খােলাবাজার ২৪,বৃহস্পতিবার,১১জুলাই,২০১৯ঃ শতাব্দীর পর শতাব্দী সৌন্দর্যের পূজারিদের উপাসনা যে নারীকে নিয়ে, যার সৌন্দর্যের মায়াজালে আটকা পড়েছে অনেকে! সে আর কেউ নন, রানী ক্লিওপেট্রা। প্রাচীন মিসর এবং ইতিহাসের এক বিস্ময়কর নাম ক্লিওপেট্রা। মাত্র ৩৯ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে তিনি কখনও ছিলেন রাজকন্যা, কখনও পরাক্রমশালী রানী, আবার কখনও প্রেয়সী। তার সৌন্দর্য ভৌগোলিক সীমানা মানেনি। সে কারণেই তাকে নিয়ে রচিত নানা গল্প আর গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল ইজিপ্টের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের অন্য প্রান্তেও। সেই কোন কালে বিষাক্ত কোবরার বিষে প্রাণ হারিয়েছিলেন এই রূপবতী।
তবু আজও যেন পুরনো হয়নি ক্লিওপেট্রার সেই গল্পগাথা। লেখার শুরুতে মিসরের বিস্ময়কর এই রানীর কথা এ কারণেই বললাম, তার মতোই বাংলাদেশের পরপর তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া অভিনেত্রী জয়া আহসানের সৌন্দর্যও ভৌগোলিক সীমানা ছাড়িয়ে চলেছে। তিনি দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী। বাণিজ্যিক ও বিকল্পধারার ছবিতে নিজেকে ক্রমেই তিনি নিয়ে চলেছেন অনন্য উচ্চতায়। তার বয়স নিয়ে কথা হয়, তার সৌন্দর্য-গল্গ্যামার আলোচনার বিষয় হয় এই প্রজন্মের অভিনেত্রীদের কাছে। যতই দিন যাচ্ছে, জয়ার ঔজ্জ্বল্য ততই বেড়ে চলছে। এ অভিনেত্রীর সৌন্দর্য, ফিগার আর অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা শুধু ভক্ত-দর্শকদের কাছেই নয়; বিনোদন জগতের অনেকের কাছেও ঈর্ষণীয়। আসলে এই তারকার সৌন্দর্যের রহস্য কী? জয়া বলেন, ‘আমার গোপন কোনো রহস্য নেই। আমি খেতে ভালোবাসি। ঢাকায় থাকলে সকালে হালকা নাশতা, দুপুরে তাজা সবজি দিয়ে ভাত খাই। মাঝেমধ্যে পোলাও এবং রেডমিট খেতে ইচ্ছে করলে মাকে বলি। মা রান্না করে খাওয়ান। অত হিসাব করে খাই না। নিয়ম মেনে হিসাব-নিকাশ করে খেতে পারি না; বিশেষ করে যখন শুটিং চলে। তাই আমার সঠিক কোনো ডায়েট প্ল্যান নেই। তবে কারিনা কাপুরের ডায়েটিশিয়ান রুজুতা দিবাকরের বই পড়ি। তিনি খুব সুন্দর করে মন ও শরীরের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে ওজন কমানোর কথা বলেন। কলকাতায় শুটিং থাকলে ডিম সিদ্ধ খেয়ে আবার কচুরি, জিলাপি খাই। শুটিংয়ে গিয়ে বলি, আমি চাইলেও তোমরা আমাকে দুধ চা দেবে না। ওরা কিছু বলে না, মুখ টিপে হাসে। আসলে সকালে দুধ-চিনি দিয়ে এক কাপ চা না খেলে মনে হয়, দিন ঠিকমতো শুরু হলো না। শুটিংয়ের সময় আমার খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়।’ জয়ার এই সুন্দর শরীরের মূল রহস্য, যোগব্যায়াম বা ইয়োগা। যোগব্যায়াম শরীরচর্চার শক্তিশালী এক মাধ্যম, যা মনকে শান্ত করে এবং স্নায়ুগুলোকে শীতল করে তোলে।
এ কারণে ত্বক উজ্জ্বল হয়, হজমশক্তি বাড়ায়, শরীরের সব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে, মুখে ব্রণ হতে দেয় না এবং বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা দূর করে। তাই তো জয়া নিয়মিত ভাত খেলেও তার ওজন বাড়ে না। এই প্রসঙ্গে জয়া বলেন, ‘আমার ওজন না বাড়ার কারণ, নিয়মিত ব্যায়াম। একটা সময়ে এত বেশি ব্যায়াম করেছি, শরীর টোনড হয়েছে। তাই এখন হালকা ব্যায়াম করলেও চলে। সন্ধ্যা ৭টার পর খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিই। তবে রাতে এক গ্ল্যাস দুধ অবশ্যই পান করি। আমি মনে করি, সৌন্দর্যের মূলমন্ত্র ব্যায়াম করা। ব্যায়াম করলে আমার আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হয়, চেহারা ভালো থাকে। ব্যায়াম করার পর আয়নায় নিজেকে দেখলে অন্য রকম সুন্দর লাগে। ঢাকায় থাকলে বাড়িতে ব্যায়াম করি না। জিমে গিয়ে করি। অ্যারোবিকস করতে বেশি পছন্দ করি। এখন ৪৫ মিনিট করে চলে আসি। ব্যায়ামকে সবকিছুর ওপরে রাখি। আমি মনে করি, প্রত্যেকের অল্প সময় হলেও প্রতিদিন ব্যায়াম করা উচিত।’
এবার আপনার ডায়েট চার্ট নিয়ে বলুন? ‘দেখুন আমি আগেই বলেছি, আমার সঠিক কোনো ডায়েট চার্ট নেই। তবে এটা বলতে পারি, যারা ডায়েট করতে চান তাদের উচিত নিয়মকানুন মেনে জেনে-বুঝে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী করা। নয়তো কাঙ্ক্ষিত সুফল যেমন পাওয়া যাবে না, বরং ওজন কমাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। কারণ প্রথমেই আপনাকে মনে রাখতে হবে, ডায়েট মানেই না খেয়ে থাকা নয়। ডায়েট মানে পরিমিত পরিমাণে সুষম খাবার গ্রহণ। ওজন কমানোর প্রয়োজন থাকলে বা নির্দিষ্ট ওজন ধরে রাখতে চাইলে অবশ্যই বয়স, ওজন, উচ্চতা এবং কতটুকু ওজন কমাতে হবে সেই অনুযায়ী ডায়েট চার্ট তৈরি করতে হবে।’ সে ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী? শরীরকে সুস্থ আর সুন্দর রাখতে চাইলে নিয়মিত ব্যায়াম আর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। প্রতি মাসে একদিন ওজন মাপা উচিত। অতিরিক্ত ওজন কখনও সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নয় বরং নানা অসুখের কারণ হয়ে দেখা দেয়। আমি মনে করি, ওজন কমানোর সময় চিনিযুক্ত খাবার, ভাজা-পোড়া খাবার, মিষ্টি জাতীয় পানীয়, প্রক্রিয়াজাত করা খাবার খাওয়া উচিত নয়। ওজন কমাতে নিয়মিত শাকসবজির পাশাপাশি দৈনিক কমপক্ষে আধাঘণ্টা হাঁটা এবং প্রচুর পানি পান করা। এ ছাড়া প্রতিদিন অনন্ত ৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। আমি চেষ্টা করি প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর। অনেক সময় কাজের চাপে ৬ ঘণ্টা বা তার কিছু কম ঘুম হয়। ঘুম কম হলে আমার একটুতেই ক্লান্ত লাগে। কাজে মন দিতে পারি না। তাই আমি বলব, ঘুমাতে আর ব্যায়াম করতে হবে। অন্যকে সুন্দর দেখানোর জন্য নয়, নিজের জন্য।’
আপনার কাছে সৌন্দর্য কী? ‘সৌন্দর্য শব্দটি যতই ছোট, এর তাৎপর্য ততটাই বিশাল। মানুষ মাত্রই সুন্দরের পূজারি, তাই তো বলতে শোনা যায়, ‘আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী।’ এই বাক্যটিতে সৌন্দর্যকে সম্পূর্ণভাবে বাহ্যিকতার আড়ালে লুকিয়ে ফেলা হয়েছে। ভালো করে একটু ভেবে দেখুন তো আসলেই কি সৌন্দর্য কেবল বাহ্যিক চাকচিক্যের পিঞ্জরে আবদ্ধ? কিন্তু যুগ যুগ ধরে আমাদের দেশে তথা সমগ্র বিশ্বে এমনটিই প্রচলিত হয়ে আসছে; যা মোটেও কাম্য নয়। সৌন্দর্যের পুরো ব্যাপারটিই আপেক্ষিক; স্থান, কাল, পাত্রভেদে এর সংজ্ঞাও ভিন্ন।
চলুন পাঠক এবার জেনে নিই জয়ার স্ট্ক্রিন, হেয়ার ও মেকআপ সম্পর্কে। অভিনেত্রী যখন, তখন তো ত্বকের যত্ন নিতেই হবে। আর সে ব্যাপারে বাকি সবকিছুর মতোই খুব সিরিয়াস জয়া আহসান। প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে তিনি বিশেষ স্কিন ক্লিনজিং বিউটি অয়েল দিয়ে মুখ পরিস্কার করতে ভোলেন না। এরপর কিছুক্ষণ চলে নাইট ক্রিম ম্যাসাজ। সকালের দিকে ত্বকের যত্ন নিতে তিনি প্রথমে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নেন। মাঝে মধ্যে বিউটিশিয়ানদের পরামর্শমতো নানা প্রাকৃতিক ফেসমাস্কও ব্যবহার করেন তিনি। তাই জয়ার চেহারা এত উজ্জ্বল। চুলের যত্নে তিনি ভরসা রাখেন কন্ডিশনারের ওপর। এদিকে হিট অ্যাপিল্গকেটর ব্যবহারের কারণে চুলের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখেন। শুটিং ছাড়া সাধারণত মেকআপ করেন না জয়া আহসান। নিজের ন্যাচারাল লুকই তার বেশি পছন্দের। কাজের কারণে একান্তই যখন করতে হয়, তখন মেকআপ শুরুর আগে ও পরে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলেন। শুটিংয়ের সময় নিজের প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করেন। আর অতিরিক্ত মেকআপ কখনও জয়া করেন না।