Sat. Jun 14th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪,শুক্রবার,১২জুলাই,২০১৯ঃ টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিপর্যস্ত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এর মধ্যে লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা, পটিয়া, চন্দনাইশ ও বোয়ালখালী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। বানভাসি মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লক্ষাধিক।

এসব উপজেলার সবকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রাবাহিত হচ্ছে। সাতকানিয়ার বাজালিয়া মীরেরপাড়া এলাকায় শঙ্খ নদের বাঁধ ভেঙে তীব্র স্রোতে পানি ঢুকে পড়ছে। দ্রুত অবনতি হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতির।

জানা গেছে, লোহাগাড়া উপজেলায় টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের গ্রামীণ সড়কের অবস্থা করুণ হয়ে পড়েছে।

বড়হাতিয়া, আমিরাবাদ, সুখছড়ি, কলাউজান, পুটিবিলা, আধুনগরসহ উপজেলার বহু গ্রামের সড়ক পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আধুনগরে ডলু নদীর ভাঙনে খালপাড়ে বহু কাঁচা বসতঘরে পানি ঢুকেছে। পটিয়া উপজেলার কেলিশহর, হাইদগাঁও, কচুয়াই, খরনা, ভাটিখাইন, ছনহরা, ধলঘাট, হাবিলাসদ্বীপ, জিরি, কুসুমপুরা, আশিয়া, কোলাগাঁও ছাড়াও পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে উপজেলার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে পৌর সদরের রামকৃষ্ণ মিশন রোডে কোমরপানি জমে থাকায় মানুষকে পানির মধ্য দিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

আনোয়ারার বরুমচড়া, বারখাইন, হাইলধর, বৈরাগ, চাতরী ও পরৈকোড়া ইউনিয়নের ওষখাইন, কৈখাইন, শিলালিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রায়পুর ও জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নসহ উপজেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। জোয়ারের পানির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও ভারি বৃষ্টিপাতে দুই উপকূলীয় ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

বোয়ালখালীতে পাহাড়ি চাষাবাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাহাড় থেকে শাকসবজি, লেবু ও পেয়ারা পানির স্রোতে ভাণ্ডালজুরি খাল দিয়ে ভেসে যাচ্ছে। ভেসে যাচ্ছে অনেক চারাগাছও। খালের পাশে থাকা একাধিক ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। ভাণ্ডালজুরি পাড়ের বাসিন্দা তোয়াব আলী জানান, টানা বৃষ্টিতে তাঁদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোকারম বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। পাহাড়ি ঢলে কয়েকটি ঘর একেবারে বিলীন হয়ে গেছে। তা ছাড়া পাহাড়ের পাদদেশে গুচ্ছগ্রাম, আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারীদের নিরাপদে থাকতে নির্দেশ দিয়েছি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার কাজ চলছে। তাঁদের সহযোগিতা করা হবে।’

বাঁশখালীতে টানা বৃষ্টিতে উপকূলীয় এলাকা সরল, গণ্ডামারা, চনুয়া, পুইছড়ি, চাম্বল, কাথারিয়া, বাহারছড়া, পুকুরিয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষ ভয়াবহ বন্যার আতঙ্কে রয়েছে। এরই মধ্যে তলিয়ে গেছে নদীপাড়ের গ্রামসহ রাস্তাঘাট। স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট পানি বেড়ে যাওয়ায় তলিয়ে গেছে বিভিন্ন ফসলি জমি।

চন্দনাইশের দোহাজারী পৌরসভার উল্লাপাড়া, সরকারপাড়া, চাগাচর, জামিজুরী, ঈদপুকুরিয়া, খানবাড়ি, দিয়াকুল, রায়জোয়ারা, কিল্লাপাড়া, পূর্ব দোহাজারী, লোকমানপাড়া, চাগাচর নতুনপাড়া এলাকার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোবারক হোসেন বলেন, ‘শুধু সাতকানিয়ায় ৫০ হাজার পরিবারের অন্তত দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।’ অন্যদিকে, দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্তত পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।