
এই খেলাটি ভারতীয় কয়েকজন নাগরিক বিদেশে বসেই পরিচালনা করেন। বাংলাদেশে তাদের নিযুক্ত কয়েকশ ডিলারের মাধ্যমে খেলাটি পরিচালিত হয়ে থাকে।
জানা গেছে, ‘তিন পাত্তি গোল্ড’ খেলাটি ২৪ ঘণ্টা খেলা যায়। এটি খেলতে ক্লাবে যেতে হয় না। ঘরে বসে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খেলা যায়। প্রাথমিকভাবে এই ভার্চুয়াল জুয়া খেলতে কম খরচ হলেও মাস শেষে মোটা অঙ্কের অর্থ খোয়া যায়।
বাংলাদেশে এই জুয়া খেলার জন্য চিপস বা কয়েন কেনেন জুয়াড়িরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে এই জুয়ার ডিলারদের কাছ থেকে বিকাশ, নগদ, রকেট কিংবা অন্যান্য মাধ্যমে এটি কেনা হয়। এভাবে প্রতি বছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে দেশের কোটি কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার হচ্ছে বিদেশে।
এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘তিন পাত্তি গোল্ড’ একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনের গেম। এই অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে অথবা গুগলে সার্চ দিলে পাওয়া যায়। অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ডাউনলোড করে নিতে হয়। সোমবার পর্যন্ত এই সফটওয়্যারটি ৫০ মিলিয়নের বেশি মানুষ ডাউনলোড করেছে। এই গেমটি খেলতে হলে ইন্টারনেট কানেকশনযুক্ত অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও একটি ফেসবুক আইডির প্রয়োজন হয়।
আরো জানা গেছে, এ জুয়া খেলে অনেকেই প্রথম দুই একবার জিতে যায়। এরপর খেলাটা একটা নেশা হয়ে যায়। না খেলে থাকা যায় না। কিছু শিক্ষার্থী লেখাপড়া ছেড়ে রাতের পর রাত তিন পাত্তিতেই মগ্ন থেকেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিন পাত্তি জুয়ায় আসক্ত এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, তিন পাত্তি গোল্ড জুয়ায় এক কোটি চিপস ৬০ টাকা দিয়ে পাওয়া যায়। তা হারাতে খুব একটা সময় লাগে না। যতক্ষণ বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা থাকত ততক্ষণ খেলতাম। এখন লেখাপড়া বাদ দিয়ে বাড়ি চলে এসেছি।
ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, এখনো তিন পাত্তি খেলি। নেশাটা ছাড়তে পারিনি। বাবার কাছ থেকে খরচের কথা বলে টাকা নিতাম। এ টাকা তিন পাত্তিতে উড়িয়ে দিয়েছি। এ পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা নষ্ট করেছি।
তার মতে, এ খেলায় বেশিরভাগই বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী আসক্ত। অন্যান্য পেশার লোকজনও এ জুয়া খেলেন। কারণ হিসেবে জানান, এটি বাসায় বসেই খেলা যায়। ক্লাবে গেলে নানান ভয় থাকে।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ‘তিন পাত্তি গোল্ড’ খেলাটি ৩টি তাসের খেলা। এ গেমের মূল বস্তুটি হচ্ছে চিপস বা কয়েন। ১ কোটি চিপসের মূল্যে গত ছয় মাস আগেও ছিল দেড়শ’ থেকে দু’শ টাকা। এখন ৭০-৮০ টাকায় পাওয়া যায়। এই জুয়ায় ৫০ কোটিরও চিপস রয়েছে। এটির বর্তমান দাম ৩৫০০ টাকা। এসব চিপস গেমের ভেতর থেকেই ডলারের মাধ্যমে কোম্পানি বিক্রি করে থাকে।
অনলাইন জুয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের এডিসি নাজমুল ইসলাম জানান, অনলাইনে জুয়া প্রতিরোধে আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এর আগেও অনলাইনের অন্যান্য জুয়া বন্ধ করেছি। জুয়ার কারবারীরা একটা বন্ধ করলে আরেকটা খোলে। আমাদের নজরদারি রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, অনলাইনে চিপস বিক্রির ডিলারদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছি। পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। কারণ, এ জুয়া বাসায় বসেই খেলা হয়।