল দল (১৯৮৭, ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭ ও ২০১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন) হলো অস্ট্রেলিয়া। জয়ের সমীকরণে অস্ট্রেলিয়া সবচেয়ে বেশি এগিয়ে অথচ চার-পাঁচ মাস আগেও গ্রেটরা চিন্তাও করেননি অস্ট্রেলিয়া এবার শিরোপা লড়াইয়ে থাকবে। অ্যারন ফিঞ্চের দলটি স্টিভেন স্মিথ, ওয়ার্নার, খাজা (সেমিফাইনালে খেলতে পারবেন না হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে), গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মিশেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, নাথান লায়ন যেভাবে লড়াইয়ের মন্ত্রে উজ্জীবিত—এতে শিরোপা ধরে রাখা অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে অসম্ভব কিছু নয়। তবে খেলা তো মাঠে। দিনের খেলায় ঝলসে উঠতে না পারলে তো পরাজয়ের ব্যথা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়। ইংল্যান্ড এ পর্যন্ত বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। এবার নিয়ে ইংল্যান্ড পাঁচবার বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ। অথচ নিজের মাঠে বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরার গৌরব অর্জন করতে পারেনি। ১৯৭৯, ১৯৮৭ ও ১৯৯২ সালে রানার্স-আপ হয়েছে। ওয়েন মরগানের দল বিশ্বাস করছে এবার তারা দেশের মাটিতে ট্রফি জিতবে। তাদের চেয়ে বেশি তো কারো উইকেট চেনার কথা নয়। ইংল্যান্ড দলটি এখন ফর্মে আছে। সমস্যা হলো হঠাৎ হঠাৎ খেই হারিয়ে ফেলে। ইংল্যান্ডের দল নিয়ে তাদের সাবেক গ্রেটরা অনেক বেশি সমালোচনায় মুখর ছিলেন, প্রথম দিকে। খেলোয়াড়রা মাঠে তার জবাব দিয়েছেন। জেসন রয়, জনি বেয়ারস্টো, জস বাটলার, জো রুট, বেন স্টোকস—তাঁরা ভালো খেলছেন। ফর্মে আছেন। জনি বেয়ারস্ট্রো তো দুর্দান্ত ফর্মে। একটির পর একটি সেঞ্চুরি করেছেন। জেসন রয় পাশে দাঁড়াচ্ছেন। দাঁড়াচ্ছেন বাটলার। জোফা আর্চার, বেন স্টোকস ও ক্রিস ওফস ছন্দে আছেন। ভালো ফর্মে আছেন স্পিনার আদিল রশিদ। ইংল্যান্ডকে ভালো খেলেই জিততে হবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ইংল্যান্ড ভারতকে লীগ ম্যাচে হারিয়েছে। তারা পরাজিত হয়েছে তিনটি খেলায়। ইংল্যান্ডের ভাগ্য ভালো, তাদের পয়েন্ট ভাগাভাগিতে যেতে হয়নি। এবার তাদের জন্য বড় সুযোগ, তবে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে এগোতে হবে।