Wed. Apr 23rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার২৪,সোমবার,০২ডিসেম্বর,২০১৯ঃ সাম্প্রতিককালে বেশ উদ্বেগের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে ঢাকার বায়ুদূষণ। নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ভারতের ‘গ্যাস চেম্বার’ আখ্যা পাওয়া দিল্লির বাতাসের চেয়েও ঢাকার বাতাস বেশি দূষিত হয়ে পড়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজু্যুয়াল’-এর বায়ুমান সূচকে (একিউআই) বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ঢাকা। নিরীহ মানুষের নীরব ঘাতক এই বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণের কারণে ঢাকা শহরে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, বাতাসে ভারী ধাতু ও সূক্ষ্ম বস্তুকণা বেড়ে গেলে ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট, স্নায়ুজনিত সমস্যা বেড়ে যায় আর যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা নিক্ষেপ, ড্রেন পরিষ্কার করে ময়লা ড্রেনের পাশে দীর্ঘদিন স্তূপিকরণ ও সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য পরিবহনের সময় অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থাপনার ফলে একটি অংশ রাস্তায় ফেলে দেয়ায় এর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের ফলে বায়ুদূষণের সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে বায়ুদূষণের সবচেয়ে ঝুঁকি কম দেশ জাপান তারা কিভাবে ছোট কাল থেকে এত পরিচ্ছন্ন থাকে এইসব

  • বায়ুদূষণ তৈরি হয় যেভাবে
    বায়ুদূষণ বলতে বোঝায় যখন বায়ুতে বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থের কণা ও ক্ষুদ্র অণু অধিক অনুপাতে বায়ুতে মিশে যায়। তখন এটি বিভিন্ন রোগ , অ্যালার্জি এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এ ছাড়াও এটা অন্যান্য জীবন্ত বস্তু যেমন— পশুপাখি, ফসল ইত্যাদির ক্ষতি করে। দূষিত বায়ু সুস্থ পরিবেশের জন্য বাধা। ২০১৪ সালের (WHO) এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১২ সালে বায়ুদূষণে প্রায় সাত মিলিয়ন মানুষ মারা গেছে।

গ্রিন হাউজ এফেক্টের ফলে ও কলকারখানা, যানবাহন-ই এই গ্যাসের উৎসের ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) পরিবেশের নেসেসারি ইভিল এই গ্যাসীয় উপাদানের অতিরিক্ত উপস্থিতি ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। কার্বন মোনো-অক্সাইড (CO) মানুষের শ্বাসক্রিয়ার পক্ষে চূড়ান্ত ক্ষতিকারক এই গ্যাস বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় ভারসাম্যের বিঘ্ন ঘটাতে পারদর্শী। মূলত পুরনো যানবাহনের থেকে এই গ্যাসের উৎপত্তি। এ কারণে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিভিন্ন দূষণ-নিয়ন্ত্রণজনিত বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে।

ইউরো স্টেজ এবং ভারত স্টেজ (ইঞ্জিনের রেটিং ব্যবস্থা) এ ধরনের দূষণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সালফার ডাই-অক্সাইড (SO2) ট্যানারি এবং অন্যান্য কলকারখানার চিমনি থেকে নির্গত ধোঁয়ার অন্যতম মূল উপাদান হলো এই (SO2) গ্যাস। বাতাসের ভাসমান জলীয় বাষ্পের সাথে মিশে গিয়ে এই গ্যাস অতি ক্ষতিকারক অ্যাসিড বৃষ্টি ঘটানোর ক্ষমতা রাখে। মানুষের ক্ষতির পাশাপাশি তাজমহলের মতো মার্বেল-নির্মিত সৌধের-ও অপরিবর্তণীয় ক্ষতি হয়েছে এর কারণে।

ক্লোরো ফ্লুরো কার্বন (CFC) মূলত পুরোনো এয়ার কন্ডিশনার এবং বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের উৎস। পৃথিবীর ওজনোস্ফিয়ার বা ওজন স্তর লঘুকরণের অন্যতম উপাদান এটি। কিন্তু বর্তমানে এই গ্যাস ব্যবহার করা নিষিদ্ধ হয়েছে প্রায় সব দেশেই। প্রকৃতপক্ষে, এই ফ্লুরো কার্বন পরিবারের কোনো গ্যাসই আর তেমন একটা ব্যবহার করা হয় না।

আবার সোনার কারখানাতে ব্যবহূত নাইট্রিক অ্যাসিড জনিত গ্যাস যেমন— নাইট্রোজেন মোনোক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড প্রভৃতি, প্রায় সব কারখানাতেই ব্যবহূত সালফারের যৌগ, ক্লোরিনের যৌগ ইত্যাদি থেকে উদ্ভূত গ্যাসগুলিও বায়দূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে পরিগণিত করা যেতে পারে। (SPM-Suspended Particulate Matter) এটি ধোঁয়া-ধুলো বা এরোসল হতে পারে। যানবহন বা জ্বালানি থেকে নির্গত ধোঁয়ার মধ্যে যে কার্বন কণা থাকে, তার আকার ১০ ন্যানোমিটার থেকে কম হয়। এগুলো বাতাসে ভেসে থাকে এবং বাতাসে মধ্যে কয়েক সপ্তাহ থাকতে পারে। এটি একটি বিশেষ কারণ।

  • যেভাবে দূষিত হচ্ছে ঢাকার বাতাস
    পৃথিবীর সব দেশে বা সব স্থানে নগরায়ণ ও শিল্পায়নের হার বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এর ফলে পরিবেশ দূষণ যেমন বেড়েছে তেমনি পাশাপাশি বায়ুদূষণের মাত্রাও বিশ্বে বেড়েছে বহুগুণে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, পৃথিবীর শতকরা প্রায় ৯১ ভাগ মানুষ সংস্থাটির নির্ধারিত মান মাত্রার নির্মল বায়ু সেবন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি বছর বায়ুদূষণের জন্য বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় পাঁচ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বায়ুদূষণ প্রকট আকার ধারণ করছে।

ঢাকার বায়ুদূষণ পরিস্থিতি সম্পর্কে গবেষকেরা বলছেন, নভেম্বর মাসে আট দিন (দিনের বেশির ভাগ সময়) ঢাকা ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর। এয়ার ভিজ্যুয়াল রাজধানীর সাতটি এলাকার বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করে।

তাদের তথ্য অনুযায়ী, এক সপ্তাহ ধরে ঢাকার মধ্যে বায়ুর মান সবচেয়ে খারাপ ছিলো কারওয়ান বাজার এলাকায়। এরপরই মোহাম্মদপুর ও গুলশান এলাকা। এর বাইরে উত্তরা, মিরপুর ও নর্দ্দা এলাকার বায়ুর মানও বেশ খারাপ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডিব্লিউএইচও) এবং যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশবিষয়ক সংস্থা ইপিএর হিসাবে কোনো একটি শহরের বায়ুর মানের সূচক (একিউআই) ২০০-এর বেশি হলে তাকে খুবই অস্বাস্থ্যকর বলা হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ শীর্ষক প্রকল্পের ওয়েবসাইট থেকে দেখা গেছে , ২৪ নভেম্বর ঢাকার বায়ুর মানের গড় সূচক ছিলো ২৭৯ যা খুবই অস্বাস্থ্যকর। এ ছাড়াও দেশের উল্লেখযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে গাজীপুরে সেই মান ছিলো ২৭৭, সাভার ২৮৯, নারায়ণগঞ্জে ৩০৫, রাজশাহীতে ২১৯, বরিশাল ২৮২ এবং রংপুরে ৩১২।

এদিকে ২৫ নভেম্বরের শুরুতে (মধ্যরাত ১২:৩২ মিনিট) বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের অ্যাপস থেকে দেখা যায়, বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকায় একিউআই সূচক ২৪১ নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। এরপর যথাক্রমে দ্বিতীয় ভারতের দিল্লি (২০২), তৃতীয় স্থানে কলকাতা (১৯৮), চতুর্থ স্থানে পাকিস্তানের লাহোর (১৮৮) এবং পঞ্চম স্থানে আফগানিস্তানের কাবুল (১৮০)।

এলাকাভিত্তিক বায়ুর মানের রকমফের থাকলেও সামগ্রিকভাবে রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকার বায়ু অস্বাস্থ্যকর বলে জানান গবেষকেরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা দেশে সনাতন পদ্ধতির ইটভাটা পরিচালনা, অপরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রম, শিল্প কারখানার উন্মুক্ত নিঃসরণ ও যানবাহনের ক্ষতিকর কালো ধোঁয়া, কঠিন বর্জ্য ও বায়োমাস পোড়ানো বায়ুদূষণের মূল কারণ। রাজধানী ঢাকার ক্ষেত্রে ভবন ও অবকাঠামো উন্নয়নকাজ উন্মুক্তভাবে করার ফলে শহরের বাতাসে ধুলাবালির পরিমাণ বাড়ছে।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সব সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা/প্রতিষ্ঠান এবং বড় বড় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুগো অর্থাৎ এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে, মেট্রোরেলসহ অন্য প্রকল্পগুলোকে কার্যকর পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা প্রতিপালন, সঠিক ব্যবস্থাপনা অনুসরণপূর্বক মাটি, বালু ও অন্যান্য সামগ্রী পরিবহন, সংরক্ষণ, কার্যকর কর্মপরিবেশ রক্ষা করা, সময়মতো রাস্তাঘাট সংস্কার, মেরামত ও বিভিন্ন প্রকল্পে নিয়মিত পানি ছিটানোসহ দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

বিশেষ করে বিভিন্ন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো নির্মাণসামগ্রী অর্থাৎ মাটি ও বালি পরিবহনে মাটি-বালুর একটি অংশ রাস্তার ফেলে যাচ্ছে যা পরবর্তীতে বায়ুদূষণের সৃষ্টির জন্য বিশেষভাবে ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়াও যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা নিক্ষেপ, ড্রেন পরিষ্কার করে ময়লা ড্রেনের পাশে দীর্ঘদিন স্ত্তূপীকরণ ও সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য পরিবহনের সময় অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থাপনার ফলে একটি অংশ রাস্তার ফেলে দেয়া হচ্ছে।

এসব বর্জ্য ও ময়লা-আবর্জনার ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের ফলে এসব বর্জ্য থেকে বায়ুদূষণের সৃষ্টি করছে। এ ছাড়াও বছরের নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি হয়। শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়া, ইটভাটা চালু এবং নির্মাণকাজ বৃদ্ধিসহ ধুলাবালুর কারণে দূষণ বেশি হয়।

  • বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অসহায় শিকার : তথ্যমন্ত্রী
    বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অসহায় শিকার। উন্নত দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশের কার্বন নিঃসরণ নগণ্য। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব আমাদের ওপরও পড়বে, একই অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় দিনে গত ২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘কনফারেন্স অন এনভায়রনমেন্টাল সল্যুশনস ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট টুয়ার্ডস ডেভেলপড বাংলাদেশ’ : টুওয়ার্ডস ডেভেলপড বাংলাদেশ’ শীর্ষক এর সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন উন্নত দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশের কার্বন নিঃসরণ নগণ্য। সে কারণে বাংলাদেশ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের অসহায় শিকার। তা সত্ত্বেও নিজস্ব তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ এ পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের এই ভূমিকার জন্য তিনি (প্রধানমন্ত্রী) পরিবেশ সংরক্ষণে জাতিসংঘ থেকে ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
  • বায়ুদূষণ মোকাবিলায় স্পষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে : কৃষিমন্ত্রী
    ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর দেশ রেখে যেতে হলে, বায়ুদূষণ মোকাবিলায় স্পষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা ও পরিবেশ সংরক্ষণ নিশ্চিত করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে কাজ করছে সরকার। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এরই মধ্যে আমাদের অবকাঠামো, ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থানসহ নানা ক্ষেত্রে পড়ছে। প্রকৃতপক্ষে ‘টেকসই উন্নয়ন’ অর্জনের জন্য প্রয়োজন একটি সমন্বিত ও সামগ্রিক বৈশ্বিক উদ্যোগ; যা উন্নয়নের প্রতিটি খাত-উপখাতকে যেমন সম্পৃক্ত করবে, তেমনি বিস্তৃত হবে বিশ্বজুড়ে। গত ২৭ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সবুজ পরিবেশ’ থিম নিয়ে ‘এনভায়রনমেন্টাল সলিউশনস ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট : টুওয়ার্ডস ডেভেলপড বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
  • বায়ুদূষণ থেকে জাপানিরা যেভাবে মুক্ত
    জাপানিরা কীভাবে এত পরিচ্ছন্ন থাকে? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে হিরোশিমা আঞ্চলিক সরকারের টোকিও অফিসের সহকারী পরিচালক মাইকো আওয়ানি বিবিসিকে বলেন, ১২ বছরের স্কুল জীবনে, অর্থাৎ শিশু শ্রেণি থেকে হাইস্কুল পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকেই প্রতিদিন বাধ্যতামূলক পরিচ্ছন্নতা ক্লাসে অংশ নিতে হয়।

মাইকো আরও বলেন, স্কুল ছাড়াও বাড়িতে বাবা-মায়েরা আমাদের পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে জ্ঞান দেন। তারা বলেন, আমাদের জিনিসপত্র এবং আশপাশ পরিচ্ছন্ন না রাখা মোটেও ভালো কাজ নয়। ছোটবেলায় সামাজিক সচেতনতার শিক্ষা ছাড়াও স্কুলের পাঠ্যসূচি সব জাপানিকেই পরিচ্ছন্ন হতে উদ্বুদ্ধ করে। তা ছাড়া, নিজেদেরই যেহেতু পরিষ্কার করতে হয় তাই জাপানি শিক্ষার্থীরা পারতপক্ষে তাদের স্কুল প্রাঙ্গণে ময়লা-আবর্জনা ছড়ায় না।

একজন ফ্রিল্যান্স অনুবাদক শিকা হায়াসি বলেন, স্কুলে প্রায় সময়ই এই ধরনের পরিচ্ছন্নতার কাজে অংশ নিতে আমার ইচ্ছা হতো না। কিন্তু পরিচ্ছন্নতা আমাদের রুটিনের অংশ হওয়ায় এই কাজ আমাদের করতেই হতো। এখন আমি মনে করি, স্কুলের পরিচ্ছন্নতা শিক্ষা খুব প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। কারণ নিজেদের জিনিসপত্র এবং আশপাশ পরিষ্কার রাখতে আমাদের দায়িত্ববোধকে জাগ্রত করে স্কুলগুলোই। স্কুলে এসেই জাপানি শিক্ষার্থীরা তাদের জুতাগুলো একটি লকারে ঢুকিয়ে রাখে এবং ক্লাসে ব্যবহারের জুতা পরে নেয়।

এমনকি তারা যখন বাড়িতে ফেরে তখনো রাস্তা দিয়ে হাঁটার জুতাগুলো ঘরের বাইরে রেখে ভেতরে প্রবেশ করে এবং ভেতরে চলাচলের জন্য আলাদা জুতা পরে। পরিবার এবং স্কুল থেকে পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা নিয়ে জাপানি শিশুরা বড় হতে থাকে। পরে তারা এই জ্ঞান স্কুল এবং বাড়ির গণ্ডি পেরিয়ে নিজের শহর এবং নিজের দেশের পরিচ্ছন্নতায় কাজে লাগায়।

জাপানিদের দৈনন্দিন জীবনের মধ্যেই পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস লুকিয়ে আছে। উদাহরণস্বরূপ, সকাল ৮টার মধ্যেই জাপানি অফিসকর্মী এবং দোকান কর্মচারীরা তাদের কর্মক্ষেত্রের পাশাপাশি আশপাশের রাস্তাগুলোও ঝকঝকে তকতকে করে ফেলেন। শিশুরা প্রতি মাসে নিজেদের এলাকা ছাড়াও স্কুলের আশপাশের রাস্তাগুলোতে ময়লা সংগ্রহের জন্য অভিযান চালায়।

এমনকি চোখের সামনে পড়লে জাপানিরা পাশের বাড়ির ময়লা পরিষ্কার করতেও দ্বিধা করেন না। রাস্তাঘাট পরিষ্কার করতে তাদের খুব বেশি শ্রমও দিতে হয় না। কারণ এসব জায়গায় চোখে পড়ার মতো ময়লা নেই বললেই চলে। প্রত্যেক জাপানি তাদের সঙ্গে নিজেদের ময়লা সংগ্রহের জন্য একটি ব্যাগ রাখেন। সারা দিনের কাজ শেষে তাদের ব্যবহূত বিভিন্ন উচ্ছিষ্ট তারা ওই ব্যাগে করে বাড়িতে নিয়ে যান।

জাপানিদের পরিচ্ছন্নতার আরও একটি নজির দেখা যায় তাদের এটিএম বুথগুলোতে। কেউ যদি কার্ড ব্যবহার করে এসব বুথ থেকে টাকা তোলেন তবে এটিএম মেশিনের ভেতর থেকে একদম কড়কড়ে নতুন নোট বেরিয়ে আসে। দেখলে মনে, হবে এই টাকাগুলো একেবারেই নতুন। কিন্তু পুরো জাপান চষে বেড়ালেও কোনো ময়লাযুক্ত টাকা বা মুদ্রা চোখে পড়বে না। তাদের মুদ্রাগুলো সবসময় নতুনের মতোই থাকে।

এছাড়াও তারা সরাসরি কারো হাতে মুদ্রা হস্তান্তর করেন না। কোনো জাপানি দোকান, হোটেল কিংবা ট্যাক্সিতে পাওনা পরিশোধের সময় নির্ধারিত টাকা একটি ট্রের মধ্যে রাখা হয়। এই ট্রে থেকেই পাওনাদার তার অর্থ বুঝে নেন।

  • বায়ুদূষণের ফলে সতর্কবার্তা জারি করে যেসব দেশ
    ভারতের দিল্লি, মুম্বাই, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, চীনের বেইজিং শহরে বায়ুর মান খুবই অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় পৌঁছে গেলে সেসব দেশের সরকার বিশেষ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা জারি করে। নাগরিকদের বায়ুদূষণ থেকে রক্ষা পেতে নানা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, বায়ুদূষণের ফলে প্রতি বছর আনুমানিক প্রায় ৪,০০,০০০ ইউরোপীয় নাগরিক অকালে প্রাণ হারায়। এর মধ্যে শুধুমাত্র যুক্তরাজ্যেই প্রাণ হারায় প্রায় ৪০ হাজার জন। এছাড়া যুক্তরাজ্য প্রতিনিয়ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক নির্ধারিত বায়ুদূষণের সীমা লঙ্ঘন করে যাচ্ছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডের বিবেচনাতেও অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।

লন্ডন এ বছর মাত্র এক মাসে তার দূষণের নির্ধারিত বৈধ সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে। আরেক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত মে মাসে একটি অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে যে, ইতোমধ্যেই ইংল্যান্ডের ৩০টি শহর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত দূষণ সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে। এর মধ্যে ম্যানচেস্টার, সোয়ানসি, লাইচেস্টার এবং নিউ ইয়র্কের মতো শহরও রয়েছে।

বায়ুদূষণের ফলে শুধু ফুসফুসকেন্দ্রিক রোগ বিস্তার লাভ করতে পারে এমনটি নয়, এর মাধ্যমে হূদরোগ, স্ট্রোক এবং ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের মতো মারাত্মক রোগও ছড়িয়ে পড়তে পারে। পাশাপাশি অনেক ছোটখাটো রোগবালাই, যেমন— প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে মানসিক অবসাদ এবং শিশুদের মধ্যে অ্যাজমার মতো রোগ ছড়িয়ে দিতে পারে। আমরা মোটামুটি সবাই জানি যে, বায়ুদূষণ অকাল গর্ভপাতের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।

সমপ্রতি এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, যদি কোনো নারী বায়ুদূষণে আক্রান্ত হন, তাহলে তার গর্ভে থাকা সন্তানটিও এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

পাশাপাশি গত মাসে আরেক গবেষণায় জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের শিশুরা স্কুল গমনের সময় যানবাহনের ডিজেল চালিত ইঞ্জিন থেকে নির্গত ক্ষতিকর কালো কার্বন গ্যাস দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে, এমনকি ক্লাসরুম ও খেলার মাঠেও তারা দূষিত বায়ু দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শিশুদের স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দিচ্ছে।

  • বায়ুদূষণ এড়ানো যায় যেভাবে
    দূষিত রাস্তা এড়িয়ে চলুন : আপনার যদি বিকল্প কোনো রাস্তা থাকে, তাহলে আপনি রাস্তা পরিবর্তন করে সেই রাস্তায় প্রবেশ করুন, এর দ্বারা আপনি বায়ুদূষণ কমিয়ে আনতে বড় ভূমিকা পালন করতে পারবেন। বায়ুদূষণ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ইম্পেরিয়াল কলেজে দেয়া এক ভাষণে বিশিষ্ট পরিবেশবিদ আদ্রে ডি নাজেলি এই পরামর্শটি দেন।

গত বছর লন্ডনের কিংস কলেজ কর্তৃক এক গবেষণায় দেখা যায়, সচেতনতা সহকারে রাস্তার ব্যবহার করলে এবং এক পার্শ্ব দিয়ে পথচারীরা চলাচল করলে প্রায় ৫৩ শতাংশ বায়ুদূষণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই সফলতা প্রায় ৬০ শতাংশে উন্নীত করা যেতে পারে।

এ বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অফ সারের ‘ গ্লোবাল সেন্টার ফর ক্লিন এয়ার রিসার্চ’-এর পরিচালক প্রশান্ত কুমার বলেন, আপনি বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে একটি সূচকীয় হ্রাস ঘটাতে পারেন। যারা রাস্তার মাত্র কয়েক মিটার মধ্যে বসবাস করছেন তারা এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে পারেন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সেই জায়গা পরিবর্তন করে অন্য জায়গায় চলে যেতে পারেন। যারা ৫০ থেকে ৬০ মিটারের মধ্যে বসবাস করছেন তাদের বিষয়টি দূষণকারী বিষয়ের উপর নির্ভর করছে। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তারা তাদের পরিবেশের কমপক্ষে অর্ধেক বায়ুদূষণ কমিয়ে আনতে পারেন।

রাস্তার পাশের উঁচু উঁচু ভবনগুলো পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে তুলছে। এসব শহুরে গিরিখাত যেন দূষণকারীদের জন্য একেকটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই যে, গাছ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সকল প্রকার দূষণ প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করতে পারবে। এ জন্য আমাদেরকেও সচেতন হতে হবে। লম্বা গাছগুলো তাদের শীর্ষগুলো একত্রিত করে আমাদের বায়ুদূষণ থেকে নিরাপত্তা প্রদান করতে পারে, বিশেষত তারা যদি কোনো উঁচু ভবনের পাশে অবস্থিত হয়।

আর গাছগুলো যদি নিচু প্রকৃতির হয় সেক্ষেত্রে প্রশান্ত কুমার বলেন, এসব নিচু গাছ দূষণকারী যানবাহন ও পথচারীদের মধ্যখানে নিরাপত্তা ঢাল হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারে।

অ্যাপের ব্যবহার : বায়ুদূষণ রোধে অ্যাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এ বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটনের বায়ুদূষণ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্রফেসর স্টিফেন হলগেট বলেন, বায়ুদূষণ রোধে অ্যাপের ব্যবহার খুব ভালো একটি উপায় এবং দিন দিন তা আরও উন্নতি সাধন করবে।

যেসকল শহরের অ্যাপে নিয়মিত সঠিকভাবে বায়ুদূষণ সম্পর্কে আপডেট দেয়া হচ্ছে— বায়ুদূষণ কী তা গ্রাহকদের জানানো হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে তারা কী ভূমিকা পালন করতে পারে তা তুলে ধরা হচ্ছে, সেসব জায়গায় সত্যিকার অর্থেই অ্যাপ অনেক ভালো ভূমিকা পালন করতে পারছে। কিংস কলেজ কর্তৃক ‘লন্ডন এয়ার’ নামে একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে, সেখানে দেখানো হয় সমগ্র শহরের কোথায়, কখন, কী পরিমাণে বায়ুদূষণ হচ্ছে।

এই অ্যাপটি খুব দ্রুত সময়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। হটগেট আরও উল্লেখ করেন, এটি ক্রমবর্ধমান বিশ্ববাজারে একটি ব্যক্তিগত সেন্সর আকারে কাজ করতে পারে। যখন এই অ্যাপটি আপনার ফোনে ইনস্টল করা থাকবে, তখন আপনি দূষণকারী পণ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।

যেমন— নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড ও এ ধরনের ক্ষতিকর গ্যাস সমৃদ্ধ পণ্য এড়িয়ে চলতে পারবেন। এছাড়া বিজ্ঞানীগণ ও বিভিন্ন সংস্থা, যেমন— দ্য ডিপার্টমেন্ট ফর এনভায়রনমেন্ট, ফুড অ্যান্ড রুরাল অ্যাফেয়ার্স এবং ইউএস এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি ইত্যাদি সংস্থা বর্তমানে নিজেদের মধ্যে অ্যাপের মাধ্যমে সতর্কতা বৃদ্ধি করছে।

যদিও এ বিষয়ে তাদের প্রস্তুতি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ফলে তাদের পরিমাপ পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য নয়। সর্বোপরি, আগামী দিনগুলোতে অ্যাপের ব্যবহার বায়ুদূষণ রোধে বড় ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

  • ভিড়ের মধ্যে শরীরচর্চা থেকে বিরত থাকুন : পরিবেশবিদ আদ্রে ডি নাজেলি বলেন, যুক্তরাজ্যে, এমনকি আমাদের মধ্যেও অনেক সময় অবৈধভাবে তীব্র বায়ুদূষণ করার প্রবণতা রয়েছে। শরীরচর্চার মাধ্যমে আমরা এসব দূষণের ক্ষতিকর দিককে অতিক্রম করে যেতে পারি। তাত্ত্বিকভাবে চিন্তা করলে, এটা সহজেই বোঝা যায় যে, শরীরচর্চা বায়ুদূষণের ক্ষতিকর দিক থেকে আমাদের অনেক নিরাপদ রাখতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, শরীরচর্চার নানা উপকারী দিক রয়েছে। তবে বায়ুদূষণ থেকে শরীরকে মুক্ত রাখা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার প্রধান প্রক্রিয়া, যা আপনার শারীরিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে। শরীরচর্চার মাধ্যমে আপনি আপনার শরীর থেকে বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব অতিক্রম করতে পারবেন নিশ্চিত— তবে এটি প্রমাণ করে দেখানো বেশ কঠিন কাজ যে, এভাবে এভাবে এই প্রক্রিয়াটি কাজ করবে।

বায়ুদূষণ যখন তীব্র আকার ধারণ করেছে, সেই পরিস্থিতিকে সামনে রেখে ডি নাজেলি বলেন, এটি বলা খুব মুশকিল যে, বড় বড় রাস্তায় একাকী দৌড়ানোর মধ্যে বিশেষ কোনো লাভ আছে, এ বিষয় সত্যিকার অর্থেই আমাদের কোনো তথ্য জানা নেই। আপনি যদি যুবক হোন অথবা বৃদ্ধ হোন অথবা হূদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি হোন, অথবা কোনো স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মধ্যে থাকেন— তাহলে সম্ভবত দিনের বেলায় উচ্চমাত্রার দূষিত পরিবেশে শরীরচর্চা করার চেয়ে ঘরে বসে সময় কাটানোই উত্তম কাজ।

তিনি আরও বলেন, যদি বলা হয়, সারা দিনের মধ্যে শরীরচর্চা করার জন্য সর্বোত্তম সময় কোনটি? আমি বলবো, ভিড়ের সময় এড়িয়ে চলুন। অর্থাৎ ভিড় তৈরি হওয়ার আগে অথবা ভিড় শেষ হওয়ার পর আপনি শারীরচর্চা করুন। এ জন্য সম্ভবত একেবারে সকাল বেলা উত্তম সময় হতে পারে। ডি নাজেলির এসব পরামর্শ খুব গুরুত্বপূর্ণ।

  • ঘরের মধ্যে মাস্ক পরিহার করুন : প্রফেসর স্টিফেন হলগেট বলেন, অধিকাংশ মাস্ক ছিদ্রযুক্ত, এতে সভজেই ধুলোবালি প্রবেশ করতে পারে। এগুলো আসলে কোনো কাজ করে না। তিনি এ বিষয়ে সকলকে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন। অনেকে আবার খুব টাইট মাস্ক ব্যবহার করেন, তিনি তা-ও পরিহার করার পরামর্শ দেন, অধিকাংশ মানুষ মাস্ক পরিধান করার পর অস্বস্তি অনুভব করে, মূলত এদের সহ্য ক্ষমতা বেশ কম। বাইরে মাস্ক পরিধান করার পরামর্শ থাকলেও, ঘরের মধ্যে মাস্ক না পরার পরামর্শ দিচ্ছেন গবেষকরা।

এডিনবার্গের ইনস্টিটিউট অব অকুপেশনাল মেডিসিন ও আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বেইজিংয়ের ভোক্তাদের মধ্যে মোট নয় ধরনের মাস্কের ব্যবহার রয়েছে, যেখানে বায়ুদূষণের পরিমাণ বেশ মারাত্মক পর্যায়ে রয়েছে। সেখানে কাজের সময় ব্যবহূত মাস্কগুলোতে ৩-৬৮ শতাংশ পর্যন্ত এবং অন্যান্য সময় ব্যবহূত মাস্কগুলোতে ৭-৬৬ শতাংশ পর্যন্ত ছিদ্র দেখতে পাওয়া যায়। বায়ুদূষণ থেকে মুক্ত থাকার জন্য আরও নিরাপদ মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। পাশাপাশি ঘরের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত। এ জন্য ঘরের পরিবেশও বায়ুদূষণমুক্ত রাখা উচিত।

  • স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করুন : এ বিষয়ে ক্রমবর্ধমান প্রমাণ আমাদের হাতে আছে যে, ভালো খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বাস্থ্যের উপর আরোপিত বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব প্রশমিত করতে পারি। এ বছরের শুরুর দিকে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিন থেকে প্রকাশিত এক গবেষণায় পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষের উপরে গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের মানুষের খাদ্যাভ্যাসের উপর বায়ুদূষণের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রয়েছে। এর দ্বারা বোঝা যায়, যখন আমরা বায়ুদূষণের প্রভাব কমিয়ে আনতে চাইবো, তখন আমাদের এমন সব খাদ্য গ্রহণ করতে হবে যা আমাদের হূদরোগ ও অন্যান্য প্রাণঘাতী সঙ্কট থেকে রক্ষা করবে।

আপনার শিশুর প্যাম বা পুস— চেয়ার সবসময় ঢেকে রাখুন : এ বছর প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুদূষণের প্রভাব বড়দের তুলনায় নবজাতক ও শিশুদের উপর প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি।

এ বিষয়ে প্রশান্ত কুমার বলেন, এ গবেষণা যারা চালিয়েছে, তারা উঁচুতে বসবাসরত শিশু- অর্থাৎ যারা প্যামে (শিশু লালন-পালনের উপযোগী ভাঁজ করা যায় এমন চেয়ার) করে চলাচল করে তাদের নিয়ে কাজ করেছে, যা শিশুদেরকে মাটি থেকে তাদের প্রায় এক মিটার উচ্চতায় রাখে। কিন্তু যারা এক মিটারের নিচে বসবাস করে, গাড়ির হর্ন ও যানবাহনের আওয়াজ তাদের অতিষ্ঠ করে তোলে। আপনি এই বিষয়গুলো বিবেচনায় না নিলে এ থেকে উত্তরণের কোনো যথার্থ উপায় খুঁজে পাবেন না।

তিনি আরও বলেন— শিশুদের নিরাপত্তা পদ্ধতি এখনো পর্যাপ্ত উন্নত নয়। পাশাপাশি শিশুরা বড়দের নেতিবাচক প্রভাব থেকেও মুক্ত নয়। গবেষকগণ সমপ্রতি বিভিন্ন ধরনের প্র্যামের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে দেখছেন, কোন ধরনের প্র্যাম শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য অধিকতর ভালো হয়। এ জন্য তারা পিছনমুখী ও সম্মুখমুখী উভয় ধরনের প্র্যাম পরীক্ষা করে দেখছেন।

কিন্তু প্রশান্ত কুমার এসবের চেয়ে ব্যস্ত সড়কে শিশুদের প্যামের উপরে একটি পাতলা পর্দা ব্যবহারের প্রতি অধিক পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এতে ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমে আসবে বলে তার ধারণা, তবে এতেও ক্ষতি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হবে না।