Tue. Jun 10th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪,শনিবার,০২নভেম্বর,২০১৯ঃ মেহেদী হাসান,জবিঃ ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী তে প্রোগ্রামার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সদ্য মেয়াদ উত্তীর্ণ কোষাধ্যক্ষ মোঃ সেলিম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে। সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে রয়েছে আরো নানা অনিয়ম ও টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ।
সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) কোষাধ্যক্ষের মেয়াদ শেষ হয়েছে। টানা দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন জবির সাবেক কোষাধ্যক্ষ মোঃ সেলিম ভূঁইয়া। নানা অভিযোগ ও অনিয়মে জর্জরিত সাবেক এই কোষাধ্যক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয় সুত্রে জানা যায়, শুধু স্বজন প্রীতিতেই অভিজ্ঞতা ছাড়াই প্রোগ্রামার পদে নিয়োগ, আস্থা ভাজন হওয়ায় পদোন্নতি, বেতন স্কেল, গাড়ী সহ অতিরিক্ত সুবিধা গ্রহণ, সন্ধ্যাকালীন কোর্সে ক্লাস নিয়ে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ, টেন্ডার ছাড়াই দাপ্তরিক ও ক্যাফেটিরিয়ার কাজ, নতুন ক্যাম্পাসের প্রকল্প হতে বেশী টাকা গ্রহণ এবং সমাবর্তনের টাকা নিজের সুবিধামত ব্যাংকে রেখে ফায়দা গ্রহন সহ নানা কাজে অনিয়মের সাথে জড়িত এই কোষাধ্যক্ষ।
অপরদিকে, চলতি বছরের গত ১৭ অক্টোবর কাজের মেয়াদ শেষ হলে কোষাধ্যক্ষ ছাড়াই চলছে প্রতিষ্ঠানিক কাজ কর্ম। ফলে নানা জটিলতার সম্মুখীন চলমান কর্মকাণ্ড। ফাইল আটকে থাকা ও আগামী মাসের বেতন নিয়েও বেশ চিন্তিত শিক্ষক ও কর্মচারিরা ।
চলমান জটিলতা কাটাতে কোষাধ্যক্ষ পদে মোঃ সেলিম ভূঁইয়াকেই আনতে মরিয়া বিশ্বিবদ্যালয় প্রসাশন। অথচ অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই চান না এমন ট্রেজারার।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্য থেকে কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের দাবিতে দফায় দফায় আন্দোলন চলছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। অথচ অভিযুক্ত সাবেক কোষাধ্যক্ষকেই ফেরাতে গণভবন ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চলছে লবিং -তদবির।
বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায়, মোঃসেলিম ভূইয়া দুই মেয়াদে নিয়োগের ফলে নিজস্ব বলয় তৈরি করেছেন ফলে নিজের ইচ্ছামত নিয়োগ ও টাকা আত্মসাৎ মুলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। নানা ফাক-ফোকরে অনিয়ম কে নিয়মে পরিণত করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় আইনে তিনি অবৈতনিক তবে যাতায়াতের জন্য গাড়ী সুবিধা পাবেন। অথচ নানা ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থ ভোগ-বাটোয়ারা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ী ব্যবহার করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ক্লাস নিতে যেতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী কে অভিজ্ঞতা ছাড়াই একই দপ্তরের কর্মকর্তা বানিয়েছেন এবং চুক্তিভিত্তিক আইটি কনসালটেন্টকে অভিজ্ঞতা ছাড়াই সরাসরি প্রোগ্রামার পদে নিয়োগ দিয়েছেন নিজ ক্ষমতার গুণে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত সমাবর্তনের টাকা নিজ আত্মীয়ের ডেমরা শাখা ব্যাংকে রেখে সুবিধা গ্রহণ সহ টেন্ডার ছাড়াই অনেক কাজ করেছেন।
সুত্র জানান, সেলিম ভূঁইয়ার আস্থভাজন হওয়ায় ২০১৬ সালের ৩মে মোঃ হাফিজুর রহমানকে চুক্তি ভিত্তিক আইটি কনসালটেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরের বছরই ২০১৭ সালের ৩মে প্রোগ্রামার পদের (৬গ্রেড) চাকুরীর জন্য আবেদন করেন। কিন্তু তখন সেলিম ভূঁইয়ার সুপারিশে চুক্তি ভিত্তিক মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়। ঠিক তার পরের বছরই অর্থাৎ ২০১৮ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারিতে ৬ মাসের জন্য অ্যডহক ভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় ২০১৫ সালের বেতন স্কেলে। অথচ এই পদে চাকুরীর জন্য আবেদনকারীকে নূন্যতম ৫বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে যেখানে হাফিজুর রহমানকে নেওয়া হয় দুই বছরের অভিজ্ঞতায়। ২০১৬ সালে “পিপলস ইউনিভার্সিটি” থেকে স্নাতক পাশ করা হাফিজুর রহমানকে রাখতে পরের বছর আরোও ৬ মাসের জন্য সুপারিশ করেন এই সাবেক কোষাধ্যক্ষ।
অপরদিকে, নিজ দপ্তরের আস্থাভাজন কর্মচারী আনোয়ার হোসেন কে অনিয়ম করে কর্মকর্তা বানিয়েছেন ক্ষোদ সেলিম ভূঁইয়া। সেখানে আরো অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোকজন থাকলেও যাচাইয়ের প্রয়োজনও মনে করেন নি।
দাপ্তরিক সুত্রে জানা যায়, কোষাধ্যক্ষ একটি অবৈতনিক পদ । এ পদের সম্মানী হিসেবে গাড়ীর সুবিধা পাবেন অথচ তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুধু বেসিক বেতনই নেন ৭৬ হাজার ৪৯০ টাকা। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তে ক্লাসের জন্য যাতায়াত করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ীতে এবং ইভেনিং এমবিএ তেও ক্লাস নেন বিশ্ব বিদ্যালয় এর প্রভাব খাটিয়ে।
কেরানীগঞ্জে জবি নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পে ১লক্ষ ৫২ হাজার ও ভূমি অধিগ্রহনের নামে আরো ৯০ হাজার টাকা বেশী নেন। এভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা কাজের সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন ।
যদি তৃতীয় মেয়াদে তিনি আবারও দায়িত্বপান তবে বিশ্ববিদ্যালয়কে এভাবেই টাকার অংক গুনতে হবে যা যাবে কোষাধ্যক্ষের পকেটে, বলে জানান এই সুত্রটি ।
এ বিষয়ে সাবেক কোষাধ্যক্ষ মোঃসেলিম ভূঁইয়া বলেন, এত দিন পর কার ইন্ধনে খোজ নিতে এসেছো আমার জানা আছে। বিগত আট বছরে আসেন নি কেন? কোন আইনে আছে আমার বেতন সম্পর্কে জানতে চাওয়া , আপনি আইন নিয়ে আসেন। এতদিন পর কেন এসব হচ্ছে।
এ বিষয়ে রেজিষ্টার প্রকৌশলী মোঃ ওহিদুজ্জামান বলেন, কে বলেছে এসব জানতে। টেন্ডারের কাজ অল্প অল্প করে বিভক্ত করে করলে টেন্ডারের প্রয়োজন হয় না।
তিনি আরো বলেন, নতুন ক্যাম্পাসে সেলিম ভূঁইয়ার আর্থিক অনিয়ম কিছুটা সত্য।