Mon. Apr 21st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
খােলাবাজার ২৪,বৃহস্পতিবার,৩১অক্টোবর,২০১৯ঃ ২০১৭-২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনবার ভারতীয় জুয়াড়ি দীপক আগারওয়ালের সঙ্গে কথোপকথন হয় সাকিব আল হাসানের। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পান তিনি। তবে তা গ্রহণ করেননি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। বিপত্তিটা বাঁধে অন্য জায়গায়। আইসিসিরি দুর্নীতি দমন ইউনিটের (আকসু) আইন অনুযায়ী, সেটা সঙ্গে সঙ্গে তাদের জানাতে হতো। তবে অবগত বা অবহিত করেননি সাকিব। জিজ্ঞেস করলেও অস্বীকার করেন তিনি।

পরে তদন্তে নামে আকসু। আগারওয়ালের সঙ্গে তার আলাপের প্রমাণ পায় তারা। স্বভাবতই চেতে যায় আইসিসি। সাকিবকে প্রাথমিকভাবে দুই বছর নিষিদ্ধ করে তারা। তবে তদন্তে সহযোগিতা, দায় স্বীকার করে ভুল মেনে নেয়ায় এক বছর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়। এসময়ে ফের অপরাধ করলে আগের শাস্তিই বহাল থাকবে তার।

অনেকে বলছেন, লঘুপাপে গুরুদণ্ড হয়েছে সাকিবের। কেউ বলছেন, রাজনীতির স্বীকার তিনি। আসলে কী তাই? এর যথার্থতা নিরুপণে সামান্য প্রয়াস চালানো হলো।

ঘটনার শুরু দুই বছর আগে। এক বছর ধরে তা চলেছে। অথচ তদন্ত চলেছে সেই কাণ্ডের পরের দুই বছর। এটা কেন হলো? এর প্রয়োজন পড়লো কেন? সাকিব মেনে নিলে প্রমাণেরই দরকার পড়ে না। ফলে অনেক আগেই তাকে এ শাস্তি দিতে পারতো আইসিসি।

সেটা এখন থেকে এক বছর আগে হলে এতদিন আগামী সিরিজগুলোর জন্য তৈরি হতে পারতেন সাকিব। সামনে বাংলাদেশের রয়েছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ। আছে বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। আগেভাগে শাস্তি পেলে মানসিকভাবে এগুলোর জন্য প্রস্তুত হতে পারতেন তিনি।

ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট ভালো যাচ্ছে না। শ্রীলংকা গিয়ে সিরিজ হেরেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট হেরেছে। সেই ধকল কাটিয়ে ওঠার আগেই বেতন-ভাতাদিসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ে ধর্মঘট ডাকেন ক্রিকেটাররা। এতে তাদের ওপর চড়াও হয় বিসিবি।

ফলে ক্রিকেটার-বিসিবির সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এর মাঝে অবসর নেয়ার চিন্তাভাবনা করছেন ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক মাশরাফি বিন মুর্তজা। এরকম বেশ কিছু কারণে টালমাটাল দেশের ক্রিকেট। ঠিক সেই মুহূর্তে সাকিবকে নিষিদ্ধের ঘোষণাটা দিল আইসিসি। এতে টাইগার ক্রিকেট আরো বিধ্বস্ত হবে। স্বাভাবিকভাবেই খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে চলে যাবে। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

সঙ্গত কারণেই মনে হচ্ছে, এটা বিশাল পলিটিক্স। মূলত আইসিসি চালায় তিন মোড়ল- ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। এদের প্রভাবমুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। তারা যা বলবে কিংবা চাইবে সেটাই হবে। সাকিবের সিদ্ধান্তও হয়তো তাই হয়েছে।

আইসিসিতে বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর বাজানোর সুযোগ নেই। সেটা অবশ্য নিজেদেরই ব্যর্থতা। এজন্য ভালো মাপের ক্রিকেট সংগঠক হতে হয়। বহির্বিশ্বে বিভিন্ন বোর্ডের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হয়। যে পলিটিক্সে দেশের অবস্থান শুন্য। ফলে বহুভাবে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ক্রিকেটকে। এ ফারাক কাটিয়ে উঠতে না পারলে এ চিত্র আরো প্রশস্ত হবে। বলির পাঁঠা হতে হবে বাংলাদেশের মতো মাজা সোজা করে দাঁড়ানোর চেস্টা করা দলগুলোকে।

উপরন্ত, বিসিবির মধ্যেও কোনো শৃঙ্খলা নেই। সাকিবের এ ঘটনা নিয়ে আগেই জানত তারা। অথচ তার শাস্তি কমাতে কোনো দেনদরবার করেননি বোর্ড প্রেসিডেন্ট-কর্মকর্তারা। ক্রিকেটারদের ন্যায্য আন্দোলনের প্রতিবাদে আঁট ধরে বসে থেকেছে তারা। বাইরে তো বটেও ঘরেও রাজনীতির শিকার দেশসেরা ক্রিকেটার!

সাকিবকে জুয়ার প্রস্তাব দেন আগারওয়াল। তিনি ভারতীয় নাগরিক। লন্ডনের সঙ্গে তার ভালো যোগাযোগ রয়েছে। তিনি যে মোড়লদের সাজানো নাটক ‘মঞ্চস্থ’ করেননি এর প্রমাণ কে দেবে? সর্বত্র ভারতীয় জুয়াড়িদের জয়জয়কার। তাদের করাল গ্রাসে বিশ্ব ক্রিকেটই একার্থে হুমকির মুখে। অর্থের ঝনঝনানিতে উদীয়মান অনেক ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিচ্ছেন তারা। তবে তাতে ভারতীয় কারো নাম নেই। সব উঠতি ক্রিকেট খেলুড়ে দেশের খেলোয়াড়।

আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, আগারওয়ালরা শুধু জন্ম নিয়েছে বাংলাদেশসহ হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগোতে থাকা দলগুলোর ক্রিকেটারদের দমন করার জন্য। যেন তিন মোড়লের বাইরে কেউ ডালপালা মেলতে না পারে। ক্রিকেটে কেউ আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে?

সর্বোপরি, সাকিবের বিষয়গুলো নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। কিন্তু এসব করে কোনো লাভ নেই। আইসিসিতে বাংলাদেশের অবস্থান নড়বড়ে। বিসিবির কর্মকাণ্ডও ঠিক নেই। অর্থাৎ কথার কথা এ দুই জায়গায় বলতে হবে। অন্যথায় এমন নাটকীয় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতেই থাকবে বৈকি!