Tue. Jun 10th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
খােলাবাজার ২৪,বৃহস্পতিবার,০৭নভেম্বর,২০১৯ঃ দুর্নীতির অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে চলমান আন্দোলন থামাতে সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে গেলেও প্রত্যাখান করেছে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে আজও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

গতকাল বুধবার রাতে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীরা। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে পুরাতন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছে তারা। সেখান থেকে তারা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেবেন বলে জানা গেছে। সন্ধ্যায় সেখানে প্রতিবাদী কনসার্টের আয়োজন করবেন জানিয়েছেন তারা।

এর আগে প্রাধ্যক্ষ কমিটির এক জরুরি বৈঠক শেষে গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শিক্ষার্থীদের ১৬টি হলের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি বন্ধ করে দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব দোকানপাট।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ধরনের সভা, সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে না পারায় সাভার, ইসলামনগরসহ আশেপাশের এলাকায় অবস্থান নেন। সেখান থেকে আন্দোলনে যোগ দেন তারা।

এদিকে, প্রশাসন কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর ক্যাম্পাসে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তাবাহিনী ও গোয়েন্দাদের সংখ্যা। যেকোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছেন তারা। প্রধান ফটকে মোতায়েন করা হয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, ভিসি ফারজানা ইসলামকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আমরা হল ছাড়ার নির্দেশ মানছিনা। রাতে থাকার জন্য হলে যাবেন বলে জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) সভাপতি মাহাথির মোহাম্মাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাখান করেছি। উপাচার্য হল ভ্যাকেন্ট করে সব শিক্ষার্থীকে বের করে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিরাপদে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য বানাতে চান। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্দোলনরতদের একটি ফেসবুক পেজ হ্যাক করে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন মাহাথির।

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এদিন দুই শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে। ছাত্রীদের হল হয়ে পরিবহন চত্বর ঘুরে মিছিলকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে উপাচার্যকে বরখাস্তের দাবিতে সংহতি সমাবেশ করেন আন্দোলনকারীরা। সংহতি সমাবেশ চলে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত।

এদিকে চলমান এ সংকট মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তির পরীক্ষার সব কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। কেবলমাত্র অনলাইনে সাবজেক্ট চয়েস ফরম পূরণ করতে পারবেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে জায়গা থাকা সত্ত্বেও পরিবশে ধ্বংস করে হল নির্মাণ, প্রকল্প নিয়ে উপাচার্যের ‘মধ্যস্থতায়’ ছাত্রলীগকে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগের তদন্তের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এক পর্যায়ে তা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবির আন্দোলনে রূপ নেয়। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করায় ২ অক্টোবর থেকে আন্দোলন উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে মোড় নেয়।
১০ দিন উপাচার্যের কার্যালয় অবরুদ্ধ রাখার পর গত সোমবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। পরদিন ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা তাদের পিটিয়ে সরিয়ে দেন। এর প্রতিবাদে রাতে হল থেকে বেরিয়ে আসেন শিক্ষার্থীরা। রাত দেড়টা পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করেন তারা।

অন্যদিকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া এক অডিও ক্লিপে এক শিক্ষকের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও শিবির নেতা সাদ শরীফের কথোপকথনের আর্থিক লেনদেনের বিষয়টির প্রমাণ মিলে।

এতে আর্থিক লেনদেনসহ আন্দোলনের নির্দেশনা প্রদানের প্রমাণও পাওয়া যায়। দলীয় কর্মীদের সঙ্গে সাদের কথাবার্তায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, সাংবাদিক এবং জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের শিক্ষক নুরুল ইসলাম এবং পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ খবির আহমেদের জড়িত থাকার কথাও উঠে আসে।

এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ভোলার বোরহানুদ্দিনে সহিসংতা এবং বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন পরিচালনার নির্দেশনারও প্রমান মিলেছে অডিও রেকর্ডে।