Sat. Jun 14th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
খােলাবাজার ২৪,সোমবার,০৫ আগস্ট ,২০১৯ঃ  তাসলিমা বেগম রেনু ও তাঁর শিশু মেয়ে তুবা।‘আমার তো লেখাপড়া হবে না। মার জন্য আমার বুক ব্যথা করে, জ্বর আসে।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিল ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে হত্যার শিকার তাসলিমা বেগম রেনুর ছোট্ট মেয়ে তাসমিন তুবা।

তাসমিন তুবা থাকে রাজধানীর মহাখালীতে খালার বাসায়।

তুবার ভাই তাহসিন আল মাহির সব সময়ের খেলার সঙ্গী তার। দুজন এক সঙ্গেই থাকে সারাক্ষণ। খেলার ছলে এক সময় মাহির তুবার কাছে প্রশ্ন করে বলে, ‘মা (তাসলিমা বেগম রেনু) তোমার জন্য কী নিয়ে আসবে?’

তখন তুবার উত্তর, ‘মা আমার জন্য জুস আনবে।’

ঘণ্টা খানেক পর মাহির তুবাকে আবার একই প্রশ্ন করে। তখন তুবা বলে, ‘মা বাইরে গেছে। আমার জন্য জামা নিয়ে আসবে।’

একটু পরে তুবার খালাতো ভাই সৈয়দ নাসিরউদ্দিন টিটু কম্পিউটার খুলেই তুবার কাছে জানতে চান, ‘তুবা, তোমার আম্মু কোথায়?’

এই প্রশ্ন শেষ হতেই তুবা বলে ওঠে, ‘আম্মু কম্পিউটারে!’

এ কথা বলার কারণ টিটুর কম্পিউটারের স্ক্রিনে ছিল রেনুর ছবি।

‘তুবা ছোট বলে অনেক কিছুই বলতে পারে না। তবে মাঝেমধ্যে তুবাকে দেখে মনে হয় ওর কলিজাটা পুড়ে যাচ্ছে। ভেতরে উলট-পালট করছে। এটা আমরা বুঝি। সেজন্য আমরা তাকে তার মায়ের ব্যাপারে কিছুই বলি না। তবে মা তো, সে (তুবা) এখন অনেক কিছুই অনুভব করে।’

কেমন কাটছে তাসমিন তুবার দিনকাল?

নানান সময় বিভিন্ন কথা বলে কাটে তুবার প্রতিদিন। কখনো খুব উল্লাসে থাকে তো কখনো খুব মনমরা হয়ে। সারাদিন বাসায় লোক ভিড় করে। অনেকেই খবর নিতে যায় তুবার। কিন্তু তুবা সাধারণত করো সঙ্গে কথা বলে না। নিতান্তই শিশুসুলভ স্বভাবে তার মতো হয়ে কেউ কথা বললে হয়তো পাশে গিয়ে একটু বসে। তবে দ্রুতই স্থান ত্যাগ করে সে।

মায়ের মৃত্যুর আগে তুবা বেশ শান্ত স্বভাবের ছিল। এখন সে যা বলবে তাই-ই করবে। এর বাইরে তাকে দিয়ে কিছু করানো যায় না বলে জানিয়েছেন তুবার খালাতো ভাই সৈয়দ নাসিরউদ্দিন টিটু।

তুবার একমাত্র ভয় কাকের। কাকের কথা বললেই সে চুপ হয়ে যায়। ‘কাক আসবে, কাক’ তাহসিন আল মাহির তুবাকে লক্ষ্য করে এই কথা বললেই সে চুপ হয়ে যায়। ঘরের দরজা বন্ধ করে দিতে যায়। একবার মাহিরের কোলেই মাথা গোজে।

কী হবে তুবার লেখাপড়ার?

এখন তুবা পড়তে চায় না। সারাক্ষণ খেলা আর কখনো চুপচাপ হয়ে থাকে সে। তবে সৈয়দ নাসিরউদ্দিন টিটু জানালেন, ঢাকার একটি ভালো ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে তুবাকে ভর্তি করাবেন। টিটু বলেন, ‘আমি তাকে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ও লেভেল পর্যন্ত পড়াব। তারপর বিদেশে পাঠাব উচ্চ শিক্ষার জন্য। আমি চাই তাকে মানবিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে। সমাজের অন্ধত্ব ঘোচানো তার শিক্ষার মূল মোটিভ হবে। তাকে বিদেশে লেখাপড়া করতে এমন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করব যেখানে মানবিক ও সমাজবোধের শিক্ষা দেওয়া হবে।’

টিটু আরো বলেন, ‘এখন থেকেই তাকে বিভিন্নভাবে শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছি। চলতি বছরটি ওকে বাড়িতে রেখে শিক্ষা দেব। আগামী বছর একটি ভালো ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেব। তার জন্য আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে চাই। স্কুলে ভর্তি করাতে গিয়ে তার মা গণপিটুনিতে হত্যার শিকার হয়েছে। আমি তাকে ভালো ভালো স্কুল-কলেজে পড়াব।’

তুবার ভাই তাহসিন আল মাহিরের কী অবস্থা?

তুবার ভাই তাহসিন আল মাহির আগে নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার দাদার বাড়িতে বসবাস করত। সেখানে লামচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত সে। তবে মা মারা যাওয়ার পর সে দাদার বাড়ি থেকে মহাখালীতে খালার বাসায় চলে এসেছে। এখানেই ভর্তি হবে মাহির। এখন থেকে তুবা ও মাহির খালার বাসায় থেকেই লেখাপড়া করবে।

সৈয়দ নাসিরউদ্দিন টিটু জানালেন, আগামী বছরের শুরুতেই ঢাকার আদমজি ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে ভর্তি করবেন মাহিরকে। অন্তত মাধ্যমিক পাস করিয়ে তাকেও বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাঠাবেন।

তাসলিমা বেগম রেনুর মামলার কী অবস্থা?

বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রেনু হত্যা মামলায় এখনো পর্যন্ত আমরা ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। যাদের সবাইকেই রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। এদের ভেতরে চারজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা আরো তিনজনকে ফাইন্ড আউট করেছি। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করছি আমরা। দ্রুতই হয়তো তাদের ধরে ফেলতে পারব।’

গত ২০ জুলাই সকালে ঢাকার উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তাসলিমা বেগম রেনুকে (৪০) ‘ছেলেধরা’ গুজব ছড়িয়ে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। দুই ছেলেমেয়েকে ভর্তির জন্য সেখানে খোঁজ নিতে গিয়ে গুজবের কবলে পড়ে গণপিটুনিতে তাঁর মৃত্যু হয়। পরের দিন রোববার লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর সোনাপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানের বাবার কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।