Fri. Jun 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪, সোমবার, ২৩সেপ্টেম্বর, ২০১৯ঃ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অপচেষ্টায় নির্বাচন কমিশনের ১৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত বলে দাবি করেছেন জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম। এদের মধ্যে কেউ কেউ আগে থেকেই বিভিন্ন অপরাধের কারণে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। তবে, তদন্তের স্বার্থে তাদের নামধাম প্রকাশ করা হয়নি। সোমবার রাজধানীর নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।

রোহিঙ্গাদের ভোটার করতে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তকে স্বাগত জানিয়ে এনআইডির ডিজি বলেন, ‘অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকারের যে সংস্থাই ব্যবস্থা নিতে চায়, আমরা তাদের স্বাগত জানাবো। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবো।’

প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে ভোটার তথ্যে সার্ভারের প্রেজেনটেশন তুলে ধরে এনআইডি ডিজি বলেন, ‘আমাদের মূল সার্ভার সম্পূর্ণ সুরক্ষিত আছে। অনেকেই না জেনে বলছেন, ইসির সার্ভারে রোহিঙ্গা ভোটার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কিন্তু ইসির মূল সার্ভারে কারও প্রবেশের সুযোগ নেই। তারা চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদে রোহিঙ্গারা টেম্পোরারি সার্ভারে ঢুকেছে। তাদের ৬১ জনকে আমরা চিহ্নিত করেছি।’ এনআইডির মূল সার্ভারে কোনও অপরাধী প্রবেশ করতে পারেনি বলেও দাবি করেন তিনি।

জড়িত চক্রকে চিহ্নিত করার ঘটনা তুলে ধরে এনআইডির ডিজি বলেন, ‘আমরা ফাঁদ পেতে একটি চক্রকে ধরতে সক্ষম হয়েছি। সামরিক বাহিনীতে আমরা যেটা অ্যামবুশ বলি। এতে আমাদের ডাবলমুরিং থানা নির্বাচন অফিসের কর্মচারী জয়নালকে প্রথমে চিহ্নিত করা হয়। এরপর অন্যদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সংখ্যাটা ১৫ জনের বেশি হবে না।’ দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দৃশ্যমান হবে বলেও তিনি জানান।

সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘যারা এই অপচেষ্টার সঙ্গে জড়িত, তাদের বেশিরভাগই ইসি থেকে আগে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন। তারা ইসির বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করতেন। আমরা ইতোমধ্যে আমাদের সব উপজেলা কর্মকর্তা ও যারা আমাদের লোকবল সাপ্লাই দেন, তাদের বলেছি, আগে চাকরিচ্যুতরা যেন ভোটার তালিকার কাজে কোনোভাবে সম্পৃক্ত হতে না পারেন।’

‘জিরো টলারেন্স এগেইনস্ট করাপশন’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার এই নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে এনআইডির ডিজি বলেন, ‘আমরা শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছি। ইসির কর্মকর্তা-কর্মচারী কিংবা আগে যারা কাজ করেছেন, তাদের কেউ জড়িত আছেন কিনা, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা চাকরিচ্যুতদের ওপর কঠোর নজরদারি চালানোর জন্যও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে বলবো। রোহিঙ্গাদের ভোটার করার অপচেষ্টায় যেই জড়িত হোক না কেন, আমরা সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবো। ফৌজদারি মামলা কিংবা বিভাগীয় মামলাও করবো। এছাড়া অন্য যে কোনও সংস্থার কেউ যদি জড়িত থাকেন, তাদের বিরুদ্ধেও সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এনআইডি তথ্য ভাণ্ডার সুরক্ষিত রাখার জন্য যা যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, আমরা সব পদক্ষেপ নেবো।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এনআইডির ডিজি বলেন, ‘প্রবাসে যখন আমরা ভোটার করবো, তখনও রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করা হবে। এছাড়া চট্টগ্রামেও ইতোমধ্যে যারা ভোটার হয়েছেন, তাদের মধ্যে কেউ রোহিঙ্গা আছেন কিনা, সেটাও দেখা হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে ইসির সিস্টেম ম্যানেজার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, ‘আগামীতে কেউ যেন রোহিঙ্গাদের টেম্পোরারি সার্ভারেও যুক্ত করতে না পারেন, সেজন্য সব কর্মকর্তার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে দিয়েছি। তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া সার্ভারে ঢোকার জন্য ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) মেসেজের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

ইসির এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) আবদুল বাতেন বলেন, ‘৬১ জনের মধ্যে আমাদের বিশেষ তদন্ত কমিটি একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়।’ তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ইসির এক কর্মচারীর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেও তিনি জানান।