Wed. Jun 11th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪,মঙ্গলবার ,০৮ অক্টোবর,২০১৯ঃ বরগুনা প্রতিনিধি : সকাল তখন ৭টা ছুঁই ছুঁই; তখনো অনেকে ঘুম থেকে ওঠেনি। আর যারা এখানে ঘাটে এসেছেন তাদেরও চোখ থেকে ঘুম ঘুম ভাব কাটেনি। তারপরেও জীবিকা আর কর্মের জন্য ঘাটে তাদের আসতেই হবে।

আগামীকাল থেকে ইলিশ ধরা, বিক্রি, মজুদ এবং পরিবহনের শেষ দিন। শেষ দিনের আলো ফোটার আগেই কর্মযজ্ঞে নেমে পড়েছেন দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বিএফডিসি ঘাটে থাকা জেলেরা।

একদিকে ঘাটে সারিসারি ট্রলার। এক ট্রলারের সঙ্গে আরেকটি ট্রলারে ঘেঁষে রয়েছে। চলছে কে কার আগে মাছ টলশেডে ওঠানোর প্রতিযোগিতা।

অন্যদিকে টলশেডে মাছ বিক্রি, মাছ প্যাকেটজাতকরণ, আরেকদিকে প্যাকেটজাত মাছ ভ্যানে করে ট্রাকে ওঠানো। এ এক বিশাল কর্মযষ্ণে পরিণত হয়েছে। ইলিশ মৌসুমে এভাবে বিএফডিসি ঘাটে কর্মযজ্ঞ থাকলেও মা-ইলিশ সংরক্ষণের জন্য ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে মঙ্গলবার শেষ দিন হওয়াতে আরও বেশি কর্মযজ্ঞ বেড়ে যায়।

সকালে আলো ফোটার আগেই বিএফডিসি ঘাটে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। সারিবদ্ধভাবে ভ্যান দিয়ে ট্রাকে মাছ উঠানো হচ্ছে। ঠিক এমন সময় দেখা মেলে কয়েকজন ভ্যানচালকের।

ভ্যানচালক মো. নজরুল ইসলাম রাস্তায় দাঁড়ানো কয়েকজনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ও ভাই, সরেন…সইরা জান, দ্যাহেন না জায়গা নাই। মোগো হাতে সময় নাই।’বুধবার (৯ অক্টোবর) রাত ১২টা থেকে শুরু হয়ে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা চলবে। ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে সারা দেশব্যাপী ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রি ও বিনিময় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গণসচেতনতা বাড়াতে ‘মা-ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০১৯’র অংশ হিসেবে আগামী ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যা গত বছর নিষিদ্ধের সময় ছিল ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর। ১৯৮৫ সালের মাছ রক্ষা ও সংরক্ষণ বিধি (প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন ফিস রুলস, ১৯৮৫) অনুযায়ী প্রতিবছর আশ্বিনী পূর্ণিমার সময় ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন ফিস রুলস সংশোধন করে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধের সময় ২০১৬ সালে বাড়িয়ে ২২ দিন করা হয়।

এর আগে এ সময় ছিল ১৫ দিন। ২০১৫ সালের আগে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধের সময় ছিল ১১ দিন।

প্রতিনিয়ত যারা বিএফডিসি ঘাটে ভ্যানে করে মাছের প্যাকেট ট্রাকে উঠান তাদের মধ্যে হানিফ শরীফ, আলম মিয়া, আব্দুল জলিল ও এমাদুল।

তারা বলেন, প্রতিদিনই গভীর রাত থেকেই কর্মযজ্ঞে নেমে পড়ি। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত কখনো কখনো মাছের সংখ্যা বেশি হলে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজে থাকতে হয় আমাদের। আয় বেশি হলে সব কষ্ট ভুলে যাই।

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে কথা হয় মৎস্য আড়তদার মো. বাইজিদ মীরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ বেচা-কেনা চলছে। আর আজকের শেষ দিন হওয়াতে আরও বেশি ভিড় দেখা যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এখনো অনেক ট্রলার আসার বাকি রয়েছে। তারা ইতোমধ্যেই কাছাকাছি এসে পৌঁছেছেন।

কথা হয় বিএফডিসি পাইকার সমিতির সভাপতি মো. সাফায়েত মুন্সির সঙ্গে।

তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বড় বড় পাইকাররা শেষ দিনেও ভিড় করেছেন। আমরা আশাবাদী দিনের মধ্যেই ঘাটে আসা সব ট্রলারের মাছ বিক্রি করে পরিবহনগুলো ছাড়তে পারবো।