
বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় এমভিএ বাস্তবায়নে স্থবিরতার পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিপক্ষীয় এ উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যেতে চায় প্রতিবেশী বৃহৎ এই দেশটি। ভারতের এ উদ্যোগের ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থান নেতিবাচক নয়। সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের শীর্ষ বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তবে দ্বিপক্ষীয় এমভিএতে বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের আগ্রহই বেশি। কেননা এর মাধ্যমে ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সাথে মূল ভূখণ্ডের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবে। ভূমিবেষ্টিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে সরাসরি যোগাযোগের অভাবকে দায়ী করা হয়।
প্রকল্পের আওতায় ১৩ কোটি ডলার ব্যয়ে কলকাতা থেকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বনগাঁও পর্যন্ত সড়ক প্রশস্থ, দেড় কোটি ডলার ব্যয়ে শিলিগুড়ি-মিরিক-দার্জিলিং সড়ক উন্নয়ন এবং ২৫ কোটি ডলার ব্যয়ে কলকাতার উপকণ্ঠে অবস্থিত ডায়মন্ড হারবার থেকে ১২৩ কিলোমিটার নতুন রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছিল। এ ছাড়া ৫১ কোটি ডলার ব্যয়ে মনিপুর রাজ্যের দু’টি মহাসড়ক উন্নয়নও এর আওতায় রয়েছে। চার দেশের সবাই এ চুক্তি অনুসমর্থন করার পর বিবিআইএন এমভিএ কার্যকর হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু ভুটানের পার্লামেন্ট চুক্তিটি অনুসমর্থনে সায় দেয়নি। তাই বিবিআইএন এমভিএ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া মুখ থুবড়ে পড়েছে।
রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থায় অভ্যস্ত ভুটানের ভয়, এমভিএ বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের ভারী যানবাহনগুলোর চলাচল তাদের দেশে বেড়ে যাবে। এটি ভুটানের নাজুক অবকাঠামোকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। এ ছাড়া ভুটানে অন্য দেশের নাগরিকদের যাতায়াতও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে যাবে। এটি ভুটানের জনগণ পছন্দ করবে না। এ কারণে ভুটান তাদেরকে বাদ দিয়েই বিবিআইএনের অন্যান্য দেশকে এমভিএ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছে। কিন্তু বিবিআইএনের বাকি দেশগুলো ভুটানের এই প্রস্তাব পছন্দ করেনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আঞ্চলিক উদ্যোগ কাক্সিক্ষত গতি না পেলে বাংলাদেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় এমভিএ সই করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছে ভারত। দিল্লিতে শীর্ষ বৈঠকের পর ঢাকায় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ৫ অক্টোবর দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করে পণ্য আমদানি-রফতানির এসওপি সই হয়েছে। এসওপির আওতায় বাংলাদেশের নদীপথ, রেল, সড়ক বা মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট (নদী, রেল বা সড়ক) ব্যবহার করে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য আনা-নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের রামগড় ও ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার সাবরুম-ফেনী নদীর ওপর নির্মাণাধীন মৈত্রী সেতুর মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে ত্রিপুরার সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হবে। বর্তমানে এক হাজার ৫০০ কিলোমিটার পথ ঘুরে ত্রিপুরাকে কলকাতা বন্দর ব্যবহার করতে হয়। এখন মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরের চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে পারবে রাজ্যটি।
এসওপি অনুযায়ী আটটি রুট হচ্ছে চট্টগ্রাম বা মংলা বন্দর থেকে আখাউড়া হয়ে আগরতলা (ত্রিপুরা), চট্টগ্রাম বা মংলা বন্দর থেকে তামাবিল হয়ে ডাউকি (মেঘালয়), চট্টগ্রাম বা মংলা বন্দর থেকে শ্যাওলা হয়ে সুতারকান্দি (আসাম), চট্টগ্রাম বা মংলা বন্দর থেকে বিবিরবাজার হয়ে শ্রীমন্তপুর (ত্রিপুরা), আগরতলা (ত্রিপুরা) থেকে আখাউড়া হয়ে চট্টগ্রাম বা মংলা বন্দর, ডাউকি (মেঘালয়) থেকে তামাবিল হয়ে চট্টগ্রাম বা মংলা বন্দর, সুতারকান্দি (আসাম) থেকে শ্যাওলা হয়ে চট্টগ্রাম বা মংলা বন্দর এবং শ্রীমন্তপুর (ত্রিপুরা) থেকে বিবিরবাজার হয়ে চট্টগ্রাম বা মংলা বন্দর।