Sun. Apr 20th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার২৪,রবিবার,১২জানুয়ারি,২০২০ঃ মুসলিম উম্মাহর দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি এবং দেশের কল্যাণ কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে রোববার (১২ জানুয়ারি) শেষ হলো তাবলিগ জামাতের সবচেয়ে বড় আয়োজন বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব।

৫৫তম এ বিশ্ব ইজতেমায় বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এ আখেরি মোনাজাতে আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দু’হাত তুলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে রহমত প্রার্থনা করা হয়।

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশের দুই সহস্রাধিক প্রতিনিধিসহ লাখো লাখো মুসল্লি এ মোনাজাতে অংশ নেয়। বাদ যাননি রাজনীতিবিদরাও। গাজীপুর সিটি করপোরেশন মেয়র অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরশেনের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামকে এতে অংশ নিতে দেখা যায়।

মোনাজাত পরিচালনা করেন বাংলাদেশের তাবলীগের প্রধান মারকাজ কাকরাইলের মুরুব্বী হাফেজ মাওলানা জোবায়ের আহমদ।

রোববার সকালে দিক-নির্দেশনামূলক বয়ানের পর লাখ লাখ মানুষের প্রতীক্ষার অবসান ঘটে বেলা ১১টা ৮ মিনিটে। জনসমুদ্রে হঠাৎ নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। যে যেখানে ছিলেন সেখানে দাঁড়িয়েই কিংবা বসে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। কান্নায় বুক ভাসান তারা।

৩৮ মিনিটব্যাপী মোনাজাতে মাওলানা জোবায়ের আহমেদ প্রথম ১৮ মিনিট মূলত পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো পাঠ করেন। শেষ ২০ মিনিট দোয়া করেন বাংলা ভাষায়।

আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী, গাজীপুর, উত্তরাসহ চারপাশের এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, মার্কেট, বিপণিবিতান, অফিসসহ সবকিছু ছিল বন্ধ। ৪ দিন বিরতি দিয়ে আগামি ১৭ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। ১৯ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এ বছরের বিশ্ব ইজতেমা।

এর আগে সকালে চার দিক থেকে লাখ লাখ মুসল্লি পায়ে হেঁটেই টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা স্থলে পৌঁছেন। সকাল ৯টার আগেই ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে মুসল্লিরা মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলি-গলি, বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নেন।

ইজতেমাস্থলে পৌঁছাতে না পেরে কয়েক লাখ মানুষ কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন। রোববার ভোর থেকেই  ফজরের নামাজ ও আখেরি মোনাজাতের জন্য পুরনো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন বিছিয়ে বসে পড়েন।

এছাড়াও পার্শ্ববর্তী বাসা-বাড়ি-কলকারখানা-অফিস- দোকান ও যানবাহনের ছাঁদে এবং তুরাগ নদীতে নৌকায় মুসল্লিরা অবস্থান নেন। যে দিকেই চোখ যায় সে দিকেই দেখা যায় শুধু টুপি-পাঞ্জাবি পড়া মানুষ। সবাই অপেক্ষায় আছেন কখন শুরু হবে সেই কাঙ্খিত আখেরি মোনাজাত। ইজতেমাস্থলের চারপাশের ৩-৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।

এরও আগে সকালে বাদ ফজর ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে হেদায়েতি বয়ান পেশ করেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক। আখেরি মোনাজাতের আগে বিশেষ বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইবরাহিম দেওলা।

ইজতেমার প্রথম পর্বে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চাঁদ, ইথিওপিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, পাকিস্তান, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্তান, খিরকিজস্তান, মালয়েশিয়া, মরক্কো, নেপাল, কেনিয়া, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, জর্দান, দুবাইসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসল্লিরা অংশ নিয়েছিলেন।

বিভিন্ন ভাষা-ভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ইজতেমা ময়দানে বিদেশি মেহমানদের ভিন্ন ভিন্ন তাঁবু নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়।

আগামি ১৭ জানুয়ারি বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়ে ১৯ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে তাবলীগ জামায়াতের বৃহত্তম এ আয়োজন।