Tue. Apr 22nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪,রবিার,১৪জুলাই,২০১৯ঃ ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ড। অথচ ক্রিকেট নিয়ে নেই কোনো হইচই কিংবা উল্লাস। ক্রিকেট যে ভদ্রলোকের খেলা, ইংরেজদের ক্রিকেটপ্রীতিতে যেন তাই ফুটে ওঠে। নতুবা বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা হওয়ার লড়াইয়ে তারা পৌঁছে গেছে শেষ ধাপে। যেখানে পৌঁছাতে তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে ২৭ বছর। ১৯৯২ সালে সর্বশেষ খেলা ফাইনালে তারা হেরেছিল পাকিস্তানের কাছে। এরপর আর সেমি ফাইনালই খেলতে পারেনি। ও এবার আসর শুরুর অনেক আগে থেকেই তারা শিরোপার জোর দাবিদার। সেই দাবিকে এক রকম প্রতিষ্ঠা করেই তারা পৌঁছে গেছে লর্ডসে। যেখানে জিতলেই তারা হবে বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন লর্ড। তার জন্য হারাতে হবে নিউজিল্যান্ডকে। অথচ এ নিয়ে ব্রিটিশদের মাঝে নেই কোনো বাড়তি উচ্ছ¡াস। তাদের ভাবখানা এমন যে এ আর নতুন কি? এটি তো হর হামেশাই তারা করে থাকে। অথচ বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইংল্যান্ড এখন পর্যন্ত জিততে পারেনি বিশ্বকাপের শিরোপা। সব মিলিয়ে এবারের ফাইনাল তাই তাদের জন্য আলাদা গুরুত্ব বহন করে। কিন্তু সেরকম করে দেখতে যেন বয়েই গেছে ব্রিটিশ নাগরিকদের। তা’হলে কী ব্রিটিশরা সব সময় এমনই। সবকিছুই তারা স্বাভাবিকভাবেই নিয়ে থাকেন। কিন্তু মোটেই তা নয়। একবার ভাবুন ক্রিকেটর পরিবর্তে তারা ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালে গিয়েছে। ইংল্যান্ডজুড়ে হইচই পড়ে যেত। এক ক্লাব ফুটবল নিয়ে তারা যে রকম পাগলামি করে থাকেন তা বিশ্বের আর কোনো দেশেই হয় না। বিশ্বকাপ ফুটবল হোক আর উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ হোক, ব্রিটিশ সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব সময় বাড়তি নজরদারি করা হয়। তা ইংল্যান্ডে হোক, আর অন্য কোনো দেশে হয়ে থাকুক। কিন্তু ক্রিকেটের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত। ব্রিটিশদের উচ্ছ¡াসে ঘাটতি কম থাকলেও খেলা কিন্তু মাঠে গড়াবে যথাসময়ই। শেষও হবে এক সময়। আর তখনই বিশ্ব পাবে নতুন রাজা। ইংল্যান্ড যদি হতে না পারে, তা’হলে হবে নিউজিল্যান্ড। সেই সাথে বিশ্ব ক্রিকেট ২৩ বছর পর পাবে নতুন চ্যাম্পিয়ন। ১৯৯৬ সালে অস্ট্রেলিয়াক হারিয়ে শ্রীলঙ্কা হয়েছিল সর্বশেষ নতুন চ্যাম্পিয়ন। নাম লিখিয়েছিল উইন্ডিজ, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তানের কাতারে। এবার যারা শিরোপা জিতবে তারা হবে শিরোপাধারী ষষ্ঠ দল। আগের ১১ আসরের মাঝে অস্ট্রেলিয়া পাঁচবার, ভারত ও উইন্ডিজ দুবার করে এবং পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা একবার করে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শুরুতে দাপট ছিল উইন্ডিজের। এরপর অস্ট্রেলিয়া। পাঁচবারের মাঝে তারা টানা তিনবার শিরোপা জিতেছিল ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত। উইন্ডিজের প্রবল দাপটে আঘাত হেনেছিল ১৯৮৩ সালে ভারত। এরপর শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার দাপট। মাঝে মাঝে কখনো হানা দিত এশিয়ার দেশগুলো। উইন্ডিজের এখন নখদন্তহীন বাঘ। আর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার রেসের ঘোড়া থেমে গেছে সেমিতে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে। অপরদিকে বর্তমান রানার্সআপ নিউজিল্যান্ড গতবার প্রথম ফাইনালে ওঠে অস্ট্রেলিয়ার সাথে পেরে ওঠেনি। এবার তারা টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠেছে সেমিতে মাঠে ও মাঠের বাইরে প্রবল পরাক্রমশালী ভারতকে হারিয়ে। ব্রিটিশ নাগরিকদের কাছে ফাইনালে নিয়ে বাড়তি কোনো উচ্ছ¡াস না থাকলেও বাংলাদেশি বংশোদ্ভ‚তদের মাঝে আছে ব্যাপক উত্তেজনা। তারা অপেক্ষার প্রহর গুনছেন শিরোপা জেতার উল্লাসে ভাসতে। দলপতি মর্গ্যানও দেশবাসীকে প্রথমবারের মতো শিরোপা উপহার দিতে সৈন্য সামন্ত নিয়ে প্রস্তুত। কাল লর্ডসের ময়দানে সকালে তার দলবল নিয়ে শেষবারের মতো নিজেদের শাণিত করে নেন। নিউজিলান্ডের দলপতি কেন উইলিয়ামসন সে কাজটি সানের অপরাহ্নে। টানা দ্বিতীয়বার হারতে তিনি নারাজ। যদিও তিনি ইংল্যান্ডকেই ফেভারিট রেখেছেন। এবারের আসরের ফাইনালে ইংল্যান্ডের উঠে আসাটা প্রত্যাশিত হলেও নিউজিল্যান্ডের আসা ছিল অপ্রত্যাশিত। বিশ্বকাপ শুরুর আগে চতুর্থ সেমিফাইনালিস্ট হিসেবে রাখা হয়েছিল নিউজিল্যান্ডকেই। পরে তারা তাই-ই হয়েছিল। ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের কাছে হারের মাঝে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে কিছুটা বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিল। পরে অবশ্য সেমিতে খেলতে তাদের কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়নি। তৃতীয় হয়ে উঠে আসে সেমিতে। কিন্তু ব্যাটে-বলে আসরে তারাই অপ্রতিরোধ্য। লম্বা ব্যাটিং লাইন। এমনই লম্বা যে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত দেখা যায় না। বেয়ারসটো, জেসন রয়, জো রুট, বাটলার, মর্গ্যান, বেন স্টোকস। সবার নামের পাশেই পেট মোটা রান। ৫৪৯ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর তালিকায় চারে আছেন রুট। আবার সেরা দশে আছেন ৪৯৬ রান করে বেয়রসটো ও ৪২৬ রান করে জেসন রায়। এ ছাড়া বেন স্টোকস ৩৮১, মর্গ্যান ৩৬২ ও বাটলার ২৫৩ রান করেছেন। যে কোনো দলের জন্যই ঈর্ষণীয়!। কিন্তু এখানেই চরমভাবে পিছিয়ে নিউজিল্যান্ড। ৫৪৮ রান করে জো রুটের পরেই পঞ্চম স্থানে দলপতি কেন উইলিয়ামসন থাকলেও এরপর আর কারো সেভাবে নামের পাশে রান নেই। দলের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করা রস টেলর করেছেন ৩৩৫। এর বাইরে অলরাউন্ডার জিমি নিশহামের রান ২১৩। আজকের ম্যাচে বলা যায় দুই দলের এই ব্যাটিং ফারাকই ব্যবধান গড়ে দেবে। আসরের সেরা ১০টি ইনিংসের মাঝে চারটিই ইংল্যান্ডের। সর্বোচ্চ দুটি ইনিংসও তাদের। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬ উইকেটে ৩৯৭ ও বাংলাদেশের বিপক্ষে ৬ উইকেটে ৩৮৬। তিনশ রানের ওপর ইনিংস আছে ছয়টি। সেখানে নিউজিল্যান্ডের একটিও নেই তিনশর ওপর ইনিংস। ইংল্যান্ডের হয়ে সেঞ্চুরি আছে সাতটি। বেন স্টোকস ছাড়া বাকি সবাই করেছেন সেঞ্চুরি। জো রুট ও বেয়ারসটো ২টি করে এবং মর্গ্যান, বাটলার ও জেসন রায় একটি করে। সেখানে নিউজিল্যান্ডের হয়ে শুধুই দলপতি কেন উইলিয়ামসন করেছেন ২টি সেঞ্চুরি। ব্যাটিংয়ে বিভাজন করা গেলেও বোলিংয়ে কিন্তু বিভাজন করার কোনো উপায় নেই। এখানে দুই দলই সমান্তরাল। দুই দলই পেস অ্যাটাক নিয়ে এ পর্যন্ত এসেছে। একদিকে ইংল্যান্ডের হয়ে আছেন জোফরা আর্চার, মার্ক উড, ক্রিস ওকস, বেন স্টোকস, প্লানকেট। তাদের হাত আরো শক্তিশালী হয়ে উঠেছে আদিল রশিদের ঘূর্ণিবলের কারণে। অপরদিকে নিউজিল্যান্ডের হয়ে পেস আক্রমণে আছেন ফার্গুসন, বোল্ট, হ্যানরি, জিমি নিশহাম, গ্রান্ডহোম। ঘূর্ণি বলে স্যান্টনার অবশ্য আদিল রশিদের মতো বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেননি। তবে খেলা হবে পেস ব্যাটারিতে। আর্চার ১৯, উড ১৭. ক্রিস ওকস ১৩, প্লানকেট ৮, বেন স্টোকসের ৭ উইকেটের বিপরীতে নিউজিল্যান্ডের হয়ে ফার্গুসন ১৮, বোল্ট ১৭, হ্যানরি ১৩, নিশহাম ১২ গ্রান্ডহোম ৫ উইকেট নিয়ে নিজেদের শেষ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করে নিয়েছেন। সেরা দশে দুই দলেরই আছেন দুইজন করে। ঘূর্ণি বলে আদিল রশিদের ১১ উইকেটের বিপরীতে স্যান্টনার নিয়েছেন ৬ উইকেট।
লর্ডসের আজকের উইকেট ব্যাটিং বান্ধব হবে বলে জানিয়েছেন ইংরেজ দলপতি মর্গ্যান। যদি তাই হয় তাহলে কিন্তু ইংল্যান্ডের জন্য পোয়াবার। দুই ওপেনার জেসন রায় ও বেয়ারসটো এবার দলের জন্য অনেকবার উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েছেন। সেখানে নিউজিল্যান্ডের ওপেনিং জুটি বারবারই ব্যর্থ। একপ্রান্তে ব্যর্থ গাপটিলকে রেখে অপরপ্রান্তে পরিবর্তন এনেও কোনো ফায়দা হয়নি। দুই দলের লিগ পর্বে একবার সাক্ষাৎ হয়েছিল চেস্টার-লি-স্ট্রেটে। সেখানে কিন্তু জয় হয়েছিল ইংরেজ বোলারদের। মাত্র ১৮৬ রানে ঘায়েল করে দিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ড বাহিনীকে। সেখানে আবার তাদের ব্যাটসম্যানরা করেছিলেন ৮ উইকেটে ৩০৫ রান।
দুই দলের মুখোমুখি মোলাকাত কিন্তু দুই দলের বোলারদের মতোই কাছাকাছি। এখন পর্যন্ত ৮৬ বারের মোকাবেলাতে নিউজিল্যান্ড ৪৩টিতে ও ইংল্যান্ড ৪১টিতে জিতেছে। বিশ্বকাপেও এগিয়ে নিউজিল্যান্ড। তারা জয় পেয়েছে ৫টিতে, ইংল্যান্ড জিতেছে ৪টিতে। আবার লর্ডসে দুই দল দুইবার মুখোমুখি হয়েছে। সেখানে এগিয়ে নিউজিল্যান্ড। দুবারই তারা জিতেছে। তবে শেষ ১০ বারের মোকাবেলাতে আবার বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে ইংল্যান্ড। তারা জিতেছে সাতটিতে, নিউজিল্যান্ডের জয় ৩টিতে। সার্বিক বিবেচনায় বিশেষজ্ঞরা কিন্তু এগিয়ে রেখেছেন ইংল্যান্ডকেই। কিন্তু তিন কাঠির খেলায় আগাম কোনো কিছুই বলা ঠিক না। যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে যে কোনো কিছুই!