শুক্র. এপ্রি ১৯, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
খােলাবাজার ২৪,বুধবার,০৯অক্টোবর,২০১৯ঃ বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদ ও হত্যায় জড়িতদের  সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতসহ বিভিন্ন দাবিতে আজও উত্তাল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাস।

এ সময় শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে আবরার হত্যার ঘটনায় বুয়েটের ভিসিকে আলটিমেটাম দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

বুধবার সকালে বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের ১০ দফা দাবি পড়ে শোনান।

  • শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবিগুলো হলো-

১. আবরার ফাহাদের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সিসিটিভি ফুটেজ ও জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে খুনিদের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

২. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে শনাক্তকৃত সবাইকে ১১ অক্টোবর বিকেল ৫টার মধ্যে আজীবন বহিষ্কার নিশ্চিত করতে হবে।

৩. মামলা চলাকালে সব খরচ এবং আবরারের পরিবারের সব ক্ষতিপূরণ বুয়েট প্রশাসনকে বহন করতে হবে। এ মর্মে অফিশিয়াল নোটিশ ১১ তারিখ বিকেল ৫টার মধ্যে দিতে হবে।

৪. দায়েরকৃত মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অধীনে স্বল্পতম সময়ে নিষ্পত্তি করার জন্য বুয়েট প্রশাসনকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বুয়েট প্রশাসনকে সক্রিয় থেকে সমস্ত প্রক্রিয়া নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নিয়মিত ছাত্রদের আপডেট করতে হবে।

৫. অবিলম্বে চার্জশিটের কপিসহ অফিশিয়াল নোটিশ দিতে হবে।

৬. বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে দীর্ঘদিন ধরে বুয়েটের হলে হলে ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করে রাখা হয়েছে। জুনিয়র ব্যাচকে সব সময় ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে রাজনৈতিক মিছিল মিটিংয়ে যুক্ত করা হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে কোনো সময় যে কোনো হল থেকে সাধারণ ছাত্রদের বিতাড়িত করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে হলে হলে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। রাজনৈতিক সংগঠনের এহেন কর্মকাণ্ডে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ক্ষুব্ধ। তাই আগামী সাত দিনের (১৫ অক্টোবর) মধ্যে বুয়েটে সব রাজনৈতিক সংগঠন এবং এগুলোর কার্যক্রম স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।

৭. বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কেন ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হননি। তিনি ৩৮ ঘণ্টা পরে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেন এবং কোনা প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে স্থান ত্যাগ করেন। তাকে সশরীরে ক্যাম্পাসে এসে বুধবার (০৯/১০/১৯) দুপুর ২টার মধ্যে জবাবদিহি করতে হবে।

৮. আবাসিক হলগুলোতে র‌্যাগ এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর সব ধরনের শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে এবং এ ধরনের সন্ত্রাসে জড়িত সবার ছাত্রত্ব প্রশাসনকে বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে আহসানউল্লা হল এবং সোহরাওয়ার্দী হলের পূর্বের ঘটনাগুলোতে জড়িত সবার ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে ১১ অক্টোবর বিকেল ৫টার মধ্যে।

৯. আগে ঘটা এ ধরনের ঘটনা প্রকাশ এবং পরে ঘটা যে কোনো ঘটনা প্রকাশের জন্য একটা কমন প্লাটফর্ম (কোনো সাইট বা ফর্ম) থাকতে হবে এবং নিয়মিত প্রকাশিত ঘটনা রিভিউ করে দ্রুততম সময়ে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। এ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বুয়েটের বিআইআইএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে হবে এবং ১১ অক্টোবর বিকেল ৫টার মধ্যে অগ্রগতি দৃশ্যমান হতে হবে ও পরবর্তী এক মাসের মধ্যে কার্যক্রম পূর্ণরূপে শুরু করতে হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে সবগুলো হলের প্রত্যেক ফ্লোরের সবগুলা উইংয়ের দুইপাশে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে হবে।

১০. রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আবাসিক হল থেকে ছাত্ৰ উৎখাতের ব্যাপারে ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হওয়ায় শেরে বাংলা হলের প্রভোস্টকে ১১ অক্টোবর বিকেল ৫টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।

এ সময় সন্ধ্যা ৭টায় মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচির ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানান তারা।

প্রসঙ্গত, ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার জের ধরে আবরার ফাহাদকে রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দুইতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পরদিন সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি বলেন, ‘ছেলেটিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

এই ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯ জন ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ।

নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।