Thu. Apr 24th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
খােলাবাজার ২৪,সোমবার, ২সেপ্টেম্বর, ২০১৯ঃ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্যায়ভাবে নির্যাতন নিপীড়ন করে কেউ টিকে থাকতে পারে না। মানবসভ্যতার ইতিহাসে কেউ টিকে থাকতে পারেনি। না নমরুদ, না ফেরাউন। না হিটলার, না মুসোলিনী। না আইউব খান, না এরশাদ পেরেছে। এরাও টিকতে পারবে না।

‘বাংলাদেশের জনগণ চিরকাল সংগ্রাম লড়াই করে তাদের অধিকার আদায় করে নিয়েছে। আজকেও তারা লড়াই সংগ্রাম করে তাদের অধিকার আদায় করে নেবে।’

তিনি বলেন, গতকালও আমি খবর নিয়েছি দেশনেত্রী অত্যন্ত অসুস্থ। তিনি এখন হাঁটতে পারেন না। তাঁর সুগার কমছে না। এ অবস্থায়ও তিনি মাথা নত করেননি। তিনি বার বার একই কথা বলছেন, এই অন্যায়ের বিচার হবে। অন্যায়কারীরা টিকবে না। জনগণ নিশ্চয়ই উঠে দাঁড়াবে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবে।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের মিলনায়তনে বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের ব্যর্থতার কারণে বিএনপির জন্ম হয়েছিল উল্লেখ করে মহাসচিব বলেন, বিএনপির জন্ম এমন একটি রাজনৈতিক শূন্যতায়, যার সৃষ্টি করেছিল আওয়ামী লীগ। সে কারণেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

তিনি বলেন, আজকে আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, যে নির্বাচন আপনারা চুরি করে নিয়ে গেছেন সেই নির্বাচন বাতিল করতে হবে। একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।

সরকার সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ জানিয়ে ফখরুল বলেন, তারা ইতোমধ্যে বলতে শুরু করেছে আমরা নাকি রোহিঙ্গাদের যেতে বাধা দিচ্ছি। তারা তাদের ব্যর্থতা ঢাকতেই অন্যের ঘারে দোষ চাপাচ্ছে।

তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে রোহিঙ্গাদের অতি অল্প সময়ে ফেরাতে সক্ষম হয়েছিলেন। অথচ এই সরকার দুইবার চেষ্টা করেও একজন রোহিঙ্গাকে ফেরাতে পারেনি। অথচ তারা বলে চীনের সঙ্গে তাদের নাকি সম্পর্ক সুউচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। ভারতের সঙ্গে নাকি তারচেয়েও বেশি। তাহলে কি হলো, আজকে ভারত কি অবস্থান নিয়েছে, চীন কি অবস্থান নিয়েছে?

‘আজকে মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে পাঠানো সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কিন্তু এই সরকার সবদিক থেকে ব্যর্থ হয়ে গেছে। সেজন্যই আজকে বিএনপির প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি।’

ফখরুল বলেন, আজকে দুঃখ হয়, কষ্ট হয়, যে দাবি আওয়ামী লীগের ছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। জনগণের সঙ্গে সম্পূর্ণ প্রতারণা করে ২০১২ সালে তাদের সুবিধামতো সংবিধান পরিবর্তন করে নিয়েছে। কারণ তারা জানে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা কোনো দিনই ক্ষমতায় আসতে পারবে না।

দলীয় নেতাকর্মীদের তিনি বলেন, আসুন এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে আমরা শপথ নেই, আমরা বিএনপিকে সুসংগঠিত করবো। আমাদের দল ইতোমধ্যে সুসংগঠিত হতে শুরু করেছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় তারেক রহমান তার অসাধারণ দক্ষতা দিয়ে ইতোমধ্যে দলকে সংগঠিত করতে শুরু করেছেন। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের দল সম্পূর্ণভাবে সংগঠিত হবে।

‘জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আমরা অবশ্যই এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো। আসুন আজকে শপথ নেই দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে তবেই আমরা ঘরে ফিরে যাব।’

দেশে বিচারিক নির্যাতন শুরু হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় আমরা আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করার জন্য অনেক রকম চেষ্টা করছি কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তাকে মুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। রাজপথেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আনতে হবে। আজকে বিচার বিভাগের নির্যাতন শুরু হয়েছে।

‘আগে জানতাম পুলিশের নির্যাতন নিপীড়ন, সরকারের অত্যাচার নির্যাতন। এখন শুরু হয়েছে বিচারিক নির্যাতন। সুপ্রিম কোর্টে এমন ছিল না। নীতি নৈতিকতা বলতে দেশে আর কিছু নাই।’

ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি আছেন ঠিকই কিন্তু তার জনপ্রিয়তা অনেক অনেক বেশি করেছে আওয়ামী লীগ। তাদের নেতাদের রাতে-ঘুম হয় না বেগম জিয়ার কথা চিন্তা করে। আমাদের বলে আমরা নাকি একেবারে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছি। বিএনপি শক্তি হচ্ছে আওয়ামী লীগ। তাদের অত্যাচার-নির্যাতন প্রশাসনের কারণে আজকে বিএনপি অনেক শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।তিনি বলেন, আমাদের ২৬ লক্ষ কর্মী যারা বিভিন্ন মামলার আসামি হয়েছে তাদের যদি দশগুণ করা হয় তাহলে দুই কোটি ৬০ লক্ষ। আওয়ামী লীগের কারণেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে বাংলাদেশ থেকে কখনো নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। তাদের কারণেই বিএনপি থাকবে তাদের কারণেই আগামী শতাব্দী পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করে যাবে।

বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, দেশে অত্যন্ত সংকটময় সময় যাচ্ছে। এটি অত্যন্ত স্বাভাবিক অবস্থা। এটা বিশেষ কোন সময় নয় অল্প কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তাদের পতন অবসম্ভাবী। তাদের নির্ভর প্রশাসনের ওপর এটা কখনও হতে পারে না। এদের মানুষকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। অধিকার আদায়ে তারা ঝাপিয়ে পড়বে। তারা ক্ষমতায় আছেন ঠিকই কিন্তু তারা সবাই জানেন তারা একটি দুর্বল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। আমাদের প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য, জাতীয় ঐক্য ছাড়া ফ্যাসিবাদী সরকারকে পরাজিত করা সম্ভব নয়।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জম হোসেন আলাল, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের মধ্যে জেএসডি সভাপতি আসম আব্দুর রব, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা মো. আব্দুর রকিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা আল্লামা নুর হোসাইন ক্বাসেমী, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, গণফোরাম’র সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, জাগপার মহাসচিব খন্দকার লুৎফর রহমান, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি, পিপলস লীগের মহাসচিব সৈয়দ মাহবুব হোসেন, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এমএম আমিনুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন দলের নেতারা আসলেও এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম উপস্থিত ছিলেন না। তবে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত ইসলামীর কোনো নেতা উপস্থিত ছিলেন না।