খােলাবাজার ২৪,রবিবার,০৬অক্টোবর,২০১৯ঃ পিরোজপুর প্রতিনিধিঃ গতকাল শনিবার পিরোজপুর জেলা বাস, মিনি বাস, কোচ ও মাইক্রোবাস মালিক সমিতি দুপুরে স্থানীয় কুটুমবাড়ি কমিউনিটি সেন্টারে এ সংবাদ সম্মেলন করেন।সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সভাপতি মশিউর রহমান মহারাজের বিরুদ্বে সংগঠনের ২৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার লিখিত অভিযোগ করেন।
সাতটি পন্থায় পিরোজপুর জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান মহারাজ তার কতিপয় সহযোগীর সহায়তায় এ অর্থ আত্মসাত করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে বলা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পিরোজপুর জেলা বাস ও মিনিবাস সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জসিম উদ্দিন খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাবুল হালদার, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আক্তারুজ্জামান ফুলু, সমিতির সদস্য শহিদুল ইসলাম সরদার, নিজাম উদ্দিন, ডা. সিদ্দিকুর রহমান, সুমন খান, ফয়সাল হাওলাদার প্রমুখ।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সদস্য বাবুল হালদারের স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ সম্বলিত বক্তব্য পাঠ করেন সাধারন ও ভুক্তভোগী বাস মালিক নিজাম উদ্দিন মোল্লা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে সাংবাদিকদের সামনে পিরোজপুর বাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মসিউর রহমান মহারাজের ব্যপক দূর্নীতি ও চাঁদাবাজির খতিয়ানসহ নানা খাত থেকে ২৪ কোটি টাকা আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরেন মালিকরা। সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এমপি এ কে এম এ আউয়ালের ছোট ভাই মসিউর রহমান মহারাজের শারীরিক ও মানুষিক অত্মচারের করুন চিত্র তুলে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন বেশ কয়েকজন মালিক।
মসিউর রহমান মহারাজের নেতৃত্বে গত ৮/৯ বছর ধরে সাধারণ মালিকদের গাড়ীর সরাসরি রোটেশন বিক্রয়, কোটা ভাড়া দিয়ে টাকা আদায়, গাড়ী বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে টাকা আদায়, বিভিন্ন ফেরীঘাট থেকে চাঁদা আদায়, সমিতির নামে দূরপাল্লার গাড়ী থেকে নিয়মিত অবৈধ চাঁদা আদায়, শ্রমিক চাঁদার নামে সমিতির গাড়ী ও পরিবহন থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়সহ বিভিন্ন খাত থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। সুনির্দিষ্ট ভাবে পাঁচটি খাতের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে- গাড়ি চলাচলের রোটেশন বিক্রি করে ছয় কোটি টাকা, বহিরাগত গাড়ী চলার সুযোগ দিয়ে (ভাড়ার কোটায়) পঞ্চাশ লাখ টাকা, ফেরীঘাট থেকে সিরিয়াল চাঁদার নামে সাড়ে তিন কোটি টাকা, সমিতিভুক্ত গাড়ী থেকে ১০ কোটি ৮০ লাখ টাকা, দূর পাল্লার বিভিন্ন পরিবহন থেকে এককালীন ও নিয়মিত চাঁদা আদায় বাবদ তিন কোটি ২৫ লাখ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। এছাড়া বন্ধ গাড়ী থেকে মাসে মাসে চাঁদা, পৌর টোলের নামে যথেচ্ছা চাঁদা আদায়, অল্টার, স্লিপের বিনিময়ে টাকা আদায়, প্রতি ট্রিপে গাড়ী থেকে কাউন্টার চাঁদা, চেক পোস্ট বসিয়ে জরিমানার নামে টাকা আদায় করা হয়েছে।
অবৈধ ভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার সহযোগী হিসেবে সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন নান্না, কোষাধ্যক্ষ রিপন দাস, সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম গাজী, সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল হক খোকন, নুরুল ইসলাম, অফিস কর্মচারী জাহিদ হোসেনসহ কিছু অসাধু কর্মচারী ও কয়েক ব্যক্তিকে দায়ী করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কোন রূপ গাড়ীর মালিক না হয়েও অভিযুক্ত ব্যক্তিগণ সমিতির সভাপতিসহ বড় বড় পদ দখল করে এসব অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাত করেছেন। এছাড়া সমিতির গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন ও ইচ্ছা মাফিক গঠনতন্ত্র সংশোধন করে সমিতির নাম পরিবর্তন, দীর্ঘ সময় ক্ষমতা ও পদ আঁকড়ে রাখার অভিযোগ করা হয়।
সমিতির কমিটির মেয়াদ গত ৩০ সেপ্টেম্বর উত্তীর্ণ হওয়ায় সাধারণ সদস্যরা গত ২ অক্টোবর এক সভায় সমিতির ১৭১ জন সদস্যের মধ্যে ১৩৬ জন সদস্য উপস্থিতিত হয়ে আগের কমিটি বিলুপ্ত করে এবং রতন চক্রবর্তীতে আহবায়ক করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। এই আহবায়ক কমিটি গঠনতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী ৪৫দিনের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে সমিতির ১৭১ জন সদস্যের মধ্যে ১৩৬ জন সদস্যের উপস্থিতিতে বিগত কমিটিকে অনাস্থা জানিয়ে গঠনতন্ত্র মোতাবেক সর্বসম্মতিক্রমে উল্লেখিত নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
এ ব্যাপারে সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান মহারাজ বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়। সমিতি পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি সব সময় সাধারণ সম্পাদক সহ সকল কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ও সমর্থন নেন। বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের স্বাক্ষরিত কাগজপত্র তার প্রমান। তবে দু-একজন কর্মকর্তা ও অফিস কর্মচারি তার স্বাক্ষর জাল করে কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকতে পারেন।