Mon. Apr 21st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
খােলাবাজার২৪,শনিবার,১১জানুয়ারি,২০২০ঃ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পাঁচটি বিভাগের একটি হলো ট্রাফিক বিভাগ। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তীব্র শব্দদূষণে এ বিভাগের ১১ দশমিক ৮ শতাংশ সদস্যের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘তীব্র শব্দদূষণের কবলে ঢাকাবাসী’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে শব্দদূষণের বিষয়ে বেশকিছু তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন বাপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাপার নির্বাহী সহসভাপতি ডা. মো. আব্দুল মতিন ও সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মাদ আলী নকী, পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী। আরও উপস্থিত ছিলেন বাপার নির্বাহী সদস্য ইবনুল সাইদ রানা এবং জাতীয় কমিটির সদস্য তোফায়েল আহমেদ।

গবেষণা জরিপে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকার ১১০ জন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য অংশ নেন। এলাকাগুলো হলো ধানমন্ডি, সায়েন্সল্যাব, মহাখালী, যাত্রাবাড়ী, শাহবাগ ও মতিঝিল। ২০১৮ সালের ১ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ জরিপ চালানো হয়।

জরিপ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, শব্দদূষণে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশ জানায়, সাধারণভাবে মোবাইলে কথা শুনতে তাদের অসুবিধা হয়। ১৯ দশমিক ১ ভাগ ট্রাফিক পুলিশ জানায়, ঘরের অন্য সদস্যদের তুলনায় বেশি ভলিউম দিয়ে তাদের টিভি দেখতে হয়। আর ৩৩ দশমিক ৯ ভাগ ট্রাফিক পুলিশ জানায়, অন্যরা উচ্চস্বরে কথা না বললে তাদের কথা শুনতে কষ্ট হয়। এদিকে ৮ দশমিক ২ ভাগ ট্রাফিক পুলিশ জানায়, কয়েক ঘণ্টা দায়িত্ব পালনের পর তারা ঘূর্ণিরোগ, মাথা ভনভন করা, বমি বমি ভাব ও ক্লান্তির সমস্যায় ভোগেন।

বাপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, শব্দদূষণের ফলে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। কিন্তু দায়িত্ব ছেড়ে কোথাও যেতে পারেন না। দেশে শব্দদূষণের ৮০ ভাগ হয় যানবাহন থেকে। এ কারণেই ট্রাফিক পুলিশদের নিয়ে আমরা গবেষণাটি করেছি।

জরিপে বলা হয়, শব্দদূষণের কারণে আগামী প্রজন্ম মানসিক ও শারীরিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শ্রবণশক্তি হ্রাস, বধিরতা, হূদরোগ, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বিঘ্ন হওয়াসহ নানা রকম সমস্যা দেখা যায়। স্বল্পমেয়াদি শব্দদূষণ মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। দীর্ঘমেয়াদি শব্দদূষণ শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত করে। শ্রবণশক্তি হ্রাসের ফলে বিরক্তি, নেতিবাচকতা, রাগ, ক্লান্তি, চাপা উত্তেজনা, মানসিক চাপ, বিষণ্নতা, সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিহার, ব্যক্তিগত ঝুঁকি বাড়ায় এবং স্মৃতিশক্তি ও নতুন কিছু শেখার ক্ষমতা হ্রাস পায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৩ সালের গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের শ্রবণশক্তি লোপ পেয়েছে, যার মধ্যে ২৬ শতাংশই শিশু। পরিবেশ অধিদপ্তরের দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে শব্দের মাত্রা পরিমাণবিষয়ক একটি জরিপ করে দেখা গেছে, সব স্থানেই শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম করেছে।

গত ১৭ ডিসেম্বর সচিবালয় এলাকাকে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়। এ ঘোষণার পরও সচিবালয় এলাকায় হর্ন বাজানো হচ্ছে। ক্যাপসের গবেষণা দল ঢাকা শহরে ৭০টি এলাকায় শব্দদূষণ জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। গবেষণায় দেখা যায়, নীরব, আবাসিক ও মিশ্র এলাকার ক্ষেত্রে শব্দের মাত্রা শতভাগ সময় আদর্শ মানের উপরে ছিল (নীরব এলাকার আদর্শমান ৫০ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকার আদর্শমান ৫৫ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকার আদর্শমান ৬০ ডেসিবেল)। ঢাকা শহরের পাশাপাশি অন্যান্য শহরে শব্দদূষণের ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনছে। এ সঙ্কট থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারে এজন্য কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তুলে ধরেছে তারা।