Thu. Apr 24th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
খােলাবাজার ২৪,বৃহস্পতিবার,১২সেপ্টেম্বর,২০১৯ঃ পর্যটন নগরী ও চায়ের রাজধানীখ্যাত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত শ্রীমঙ্গল। ছোট বড় উঁচু নিঁচু টিলায় ঘেরা পযর্টন এলাকাটিতে রয়েছে অন্তত অর্ধশতাধিক দর্শনীয় স্থান।

চা বাগান মানেই অপার্থিব মুগ্ধতা ছড়ানো এক অস্তিত্ব, সবুজের অবারিত সৌন্দর্য। শহর থেকে যে কোনো সড়ক ধরে পায়ে হাটা পথ দুরত্বে পৌঁছানো মাত্রই চোখে পড়বে মাইলের পর মাইল চা বাগান।

সারি সারি চা বাগান বেস্টনির মাঝে ছোট শহর শ্রীমঙ্গল। বাগানের প্রবেশ করার পর মনে হবে কোনো শিল্পী যেন তার মনের মাধুরী মিশিয়ে সবুজ-শ্যামল মাঠ তৈরি করে রেখেছে। এসব চা বাগানের সবুজের বুক চিড়ে আঁকা-বাঁকা পথ ধরে ভ্রমণ করলে মনটা আনন্দে ভরে উঠবেই-উঠবে। ভাগ্য ভাল হলে চা শ্রমিকদের চা পাতা উত্তোলনের মনোরম দৃশ্যও চোখে পড়বে।

শহরের পাশেই ভাড়াউড়া, বুড়বুড়িয়া, কাকিয়াছড়া ও ফুলছড়া চা বাগান অবস্থিত। কিছুটা দূরে অবস্থিত কালীঘাট, বালিশিরা, সিন্দুরখান, রাজঘাট, খেজুরী, উদনা, বিদ্যাবিলসহ নানান চা বাগান। বাংলাদেশের একমাত্র চা গবেষণা কেন্দ্রটিও শ্রীমঙ্গলেই অবস্থিত।

সবুজের সমারোহ ঘেরা এসব চা বাগানে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই বাগান কতৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। ইচ্ছে করলে কতৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে এসব চা বাগানের চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় প্রবেশ করে চা পাতা তৈরির প্রক্রিয়াও দেখতে পারেন।

নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য আর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গলের এসব দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে একটি হলো ফুলছড়া চা বাগানের লালটিলা, স্থানীয়দের কাছে এটি কালীটিলা নামেও বেশ পরিচিত। এখানে একটি কালী মন্দির রয়েছে। প্রতিদিন দর্শনার্থীদের পাশাপাশি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজা অর্চনা করতে আসে এই মন্দিরে।

শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে ফুলছড়া চা বাগানের পাঁচ নম্বর সেকশনে সমতল থেকে প্রায় শত মিটার উচুতে এই টিলার অবস্থান।

মাটির রং লাল হওয়ায় টিলার নাম লালটিলা হলেও কালী মন্দিরের কারণে এটি কালীটিলা নামেও পরিচিত। চা বাগানের প্রবেশ পথের প্রথম নিরাপত্তা গেট থেকে বাম পাশের রাস্তা দিয়ে ২ কিলোমিটার এগুতেই চোখে পড়বে টিলার অপরুপ সৌন্দর্য। টিলায় উঠার জন্য পাহাড় কেটে বানানো হয়েছে আঁকাবাঁকা রাস্তা। দুপাশে সারি সারি চা বাগান পেরোতে পেরোতে দেখা মিলবে দুর্গম পাহাড়েরও।

পাহাড়ের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে লালটিলার একেবারে চূড়ায় পৌঁছাতে হয়। আর এই চূড়াতেই রয়েছে কালী মন্দির। দীর্ঘ পাহাড়ী দুর্গম পথ পেরিয়ে টিলার চূড়ায় উঠেই প্রথমেই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের কালীমাতাকে দর্শন করছেন। পাশাপাশি রয়েছে একটি শিবঠাকুরের মন্দিরও।

তারপর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে হারিয়ে যাচ্ছেন তারা। টিলা থেকে দূরের আকাশকে মনে হয় মাটিতে মিশে আছে। আর শ্রীমঙ্গল শহরটাও দেখা যায় টিলার চূড়া থেকে। যতোদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। চা বাগানের পাশে দিয়েই প্রবাহিত একটি ছড়া যেন এর সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সারিবদ্ধভাবে লাগানো রাবার গাছগুলো দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।

দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে বাসে অথবা ট্রেনে আসা যায় শ্রীমঙ্গল। তবে ঢাকা থেকে বাসে আসলে রাস্তা ফাঁকা থাকলে জ্যামে না পরলে ট্রেনের আগেই পৌঁছাবেন। হানিফ, শ্যামলী, এনাসহ বিভিন্ন বাস রয়েছে মহাখালী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে। সিলেট মেইল, পারাবত এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ও উপবন এক্সপ্রেস নামের ৫ টি ট্রেন রয়েছে আসা-যাওয়ার জন্য।

ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল আসার ট্রেনের ভাড়া ৩০০-৩৫০(স্নিগ্ধা), ২৭০(শোভন চেয়ার), ২০০(সুলভ), আর বাসের ভাড়া ৩৮০-৪০০ টাকা।

এখানে এসে থাকার জন্য রয়েছে বিভিন্ন মানের ছোট বড় অনেক রিসোর্ট। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যবেষ্টিত সবুজের মধ্যে গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মানের আবাসিক হোটেল।

খাবারের জন্য শহরের ভিতরে মানসম্মত বেশকিছু রেষ্টুরেন্ট রয়েছে এবং এসব রেষ্টুরেন্টের খাবার মূল্য সাধারণের সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে। আগত পর্যটকদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ও পর্যটনসেবা দিতে এখানে রয়েছে পর্যটন পুলিশ।

এমআর