Tue. Jun 10th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার২৪,বুধবার,২২জানুয়ারি,২০২০ঃ ঢাকা উত্তর সিটির ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে  বাংলাদেশ  আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন দুইবারের কাউন্সিলর নূরুল ইসলাম রতন। এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সভাপতি সলিমুল্লাহ সলু। যিনি নুরুল ইসলাম রতনের স্ত্রীর আপন  ভাই। লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে।

সলিমুল্লাহ সলু কিশোর বয়সেই প্রথম মামলার আসামি হয়েছিলেন। ডাকাতি করে ধরা খেয়ে গণপিটুনির মুখে পড়েছিলেন। অস্ত্র ও ডাকাতির সেই মামলায় সামরিক আদালতের রায়ে তিন বছর সাজা ভোগ করেন। তারুণ্যেই ‘বখে’ যাওয়া সলু বাকী জীবনেও বদলাতে পারেননি নিজেকে। হয়েছেন কমপক্ষে দুই ডজন মামলার আসামি। জামা-কাপড়ের মতোই সুযোগ বুঝেই পলিটিক্যাল জার্সি বদল করেছেন।

বিএনপির সমর্থনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর যেমন হয়েছিলেন আবার আওয়ামী লেবাস গায়ে এঁটে  বড় বোনের জামাইয়ের হাতে ধরাশায়ীও হয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের ওয়ার্ড কমিটির ‘কর্ণধার’ পরিচয়ে দিনের পর দিন দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। টিক্কিটিও স্পর্শ করতে পারেনি কেউ ।

শালা-দুলাভাইয়ের লড়াইটা এখানে দীর্ঘ দিনের । গত নির্বাচনেও  ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে শ্যালকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতেছেন দুলাভাই নুরুল ইসলাম রতন । সলিমউল্লাহ সলু ঘুড়ি প্রতীকে ভোট পেয়েছিলেন  চার হাজার ৮৭২ টি। রতন ঠেলাগাড়ি প্রতীকে লড়ে জিতেছেন সাত হাজার ৫৭০ ভোট পেয়ে । এবারো দুজনই আগের মার্কা নিয়েই নির্বাচনী মাঠে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ।
অভিযোগ রয়েছে  ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি  সলিমুল্লাহ সলু  যুবদল থেকে অনুপ্রবেশকারী । দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশ ও আদেশ অমান্য করে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের নিয়ে এবং বিএনপির সাথে আঁতাত করে শুধু নিজে প্রার্থী হিসেবে অংশই নিচ্ছেন না , বরং দলীয় মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধেও গোপনে প্রচার প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন ।

নুরুল ইসলাম রতন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সলু এক সময় যুবদল করতেন, তিনি ২০১৫ সালে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে আওয়ামী লীগে ঢুকে গেছেন ।’ সলিমুল্লাহ সলু  নয় বছর দেশ ছেড়ে পালিয়ে ছিল , যে কিনা  গত ১৭/১৮ বছরে আওয়ামী লীগের কোন অনুষ্ঠানে ছিল না, তার মতো লোক কিভাবে নমিনেশন পায় বলুন ? নমিনেশন না পেয়ে সে খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে তার আসল রাজনৈতিক মতের প্রতিফলন ঘটাচ্ছে   ‘ ।

আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী  নুরুল ইসলাম রতন আরো  অভিযোগ করেন , প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সলিমুল্লাহ সলু তার  বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তিনি ভাড়াটে লোকজন নিয়ে প্রচারণায় নামা কর্মী-সমর্থকদের নানা ভয়ভীতিও  দেখাচ্ছেন।

ডিশলাইনের মাসিক ভাড়া ৩০০টাকার স্থলে ১০০টাকা করার ঘোষণা দিয়ে সলিমুল্লাহ সলু অবাঙ্গালীদের ক্ষেপিয়ে তুলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে । এব্যাপারে নুরুল ইসলাম রতন বলেন , ‘ ডিশ লাইনের ব্যবসায় সরকার নির্ধারিত বা তাদের সংগঠন নির্ধারিত মাসিক ভাড়া রয়েছে , এতে একজন কাউন্সিলরের কোন হাত থাকে না , কিন্তু সলু রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে অপপ্রচার চালিয়ে অবাঙ্গালীদের ডিশ বিল দিতে মানা করেছে , এতে করে ব্যবসায়ীরা এক দিকে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অন্যদিকে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে’ ।

স্থানীয় বাসিন্দারা সাবেক কাউন্সিলর ও আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী  সলিমুল্লাহ সলুর নামে বিস্তর অভিযোগ করেছেন। তারা জানান, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি ঘুরে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া সলু ছিল একসময় সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্য। তুরাগ নদ ও বেড়িবাঁধ এলাকায় নৌকা ও গাড়িতে ডাকাতি করতেন তিনি। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের তালিকাতেও সন্ত্রাসী হিসেবে সলুর নাম রয়েছে। হত্যা, নারী নির্যাতন, দখল, চাঁদাবাজি, অস্ত্র আইনসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ২৪টির বেশি মামলা আছে তার নামে। ১৯৭৮ সালে বিজলী মহল্লার একটি বাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়ে আটক হয়ে গণপিটুনির শিকার হন সলু। পরে সামরিক আদালতে তিন বছর সাজা হয় তার। সাজা ভোগের পর রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করেন সলু। ওই সময় আবুল, হাসু, ‘কাইল্যা’, কাশেমসহ কয়েকজনকে নিয়ে দখল ও চাঁদাবাজির একটি বিশেষ বাহিনী গড়ে তোলেন তিনি। ওই বাহিনী দিয়ে সাধারণ মানুষের সম্পত্তি, খাসজমি, খাল ও জলাধার দখল করে এখন বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক সলু। মোহাম্মদপুর এলাকায় নামে-বেনামে তার অর্ধশত বাড়ি রয়েছে। যার অধিকাংশই অবৈধ দখল করা। অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন সলু। বিএনপি নেতা বাবুল, ছাত্রদল নেতা সজল, ওয়ার্ড কমিশনার শাহাবুদ্দিন, যুবলীগ নেতা ইউনুস, ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি জামান খুন ও ৪৪ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার রাজু হত্যা মামলার আসামি এই সলু।

সলুর নির্বাচনে অংশগ্রহণে এলাকার আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের মাঝে প্রবল ভয়ভীতি বিরাজ করছে । নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওয়ার্ড কমিটির এক নেতা বলেন , সলিমুল্লাহ সলুর মতন সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই স্থানীয় আওয়ামী পরিবারগুলোকে কোণঠাসা করে রেখেছে , আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলে সবাইকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন এই সলু’ ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সলিম উল্লাহ সলু  বলেন, সবগুলো হত্যা মামলার অভিযোগ থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এখন দুটি মামলা চলমান। যেগুলো তিনি আইনিভাবে মোকাবিলা করছেন ।

দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে সলু বলেন ,”আমি সলিমুল্লাহ সলুর দল লাগে না , আমি দাঁড়ালেই দল হয়ে যায় । আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিলে তখন দেখা যাবে’ ।