খােলাবাজার ২৪,শনিবার,২৬অক্টোবর,২০১৯ঃ মেহেদী হাসান,জবিঃ রাজধানীর বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি ) একটি মাত্র মেডিকেল সেন্টার যা বিগত ১৪ বছরেও উন্নতির মুখ দেখেনি ।
২০০৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রনয়নের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে আজ ১৪তম বছরে পা রাখলেও, প্রতিষ্ঠান টির একটি মাত্র চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রের কোন উন্নয়ন চোখে পড়ে নি । উল্টো চিকিৎসক সংখ্যা কমলেও বিপরীতে দিনে দিনে যোগ হচ্ছে নতুন শিক্ষার্থী। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে দুজন চিকিৎসক থাকলেও ২০১০ সালে তার সংখ্যা কমে দাড়িয়েছে এক-এ।
অপরদিকে ক্যাম্পাস প্রত্যক্ষভাবে পরখ শেষে দেখা যায়, শিক্ষক-শিক্ষার্থী বাহী বাসে ক্যাম্পাস গাড়ীর গোডাউনে পরিনত হলেও জরুরি ভিত্তিতে রোগী বহনের জন্য রয়েছে একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স। সেটি শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে পাওয়া দুষ্কর। তাই শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের সুমনা, মিটফোর্ড ও ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেবা নিতে যান।
চিকিৎসা খাতে নেই পর্যাপ্ত বরাদ্দও। ফলে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী যথাযথ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনের নিচতলায় বাম দিকে প্রকৌশল দফতরের বিপরীতে একটি রুমে চলছে জবি মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম।
মেডিকেলের জন্য তিনটি কক্ষ বরাদ্দ থাকলেও বর্তমানে একটিতে চলে শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের কার্যক্রম। আরেকটি রুমে রোগীদের জন্য একটি বেড পাতানো থাকলেও সেটি অব্যবহৃত পড়ে আছে। চিকিৎসা সরঞ্জাম হিসেবে আছে রোগীদের জন্য দুটি বেড, প্রেসার মাপার দুটি ও ওজন মাপার একটি যন্ত্র। এছাড়া প্যাথলজিক্যাল টেস্টের কোনো যন্ত্রপাতি নেই। শিক্ষার্থীদের তেমন চাপ নেই বলে অলস সময় কাটাচ্ছেন ডাক্তার।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা নানা সমস্যায় জর্জরিত থাকলেও মাথা ব্যথা, জ্বর, পেট খারাপের ওষুধ ছাড়া আর কিছুই মেলে না এ মেডিকেলে। রোগীদের শুধু প্রেসক্রিপসন লিখে দেয়া হয়, বাকি ওষুধ বাইরে থেকে কিনে নিতে হয়। তাই অনেকে অর্থের অভাবে কিনতে পরেন না প্রয়োজনীয় ওষুধ। এছাড়া ক্যাম্পাসে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লেও এ মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসার বন্দোবস্ত হয় না।
প্রশাসনের অবহেলাকে দায়ী করে শিক্ষার্থীরা বলছেন, মানুষের মৌলিক চাহিদা চিকিৎসা সেবার কথা উল্লেখ থাকলেও তা বাস্তবায়নে পরিপূর্ণভাবে ব্যর্থ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ভুগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী জয় শর্মা বলেন, আমি জ্বর আর মাথাব্যথা নিয়ে মেডিকেল সেন্টারে গিয়েছিলাম, হাতে কয়েকটা ট্যাবলেট দিয়ে প্রেসক্রিপশন লিখে বাইরে থেকে ওষুধ কিনে খেতে বলেছেন কর্তব্যরত ডাক্তার।
এ বিষয়ে ডা. মিতা শবনম বিবার্তাকে বলেন, জবি মেডিকেল সেন্টারে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। আমি এখানে একা হওয়ার কারণে কষ্ট হয়ে যায়। আমার সাধ্য অনুযায়ী কাজ করতে চেষ্টা করি। আমি কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসক ও চিকিৎসার সরঞ্জাম বাড়ানোর জন্য বারবার বলেছি। বিষয়টি তারা দেখছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।
ওষুধ ও সেবা দেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত ওষুধ বরাদ্দ না থাকায় রোগীদের সবসময় ওষুধ দেয়া সম্ভব হয় না। মেডিকেল সেন্টারের বাজেট বাড়ালে এবং প্যাথলজিক্যাল যন্ত্রপাতি বাড়ালে এখানে আরো সেবা দেয়া সম্ভব।
জানা গেছে, ২০০৫ সাল থেকে দুজন ডাক্তার দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও ২০১০ সাল থেকে কর্মরত আছেন একজন ডাক্তার। যাত্রালগ্ন থেকেই মেডিকেল সেন্টারটির জন্য থাকে না পর্যাপ্ত বরাদ্দ। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১৩২ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও চিকিৎসাখাতে বরাদ্দ রয়েছে মাত্র দুই লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের ০ দশমিক ০১৫ শতাংশ। বিগত কয়েক বছরে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বৃদ্ধি পায়নি।
প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু লোকবল আর বরাদ্দের অভাবে যথাযথ সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। শিক্ষার্থীদের এখানে কেবল প্রাথমিক চিকিৎসাই মেলে। তাই প্রয়োজনীয় স্যালাইন, নাপা, হিস্টাসিনসহ ১৬ রকমের ওষুধ রয়েছে, বাকিটা প্রেসক্রিপশনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান জবি প্রতিনিধিকে বলেন, কয়েকবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও ভালো কোনো ডাক্তার পাওয়া যায়নি। বরাদ্দ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। যে বরাদ্দে দেয়া হয় তা প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট। আপাতত আমরা মেডিকেল সেন্টার নিয়ে কিছু ভাবছি না।