খােলাবাজার ২৪,শনিবার,৭সেপ্টেম্বর,২০১৯ঃ দেশের ক্রিকেটের অন্যতম প্রানপুরুষ ও জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক শামিম কবিরের চেহলাম আগামীকাল ৭ সেপ্টেম্বর শনিবার তার গ্রামের বাড়ি (পৈত্রিক নিবাস) ঘোড়াশালে মিয়া বাড়িতে অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে পরিবারের পক্ষ থেকে শনিবার ভোরে ফজর নামাজের পর মিয়াবাড়িতে পবিত্র কোরান শরিফ তেলওয়াত (কোরান খানি) অনুষ্ঠিত হবে। বাদ জোহর ঘোড়াশাল পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের ১৩টি মসজিদে বিশেষ মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। বাদ জোহর মিয়াবাড়িতে এলাকার ৭টি এতিম খানার ছেলেমেয়েদের মধ্যে উন্নত খাবার বিতরণ করা হবে। এছাড়াও বাদ আসর এলাকার সব মসজিদে মিলাদ মাহফিল এবং প্রয়াত শামীম কবিরের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হবে। পরে তবারক বিতরণ করা হবে।
জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক শামিম কবির গত ২৯ জুলাই রাজধানীর একটি হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, দ্ইু বড় বোনসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুনগ্রহী রেখে যান। পরে গত ১ আগস্ট মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিসিবি একাডেমি প্রাঙ্গণে তার প্রথম জানাজা, গুলশান আজাদ মসজিদে দ্বিতীয় ও ঘোড়াশাল ঈদগাহ মাঠে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ওইদিন বিকেলে ঘোড়াশালে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
নরসিংদীর ঘোড়াশালে বনেদি জমিদার পরিবারে ১৯৪৫ সালের ৩ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক শামিম কবির। তিনি আবু ইউসুফ লুৎফুল কবির এবং সুফিয়া খাতুনের কনিষ্ঠ পুত্র। শামীম কবির নামে পরিচিতি পেলেও তার আসল নাম আনোয়ারুল কবির। শামিম কবির শুধু কৃতি ক্রীড়াবিদই নন সফল ব্যবসায়ীও। পাকিস্তান আমল থেকে প্রসিদ্ধ চা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এ.কবির লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরবর্তীতে চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ঢাকা ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। দৈনিক সংবাদের স্বত্তাধিকারী প্রতিষ্ঠান দি সংবাদ লিমিটেডের পরিচালক ছিলেন তিনি। তার দুই বড় ভাই ছিলেন দৈনিক সংবাদের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক খায়রুল কবির এবং দৈনিক সংবাদের প্রধান সম্পাদক আহমদুল কবির।
বাল্যকাল থেকেই ক্রীড়ার প্রতি ঝোক ছিল শামিম কবিরের। স্কুলে থাকতেই আজাদ বয়েজের ক্রিকেট দলে খেলেছেন এবং অধিনায়ক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলের হয়ে ক্রিকেট ছাড়াও আরো অনেক ডিসিপ্লিনে খেলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া ক্ষেত্রে অবদান স্বরুপ ‘ব্লু’ লাভ করেন তিনি। তদানিন্তন পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তান প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে আজাদ বয়েজ কয়েকবারের চ্যাম্পিয়ন দল। তার নেতৃত্বেই সৈয়দ আশরাফুল হক, তানভীর মাজহারুল ইসলাম তান্না, কাজী সালাউদ্দিনের মতো ক্রীড়াবিদরা আজাদ বয়েজে খেলেছেন।
শামীম কবিরের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ১৯৬১ সালে। ওই বছরের নভেম্বরে করাচির (গ্রীন) বিরুদ্ধে তিনি পূর্ব পাকিস্তান দলের পক্ষে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেছিলেন। ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা স্টেডিয়াম (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম নামে পরিচিত)। শক্তিশালী পিআইএর বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরির অর্ধশতক করেন। পাকিস্তান, পূর্ব জোন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৬১-১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ১৫ টি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলেন তিনি। ১৯৭৫-৭৬ ঘরোয়া ক্রিকেটের মৌসুম শেষে বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিবি) ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কনফারেন্সের (এখনকার ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসি) কাছে সহযোগী সদস্য পদ পাওয়ার জন্য আবেদন করে। আইসিসি বিসিসিবিকে পরামর্শ দেয় মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবকে (এমসিসি) আমন্ত্রণ করতে। কারণ এমসিসির ট্যুর রিপোর্টের ওপর নির্ভর করবে আইসিসির সিদ্ধান্ত। এরপর বিসিসিবি আমন্ত্রণ জানায় এমসিসিকে। পরে ১৫ দিনের সফরে আসা এমসিসি শুরুতে দুই দিনের দুটি ম্যাচ খেলে উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের বিপক্ষে। ১৯৭৭ সালের ৭, ৮ ও ৯ জানুয়ারি ঢাকা স্টেডিয়ামে (এখনকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) এমসিসির বিপক্ষে বাংলাদেশের অধিনায়ক করা হয় শামিম কবিরকে। এ ম্যাচটিই বাংলাদেশ দলের প্রথম ম্যাচ। এরফলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক হওয়ার গৌরব অর্জন করেন শামিম কবির। অবসর নেয়ার পরেও ক্রিকেটের সাথেই ছিলেন তিনি। চ্যাম্পিয়ান্স ট্রফিতে দু’বার (১৯৮২ ও ১৯৮৬) বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার ছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ক্রিকেট বোর্ডের নানা দায়িত্বে ছিলেন। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে অবদান রাখার জন্য ১৯৯৯ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পান। এছাড়াও ক্রীড়াঙ্গন ও গণমাধ্যমের অনেক সংস্থার নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে প্রথম আলো এই গুণী ক্রীড়া ব্যক্তিত্বকে আজীবন সম্মাননা জানায়।