তবে ইলিশে স্বস্তি মিললেও লাগামহীন পেঁয়াজের দামে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে ক্রেতাদের। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ১৫০ টাকায়। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
মা-ইলিশ রক্ষার জন্য গত ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত নদী ও সাগরে ইলিশ মাছ ধরা নিষেধ ছিলো। এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর গত ৩১ অক্টোবর থেকে আবারো জেলেরা ইলিশ আহরণ শুরু করেছেন। এর একদিনের মাথায়ই রাজধানীর বাজারগুলো ইলিশে সয়লাব হয়ে গেছে। আর সরবরাহ বেশি হওয়ায় দামও বেশ কম বলে জানা গেছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি। আর ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে।
কারওয়ান বাজারের ইলিশ বিক্রেতা আইয়ুব হোসেন বলেন, গত তিন সপ্তাহ ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় এখন জেলেদের জালে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ছে। এ কারণে বাজারে ইলিশের সরবরাহ অনেক বেশি। তাই দামও অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশ কম। এদিকে, বাজারে ইলিশের দাপটে অন্যান্য মাছের চাহিদা ও দাম দুটোই কমেছে বলে জানান অপর মাছ বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আজ সবাই এসে শুধু ইলিশ মাছই কিনছে। গত কয়েকদিন খেতে পারেনি বলে এখন সেটা পুষিয়ে নিচ্ছে। ফলে অন্যান্য মাছের ক্রেতা কমে গেছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতি কেজি রুই ও কাতল মাছ আকারভেদে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি, টেংরা ও পাবদা ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, তেলাপিয়া ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, পাঙ্গাশ ১১০ থেকে ১৪০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে ইলিশে স্বস্তি মিললেও পেঁয়াজের লাগামহীন দামে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা বেড়ে গেছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা কেজি। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ১৩০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিলো ৯০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, শ্যামবাজারের পাইকারি বিক্রেতারা প্রতিদিনই দাম বাড়াচ্ছে। বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলে তাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় দাম কিছুটা বাড়বে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বর্তমানে পেঁয়াজের যে পরিমাণ দাম বেড়েছে, তা স্বাভাবিক ঘটনা নয়। তার অভিযোগ, আমদানিকারক ও শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট কারসাজি করেই দাম এতোটা বাড়িয়েছে। কেননা, এখনো পর্যন্ত বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহে কোনো সঙ্কট তৈরি হয়নি। তবে তার এ অভিযোগ মানতে নারাজ পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
শ্যামবাজারের পেঁয়াজের পাইকারি ব্যসায়ী মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, গত এক মাস ধরে চাহিদা মোতাবেক পেঁয়াজ আমদানি না হওয়ায় গুদামের পেঁয়াজ দিয়েই চাহিদা মেটানো হয়েছে। কিন্তু সেটাও শেষ। এছাড়া এর মাঝে কিছু আমদানি হলেও হঠাৎ বৃষ্টিতে ওইসব আমদানি করা পেঁয়াজের অধিকাংশই পচে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এখন চাহিদার অর্ধেক পেঁয়াজও সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এ কারণেই দাম বাড়ছে। এখানে সিন্ডিকেট বা কারসাজির কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে, পেঁয়াজের মতো বেশ কিছু সবজির দামও বেশ চড়া। তবে শীতকালীন কিছু সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি শিম ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন ৫০ থেকে ৭০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পটোল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঝিঙা ও বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকা পিস, লাউ আকারভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পাকা টমেটো ৯০ থেকে ১০০ টাকা ও শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে চলতি সপ্তাহে অপরিবর্তিত রয়েছে সব ধরনের মাংসের দাম। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা, খাসি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, লাল লেয়ার মুরগি ২০০ থেকে ২২০ টাকা এবং পাকিস্তানি কক ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়।