Thu. Jun 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
image-220545-1568476070
খােলাবাজার ২৪,মঙ্গলবার,১৭সেপ্টেম্বর,২০১৯ঃ সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা সভাপতি রিজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে অপসারণের পর তাদের সম্পর্কে নানা তথ্য বের হয়ে আসছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় চাঁদাবাজির সঙ্গে দুই নেতার সরাসরি জড়িত থাকার অডিও এখন ভাইরাল। এবার সামাজিক মাধ্যমে রাব্বানীকে তুলোধুনা করলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী নুসরাত জাহান শিমু।

নুসরাত জাহান শিমু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য এবং ময়মনসিংহ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও দোলনচাঁপা হলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পদে ছিলেন।

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে দেয়া স্ট্যাটাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমা চান রাব্বানী। গোলাম রাব্বানীর ওই স্ট্যাটাসের প্রতিক্রিয়ায় শিমুও একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। শিমুর স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘স্বঘোষিত মানবিক ছাত্রনেতা গোলাম রাব্বানী আপনাকে বলছি- বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, স্বেচ্ছায়-স্বজ্ঞানে আবেগ-ভালোবাসার এই প্রাণের সংগঠনের নীতি-আদর্শ পরিপন্থী গর্হিত কোনো অপরাধ করিনি। আনিত অভিযোগের কতটা ষড়যন্ত্রমূলক আর অতিরঞ্জিত, সময় ঠিক বলে দেবে।

আপনার এ বক্তব্য থেকে জাতিকে আবারও এটিই জানাতে চাইছেন যে, নেত্রীকে ভুল বোঝানো হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতার অন্ধমোহে আপনি হয়তো ভুলে গেছেন যে, বঙ্গবন্ধু কন্যাকে ভুল বোঝালেই তিনি ভুল বুঝবেন- এমন মানুষ তিনি নন। বিচক্ষণতার বিচারে তিনি আপসহীন নেত্রী। কারণ তার ধমণীতে বইছে আপসহীন নেতা বঙ্গবন্ধুর রক্ত।

ভাই গোলাম রাব্বানী, আপনার ও আপনাদের সব অপকর্মের তথ্যপ্রমাণ নিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। ছাত্রলীগ আপার কতটা আবেগ আর ভালোবাসার জায়গা তা আমরা যারা ছাত্রলীগ করেছি, আপার দুয়ারে যাদের একবারও যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে- তারা জানি। আপনি আরো ভালোভাবেই জানেন, যেহেতু আপনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আপার সরাসরি স্নেহধন্য হওয়ার সৌভাগ্য আপনার হয়েছিল। সে স্থান আপনি নিজেই হারিয়েছেন নিজের কর্মদোষে।

নিজেকে ‘জাহির’ করার অন্যান্য লোক দেখানো কার্যক্রমের মতো আপনার আজকের স্ট্যাটাসটাও জাস্ট সহানুভূতি নেয়ারই প্রক্রিয়া ছিল বলে মনে করছেন অনেকেই। আমিও তাদের মতামতের সঙ্গে সহমত পোষণ করছি।

কথায় কথায় সিন্ডিকেট-সিন্ডিকেট বলে যেসব নেতাকে নিয়ে আপনি বারবার নোংরা খেলায় মেতেছেন, নানা প্রশ্ন তুলেছেন- তাদের হাত ধরেই কিন্তু আপনার ছাত্রলীগ জীবনের পথচলা; পরিচয়সহ দুবার কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল।

যাদের হাত ধরে ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচয় পেয়েছিলাম, স্বপরিশ্রমের প্রতিদান পেয়েছিলাম। দুই-চারবার মমতাময়ীর সরাসরি স্নেহধন্য হওয়ার সৌভাগ্যও হয়েছিল। সেসব সিনিয়রের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।

আপনি যাদের কথিত সিন্ডিকেটের বলে দোষারোপ করছেন (ছাত্রলীগের অগ্রজদের) তাদের কাছেই জননেত্রীর ওপর ও উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার শিক্ষাই পেয়েছি বারবার।

আপনি নিজে আপনার কর্মীদের কী শিক্ষা দিয়েছিলেন বলতে পারেন? ২০১০ সালে ঢাকার বাইরে একেবারেই নতুন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে এসেই প্রথম দিন নবীন বরণের মিছিলে জয় বাংলা স্লোগানে গলা মিলিয়েছিলাম। সেই থেকে শুরু। বড় ভাইদের সঙ্গে বহুদিন একা একাই মিছিল করেছি। একটা একটা করে সহযোদ্ধা তৈরি করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে ছাত্রী হলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হয়েছি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কার্যকরী সদস্য হয়েছিলাম।

গত সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ক্যান্ডিডেটও হয়েছিলাম। কারণ পরিশ্রম কারোর চেয়ে কম করিনি, বরঞ্চ নানা প্রতিকূলতায় আরও বেশিই পরিশ্রম করতে হয় আমাদের। যারা ঢাকার বাইরে রাজনীতি করেন তারা অন্তত বুঝতে পারবেন আমাদের পথচলা এতটা সহজ ছিল না। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমাদের পথ তৈরি করা ছিল না। আমাদের পথটা আমাদেরই তৈরি করতে হয়েছিল।

আপনি নেতা হওয়ার পর আপনাকে আপনার মতো করে প্রটোকল দিইনি বলে নিজের পরিশ্রম, যোগ্যতা, পারিবারিক রাজনৈতিক ইতিহাস ও গোয়েন্দা রিপোর্ট কোনো অংশেই পিছিয়ে না থাকার পরও বাংলাদেশ ছাত্রলীগে স্থান পাইনি। বরঞ্চ নিজের ফেসবুক থেকে আনফ্রেন্ড করে আপনার পোষা শিশু অনুসারীদের দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলিয়েছেন, আমি নাকি কোটায় পোস্ট পেয়েছিলাম! এসবই শিখিয়েছিলেন তো আপনার অন্ধ কর্মীদের? আপনার এই অনুসারীরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কী শেখাবে বলতে পারেন?

নিজে এমনকি মহান কাজ করেছেন যে, কথায় কথায় আপার ছাত্রলীগ বলে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করেন? আপনার অগ্রজরা কি বানের জোয়ারে ভেসে এসেছিল তা হলে?

আপা তো বলেননি, আগের ত্যাগী কর্মীদের বাদ দিয়ে কমিটি করতে। আপা তো বলেননি, গ্রুপিং করতে। তা হলে আপনি কোন অধিকারে কমিটি করার সময় কে কার লোক তা বিচার করে অসংখ্য যোগ্য কর্মীকে বাদ দিয়ে নিজের কর্মীদের নেতা বানালেন?

মনে রাখবেন, যে ধারায় পথচলা শুরু করেছিলাম, সে ধারা আজও অব্যাহত রেখেছি। যতদিন বেঁচে থাকব এ ধারাতেই পথ চলব ইনশাআল্লাহ।

এখনও জীবনের বহুপথ পাড়ি দিতে হবে আপনাকে, নিজের মুখ আর স্বভাবকে সংযত করুন। নিজেকে মেধাবী নেতা মনে করেন, অথচ এতটুকু বোঝেন না যে আপনি কী করছেন, আর জাতি আপনাকে নিয়ে কী ভাবছে?

নতুন করে কিছু চাওয়ার নেই আসলে। মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মহান আল্লাহতায়ালা ভালো রাখুক। জননেত্রীকে বেঁচে যেন আর কোনো ফেরিওয়ালা নিজের পকেট ভারী না করতে পারে- এটিই শেষ চাওয়া থাকবে।

ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বের প্রতি প্রত্যাশা- জননেত্রী বিশ্বাস করে যে আমানত আপনাদের হাতে তুলে দিয়েছেন, সে আমানতের সম্মান আপনারা রক্ষা করবেন। ত্যাগীদের যথাযথ মূল্যায়ন করবেন এবং ঢাকার বাইরের ইউনিটগুলোর তাদের পরিশ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন করবেন।’