Sat. Jun 14th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪, রবিবার ,২১জুলাই,২০১৯ঃ বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ও নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ। রিফাত শরীফের সঙ্গে মিন্নির দ্বিতীয় বিয়ের সময় মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিয়ের ‘তথ্য গোপন’ করার অভিযোগে এ মামলা করবেন বলে তিনি জানান। রিফাত হত্যায় জড়িত সব আসামিকে গ্রেফতার করে দ্রুত ফাঁসির দাবিতে রোববার আয়োজিত মানববন্ধনে এ কথা বলেন তিনি।

রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সব অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেফতার করে ফাঁসির দাবিতে রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বরগুনা প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বরগুনার সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের ব্যানারে আয়োজিত এ মানববন্ধনে শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিল।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ, মা ডেইজি বেগম, একমাত্র বোন উসরাত জাহান মৌ, চাচা আবদুল লতিফ শরীফ, আবদুল আজীজ শরীফ ও চাচাতো বোনরা।

মানববন্ধনে দুলাল শরীফ বলেন, কিছু মানুষ প্রকৃত তথ্য না জেনে ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে মিন্নির পক্ষে লেখালেখি করছেন। তাদের কাছে আমার অনুরোধ আপনারা প্রকৃত সত্য জেনে তারপর লেখালেখি করেন। আপনাদের লেখালেখির কারণে আমার ছেলে হত্যার বিচার প্রভাবিত হতে পারে। একজন সন্তানহারা বাবা হিসেবে আমি যে আমার ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসির অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে আছি সেটা ব্যাহত হতে পারে।

মিন্নিকে আইনি সহায়তা দিতে আসা আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রত্যেক অভিযুক্তের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। মিন্নির পক্ষে যেসব আইনজীবী রোববার আদালতে উঠেছেন তাদের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা নিজেরা রিফাত হত্যাকাণ্ডের অনুসন্ধান করুন। যদি এ হত্যাকাণ্ডে মিন্নি জড়িত থাকে তাহলে মিন্নিসহ এ মামলার সব অভিযুক্তকে আইনি সহায়তা না দেয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

মানববন্ধন শেষে বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে দুলাল শরীফ বলেন, নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির ‘বিয়ে হওয়ার’ পরও মিন্নির পরিবার সেই তথ্য গোপন করে আমার ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেয়। মূলত এ কারণেই আমার ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করে নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা। এ হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে মিন্নিও জড়িত। সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজেও তার ‘প্রমাণ’ রয়েছে।

এদিকে রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে এ মামলার দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজী। তৃতীয় দফায় সাতদিনের রিমান্ডের ছয়দিন শেষে আদালতে হাজির করলে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় রিফাত ফরাজী। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী রিফাত ফরাজীকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে রিফাত হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ হুমায়ুন করিব বলেন, তৃতীয় দফায় সাতদিনের রিমান্ড চলাকালে আদালতে হাজির করলে রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় রিফাত ফরাজী। স্বীকারোক্তিতে রিফাত ফরাজী এ হত্যাকাণ্ডে মিন্নি জড়িত বলেও আদালতের বিচারককে জানিয়েছেন। পরে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এদিকে রিফাত হত্যা মামলায় ১ নম্বর সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার বরগুনা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে জামিন আবেদন করেন এ মামলায় মিন্নির আইনজীবীরা। এ মামলার প্রধান আইনজীবী ও বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী আসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আদালতে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ৪ জন প্রতিনিধি, পটুয়াখালী ও বরিশাল প্রতিনিধিসহ বরগুনা আদালতের ৩০ জন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

মাহবুবুল বারী আসলাম আরো বলেন, রিফাত হত্যা মামলায় আজকে আমরা বিস্তারিত শুনানি করেছি। যেহেতু মিন্নি এখনো রিমান্ডে ও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন এবং রাব্বি-রিফাত ফরাজি দাবি করছে যে মিন্নি এর সঙ্গে জড়িত সে কারণে আদালত জামিন নামঞ্জুর করেছেন।