আজ রোববার বেলা ১১টায় বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তর হওয়া তিন ব্যক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবউদ্দিন খান এই তথ্য জানিয়েছেন। এ সময় উজ্জল হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন তিনি।
এর আগে গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে বরিশাল ও ঢাকা সদর ঘাট এলাকা থেকে উজ্জল হত্যা মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়া হত্যার কাজে ব্যবহৃত ছুড়ি, দুটি বেলচা ও একটি কোদালসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করেছেন তারা।
গ্রেপ্তাকৃতরা হলেন- শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বিভাগীয় ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সাব কন্ট্রাক্টর পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ফুলঝুড়ি গ্রামের বাসিন্দা ও বরিশাল নগরীর আলেকান্দা রিফিউজি কলোনির ভাড়াটিয়া সোহাগ হাওলাদার, ট্রাক টার্মিনালের নির্মাণ শ্রমিক মাদারীপুরের কালকিনি এলাকার রবিউল ইসলাম এবং বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কাজীরহাট এলাকার পিকআপচালক রমজান আলী।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার মো. শাহবউদ্দিন খান বলেন, ‘নিহত উজ্জল ও গ্রেপ্তারকৃতরা একইসাথে চলাফেরা করত। তারা সংঘবদ্ধভাবে বিভাগীয় ট্রাক টার্মিনালের রড, সিমেন্ট, পাথর এবং স্টিল শিটসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী চুরি করে তা বিক্রির পর টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে আসছিল। সর্বশেষ চোরাই মালামার পরিবহনের জন্য উজ্জলের পিকআপ ভ্যান দেড় হাজার টাকায় ভাড়া নেয় সাব কন্ট্রাক্টর সোহাগ। এর মধ্যে এক হাজার ২০০ টাকা পরিশোধ করলেও বাকি ৩০০ টাকা আটকে রাখে। পাওনা টাকা চাইলে সোহাগ তার সাথে টালবাহানা শুরু করে। এ জন্য উজ্জল ট্রাক টার্মিনালের মূল ঠিকাদারের কাছে সোহাগ, রবিউল ও রমজানের চুরির রহস্য ফাঁস করে দেয়। এর জন্য ঠিকাদার স্বপন সাব কন্ট্রাক্টর সোহাগের পাওনা এক লাখ ৯৫ হাজার টাকা আটকে দেয়। এতে পিকআপচালক উজ্জলের ওপর ক্ষুব্ধ হয় সোহাগ ও তার অপর দুই সহযোগী।’
পুলিশের এ কর্মকতা বলেন, ‘ওই ঘটনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই তাদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এরই মধ্যে তারা আরও দুবার উজ্জলকে কোমলপানীয়ের সাথে ঘুমের ওষুধ খায়িতে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ গত ১ আগস্ট রাত ৯টার দিকে ট্রিপ দিয়ে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থেকে কাশিপুরে ফেরে উজ্জল। পরে সোহাগ ও রবিউলের ফোন কল পেয়ে বিভাগীয় ট্রাক টার্মিনালের একতলা ভবনের ছাদে ওঠে উজ্জল। এর পর ঘাতকদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রবিউল ও রমজান পিকআপচালক উজ্জলকে তাদের দুজনের মাঝে বসিয়ে গল্প করছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে ঘটনার মূল হোতা সোহাগ পেছন থেকে এসে কনস্ট্রাকশনের কাজে ব্যবহৃত ধারালো চাকু দিয়ে সোহাগের গলায় আঘাত করে। এতে উজ্জল রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করতে থাকলে রবিউল ও রমজান তার হাত, পা ও মাথা চেপে ধরে। তখন সোহাগ উজ্জলকে ওই চাকু দিয়ে জবাই করে হত্যা করে।’
মো. শাহাবউদ্দিন খান বলেন, ‘এদিকে ঘটনার পরে রবিউল ও রমজানকে উজ্জলের লাশ গুমের নির্দেশ দিয়ে নগরীর কালুশাহ সড়কে নিজ বাসায় চলে যায় ঘাতক সোহাগ। পরে তার উপস্থিতিতেই ট্রাক টার্মিনালে কাশবনে পূর্বে থেকেই গর্ত করে রাখা জায়গাতে নিয়ে উজ্জলকে কাথায় পেচিয়ে বালু চাপা দেয় তিন ঘাতক।’
পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, ‘ঘটনার পরে রবিউল ও রমজান লঞ্চ যোগে ঢাকায় পালিয়ে যায়। তবে মূল হোতা সোহাগ বরিশালেই অবস্থান করেছিল। গত ২ আগস্ট রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে তার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নগরীর সাগরদী ধান গবেষণা এলাকা থেকে নিহত উজ্জলের পিকআপটি উদ্ধার এবং বাকি দুই আসামিকে গ্রেপ্তারে ঢাকায় চলে যায় পুলিশের টিম। এরপর ৩ আগস্ট সকালে ঢাকা সদর ঘাট থেকে রবিউল ও রমজানকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
প্রসঙ্গত, গত ১ আগস্ট রাত থেকে নিখোঁজ হন নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কলাডেমা এলাকার বাসিন্দা পিকআপচালক উজ্জল সিকদার (২১)। এর পরের দিন শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত নির্মাণাধীন বিভাগীয় ট্রাক টার্মিনালে কাশবনের ভেতরে বালু চাপা দেওয়া উজ্জলের জবাই করা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহতের মা পারভিন বেগম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।