খােলাবাজার ২৪,বুধবার,২৫সেপ্টেম্বর,২০১৯ঃ হামলাকারীদের শাস্তি দাবি সাদা দলের * সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিচার দাবিতে মানববন্ধন * জয়ী-পরাজিত ছাত্রদল নেতারা মধুর ক্যান্টিনে এলেন একসঙ্গে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হাতে মার খেয়ে পরদিন বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আবার ক্যাম্পাসে এসেছে ছাত্রদল। হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে একসঙ্গে ক্যাম্পাসে আসে ছাত্রদলের জয়ী ও পরাজিতরা। মধুর ক্যান্টিনে কিছুক্ষণ অবস্থান করে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের দিকে যান ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সাদা দল। পাশাপাশি ৩ সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় মানববন্ধন করেছে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার টিএসসি এলাকায় জড়ো হয়ে সেখান থেকে একযোগে মধুর ক্যান্টিনে যায় ছাত্রদল। এতে কয়েকদিন আগে শেষ হওয়া ছাত্রদলের কাউন্সিলের জয়ী এবং পরাজিত নেতারা তাদের অনুসারীসহ অংশ নেন। মধুর ক্যান্টিনে কিছুক্ষণ অবস্থান শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের কাছে যান তারা। সেখানে হামলার ঘটনায় জড়িতদের বহিষ্কারের দাবি জানান ছাত্রদল নেতারা। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে যান তারা। সেখানে ছাত্রলীগের হামলায় আহত এক সাংবাদিকের খোঁজখবর নেন নেতারা। ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন এবং সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের নেতৃত্বে সংগঠনটির দুই শতাধিক নেতাকর্মী এ সময় উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচিতে ছাত্রদলের কাউন্সিলের প্রার্থীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, হাফিজুর রহমান হাফিজ, আমিনুর রহমান আমিন, মো. মামুন খান, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, কারীমুল হাই নাইম প্রমুখ। ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান বলেন, হামলা-মামলাকে উপেক্ষা করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে আমরা প্রস্তুত। ছাত্রদলের কার্যক্রমে আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এ সংক্রান্ত কোনো নিষেধাজ্ঞা এখনও পাইনি। পেলে আইনিভাবে মোকাবেলা করা হবে। সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। হামলায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ঢাকাতে এ হামলা চালানো হয়েছে। যা অত্যন্ত লজ্জাজনক ও নিন্দনীয়। তিনি বলেন, কাউন্সিলরদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে আমি ক্যাম্পাসে গিয়েছি। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা সংগঠনকে এগিয়ে নিতে চাই। নতুন কমিটি আমাদেরকে যথাযথ সম্মান করবেন বলে আশা করি।
ছাত্রলীগের হামলায় আহত ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের দেখতে যান ডাকসু ভিপি নূরুল হক নূর। এ সময় ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসানসহ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। ডাকসু ভিপি বলেন, ভিপি হিসেবে প্রতিটি শিক্ষার্থীর ব্যাপারে আমার দায়িত্ববোধ রয়েছে। সাংগঠনিকভাবেও আমরা এসব সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছি। সার্বিক দিক বিবেচনায় এনে আমরা ছাত্রদলের আহতদের হাসপাতালে দেখতে গেছি।
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ঢাবি সাদা দলের : ছাত্রদল নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সাদা দল। মঙ্গলবার সকালে দলের পক্ষে আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান।
হামলাকারীদের ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কারের দাবি সাংবাদিকতা বিভাগের : টিএসসি এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের ক্যাম্পাস থেকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা (এমসিজে) বিভাগের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুরে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে মানববন্ধনে এ দাবি জানান তারা। এতে বিভাগটির শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ‘কলম-ক্যামেরায় কিসের এত ভয়’, ‘আশ্বাস নয় বহিষ্কার চাই’ লেখাসহ বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে। তাদের তিন দফা দাবি হল- হামলাকারীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় এনে স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে, ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামলার ঘটনায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহাদি আল মুহতাসিম নিবিড় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে হামলার বিচারের দাবি জানাচ্ছি। ছাত্রলীগের নেতাদের কাছেও আহ্বান জানাচ্ছি, হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিন।