
বুধবার (১৭ জুলাই) উচ্চমাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হলে রাফির ফলাফল বিবরণীতে দেখা যায়, কোরআন মাজিদ, হাদিস ও উসুলে হাদিস পরীক্ষায় সে ‘এ’ গ্রেড পায়।
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মো. হুসাইন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে এবার আলিম পরীক্ষায় নুসরাতসহ ১৭৫ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে ১৫২ জন পাস করে। নুসরাতসহ ২৭ জন ফেল করে। এ মাদ্রাসার এবার পাসের হার ৮৬.৮৬ শতাংশ।
নুসরাত জাহান রাফি মেধাবী শিক্ষার্থী জানিয়ে মো. হুসাইন আরও বলেন, সবগুলো পরীক্ষা দিতে পারলে নুসরাত ভালো ফলাফল অর্জন করতো। লেখাপড়ার প্রতি মেয়েটার কতটা আগ্রহ থাকলে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পরীক্ষায় অংশ নেয়। দুটি পরীক্ষাও দেয় নুসরাত।
পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিনেও রাফির সহপাঠীদের মধ্যে শোকের ছাঁয়া নেমে এসেছে। এদিন মাদ্রাসায় পরীক্ষার ফলাফল জানতে আসা শিক্ষার্থীদের অনেকেই নুসরাতের কথা মনে করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। উপস্থিত শিক্ষক এবং অভিভাকদের চোখও অশ্রুতে ভিজে উঠে। ফলাফল প্রকাশের এমন খুশির দিনেও মাদ্রাসায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
নুসরাতের সহপাঠীরা বলছিলেন, নুসরাত বেঁচে থাকলে আজ পাশের খবর পেয়ে সেও আনন্দ করতো। কিন্তু নরপিশাচরা তা আর হতে দিলো না।
পরীক্ষার ফল প্রকাশের খবর পাওয়ার পর থেকে শোক নেমে এসেছে নুসরাতের স্বজনদের মধ্যেও।
নুসরাতের মা শিরিনা আক্তারের বিলাপ থামছেই না। বলেন, আজ নুসরাতের ফলও বের হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু পাষণ্ডদের কারণে আমার মেয়ে পরীক্ষা দিতে পারে নাই।
গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ সিরাজউদ দৌলা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌননিপীড়ন করেন। এ ঘটনায় ওইদিনই নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ তাকে আটক করে। এ ঘটনার পর থেকে অধ্যক্ষ সিরাজের সহযোগিতায় নানাভাবে নুসরাতের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। তারা মামালা তুলে নিয়ে অস্বীকৃতি জানালে ৬ এপ্রিল নুসরাতকে কৌশলে মাদ্রাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। ১০ এপ্রিল রাত নয়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে নুসরাত মরা যান।
এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।
নুসরাত হত্যা মামলায় সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে চম্পা/শম্পা (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামলীগের সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহসভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম’র (২০) সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করে চার্জশিট প্রদান করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।