খােলাবাজার ২৪, শনিবার ,২০জুলাই,২০১৯ঃ মোঃরাসেল মিয়াঃ নরসিংদীপ্রতিনিধিঃ নরসিংদীর রায়পুরায় কয়েক দিনে মেঘনার ক্রমাগত ভাঙনে শুধুমাত্র চরমধুয়া ইউনিয়নের চরমধুয়া, সিকদার বাড়ী,শীলবাড়ী, দড়িহাটি ও বীর চরমধুয়ার প্রায় অর্ধশত ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। গত বছর এই ইউনিয়নে নদী ভাঙনের শিকার হয় ২’শ ঘর-বাড়ি। সেই সাথে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে গ্রামের কয়েক হাজার ঘর-বাড়ি। এতে চরম আতংঙ্কের মধ্য দিয়ে তাদের দিন কাটছে এই চরবাসীর।
রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে নদী ভাঙন প্রবল ইউনিয়নগুলো হলো শ্রীনগর, চাঁনপুর, মির্জাচর ও চরমধুয়া। এই ইউনিয়নগুলোতে গ্রাম রক্ষা বাঁধ না থাকায় বছরের পর বছর ধরে শুষ্ক ও বর্ষা মৌসুমে মেঘনার প্রবল স্রোতে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে বসত ভিটা, হাট-বাজার, আবাদি জমি, কবরস্থান, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
ইউনিয়নের বাসিন্দারা গ্রাম রক্ষায় বাঁধ নিমার্ণের দাবি জানিয়ে আসলেও এক দশকেও ভাঙন প্রবল এলাকায় বাঁধ নিমার্ণে নেই সরকারি উদ্যোগ। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করেন এবং তাদের পূণর্বাসনে নেই কোন উদ্যোগ।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ভাঙন কবলিত ইউনিয়নগুলোর পরিবারের মধ্যে বিরাজ করছে উৎকন্ঠা ও আতংঙ্ক। নতুন করে মেঘনার ভাঙনে ওই চার ইউনিয়নের অনেক পরিবার তাদের বসতভিটা ও সহায় সম্বল হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। কেউ আবার পরিবার পরিজন নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন পাশের গ্রামে নিকট আত্মীয়র বাড়িতে। ভাঙন আতংঙ্কে আগে থেকেই অনেক টিনের ঘর অন্যর্ত্র সড়িয়ে নিচ্ছেন। সর্বত্র হারিয়ে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই ও জীবিকার সন্ধানে শহর শহরের পাড়ি দিচ্ছেন অনেকে।
এ ব্যাপারে কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাথে কথা হলে তারা বলেন, প্রতিদিন আমাদের ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি মেঘনা নদীর ভাঙনে শেষ হয়ে যাচ্ছে। ওই সময় তারা ত্রাণ সামগ্রী না পাওয়ার অভিযোগ করেন। পরিবারগুলো ইউনিয়ন রক্ষায় বাঁধ নির্মাণে দাবি জানান।
মেঘনার ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে উপজেলার চরাঞ্চলের মির্জাচর ইউনিয়নের ৩টি প্রাইমারি স্কুল, ২টি বাজার, ২টি লঞ্চ ঘাট, ৯টি মসজিদ, ১টি মন্দির ও ৩টি কবরস্থান। চাঁনপুর ইউনিয়নে ১টি লঞ্চঘাট চাঁনপুর ও কালিকাপুর গ্রাম। শ্রীনগর ইউনিয়নে পলাশতলী ও ফকিরেরচর গ্রামের একাংশ এবং চরমধুয়া ইউনিয়নে চরমধুয়া, সিকদার বাড়ী,শীলবাড়ী, দড়িহাটি ও বীর চরমধুয়ার গ্রাম।
গত এক দশকে চাঁনপুরে ইমামদিরকান্দি ও শ্রীনগরের পলাশতলী গ্রাম দুটির নদী গর্ভে প্রায় বিলিন হয়ে গেছে। পলাশতলী গ্রামে কিছু সংখ্যক লোকের বসতি থাকলেও ইমামদিরকান্দি গ্রামটি কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে।ইমামদিরকান্দি গ্রামের প্রাইমারী স্কুলটি পরে পাশের মহিনীপুর গ্রামে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে চরমধুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম সিকদার জানান, নদী ভাঙনের এলাকা পরির্দশন করে গেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। বাঁধ নির্মাণের দাবিতে একালাবাসি নিয়ে বিভিন্ন সময় মানবন্ধন করেছি। এই সময় তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বাঁধ নিমার্ণে জোর দাবি জানান।
গত ১৭ জুলাই চরমধুয়ার নদী ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন আসেন নরসিংদী জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো. সাহাব উদ্দিন আহমেদ ও রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাদেক।
ওই সময় প্রকৌশলী সাহাব উদ্দিন আহমেদ বলেন নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বাঁধ নিমার্ণের অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করা যাবে।