বুধবার (২৮ আগস্ট) বিকালে রোহিঙ্গা সমস্যার ওপর এক গোলটেবিল আলোচনায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ আহবান জানান।
তিনি বলেন, আমরা জানি এই সরকারের কোনো নৈতিক অবস্থান নেই, তারা অনির্বাচিত সরকার। সুতরাং তাদেরকে বিশ্বজনমত তৈরি করতে হলে সমগ্র জনগনকে সামনে নিয়েই এই অভাবটা পূরণ করতে হবে।
‘এ সেমিনারের মধ্য দিয়ে আমরা সরকারের কাছে পৌঁছাতে চাই, জনগণের কাছে পৌঁছাতে চাই, বিশ্বমানবতার কাছে পৌঁছাতে চাই। একই সঙ্গে আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে, জাতিসংঘকে, বিশ্বকে আহবান জানাচ্ছি- মানবিক যে অবস্থা তৈরি হয়েছে সেটাকে সমাধানের জন্য তারা তাদের ভূমিকা পালন করবে।’
১০ দফা সুপারিশের মধ্যে আছে, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে তাদের নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, নিজের মাতৃভূমিতে অবাধ চলাচলের নিশ্চিতকরণ, বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রসমূহকে নিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, প্রত্যাবাসনের আগে ও পরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নের মিয়ানমারের পরিস্থিতি পরযবেক্ষনের সুযোগ রাখা, রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে যাতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি না হতে পারে সে ব্যাপারে সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া প্রভৃতি।
গুলশানে লেক শোর হোটেলে বিএনপির উদ্যোগে ‘রোহিঙ্গা সংকট ও বাংলাদেশের ভূমিকা’ শীর্ষক এই গোল টেবিল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির নেতৃবৃন্দসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, কানাডা, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, নরওয়ে, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, আফগানিস্তান, তুরস্ক, জাতিসংঘ, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল প্রভৃতি দেশের কূটনীতিকরা গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন।
তবে কূটনীকতিরা আলোচনায় কোনো বক্তব্য রাখেননি তারা আলোকদের বক্তব্য নোট করেছেন।
আলোচনায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্র কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
এতে রোহিঙ্গাদের আগমনের প্রেক্ষাপট, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের প্রতিবেদন এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে তাদের নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মইন খান, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম, সাবেক সচিব এএইচএম মোফাজ্জল করীম, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী ও অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া বক্তব্য রাখেন।
‘ওবায়দুল কাদের বক্তব্য সুইসাইডেল’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবার পুরনো খেলা শুরু করেছেন, বিএনপিকে দায়ী করতে শুরু করেছেন এবং তিনি আমাকে দায়ী করেছেন বলেছে- আমরা নাকি উস্কে দিচ্ছি রোহিঙ্গাদের।
তিনি বলেন, এটা সুইসাইডেল, এটা আত্মহননের কথা। আমরা মনে করি, এ ধরণের কথা-বার্তা শুধুমাত্র রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাধা হয়ে দাঁড়াবে, মিয়ানমারকে আরো শক্তিশালী করবে এবং সমস্যা আরো বৃদ্ধি করবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে জীবন-সম্পদ সম্ভ্রমে অখণ্ড নিরাপত্তা ও পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিয়ে নিজ মাতৃভূমিতে বসবাস করতে পারে সেই নিশ্চয়তা বিধানকল্পে বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বলিষ্ঠ কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে।
‘জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে যার কোনো বিকল্প নাই। ঐক্যবদ্ধ জাতিকে নিয়েই এই সমস্যা সমাধান করার জন্য এগিয়ে যেতে হবে।’
সরকারের সমালোচনা করে ফথরুল বলেন, আমি বলতে চাই, প্রধান যে বিষয়টা- রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হলে অবশ্যই তাদের নিরাপত্তা, নাগরিকত্ব ও তাদের প্রত্যাবাসনে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সেটা সরকার পারেনি। এই সরকারের ব্যর্থতা, তাদের অনভিজ্ঞতা, নতজানু পররাষ্ট্র নীতিতে তারা দেশকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যে, মিয়ানমারের ট্র্যাপের মধ্যে পড়ে গেছে। এখান থেকে সরকারকে বেরিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি এখন বাংলাদেশের জন্য সত্যিকার অর্থে বিপদজনক অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। আমরা প্রথম থেকেই বলে এসছিলাম, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে হলে এককভাবে বাংলাদেশের পক্ষে ওটা করা সম্ভব হবে না। প্রথম থেকেই বলে এসেছিলাম, একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের করতে হবে।
রোহিঙ্গা শরনার্থীরা বাংলাদেশে আসার সময়ে খালেদা জিয়া যে বিবৃতি দিয়েছিলেন তা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, রোহিঙ্গাদের সসম্মানে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে। রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিকত্ব, তাদের নিরাপত্তা, তাদের চলাচলের স্বাধীনতা, তাদের বাড়ি-ঘর-সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়ার গ্যারান্টি চায়- এটা অর্জনে বাংলাদেশ সরকারকে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে।
‘এজন্য দেশে একটি জাতীয় ঐক্যমত্য সৃষ্টি করতে হবে, জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমাদের আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বন্ধু বৃদ্ধি করে মিয়ারমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। জাতীয় ঐক্য ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলে আমরা মনে করি।’
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদের পরিচালনায় গোল টেবিল আলোচনায় দলের স্থায়ী বিএনপির কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান কামাল ইবনে ইউসুফ, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আবদুল মান্নান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, রুহুল আলম চৌধুরী, জয়নাল আবেদীন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, ইসমাইল জবিউল্লাহ, সুজাউদ্দিন, আবদুল কাউয়ুম, তাহসিনা রুশদী।
আরও উপস্থিত ছিলেন বিজন সরকার, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ওবায়দুল ইসলাম, শিরিন সুলতানা, আসাদুজ্জামান আসাদ, এবিএম মোশাররফ হোসেন, জহিরউদ্দিন স্বপন, ফাহিমা মুন্নী, রুমিন ফারহানা, অনিন্দ্র্য ইসলাম অমিত, মীর হেলাল, ইশরাক হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত ফজলে আকবর, শামীম আহমেদ প্রমুখ।