পারভেজ লিমন নামে নড়াইলের একজন বলেন, আমার বাড়িতে যতগুলো নারকেল গাছ আছে সবগুলোর পাতা সাদা হয়ে গেছে। আগে কখনো এমন দেখিনি।
হাবিবুল্লাহ নামে চুয়াডাঙ্গার একজন বলেন, পাতার উপর সাদা রঙের কিছু একটা পড়েছে মনে হচ্ছে। এক কাছ থেকে খেয়াল করলে পোকাও দেখা যাচ্ছে কোনো কোনো পাতায়।
সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে বিষয়টি নিয়ে। করোনা ভাইরাসের আতঙ্কের সঙ্গে কেউ কেউ এটাকে মিলিয়ে ফেলছেন। কেউ কেউ ছড়াচ্ছেন গুজব।
রহমতুল্লাহ নামে একজন লিখেছেন, পৃথিবীর ওপর আল্লাহর গজব পড়েছে। করোনা ভাইরাসের মধ্যে আবার গাছের পাতা সাদা হয়ে যাচ্ছে!
শুধু বাংলাদেশেই নয়, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায়ও এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
পরীক্ষা করলে দেখা যায় গাছের পাতার নীচে সাদা মোমের মতো অংশ। যদিও উদ্ভিদ ও কৃষিবিজ্ঞানীরা বলছেন, একটি একটি কীটের আক্রমণ।
পশ্চিমবঙ্গের কৃষিবিজ্ঞানীরা জানান, নারকেল বা অন্য কোনও গাছের পাতা হঠাৎ সাদা হয়ে যাওয়ায় আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। এটি রুগোজ স্পাইরালিং হোয়াইট ফ্লাই নামে একটি কীটের আক্রমণে হচ্ছে। কীটটির বিজ্ঞানসম্মত নাম ‘অলিওরোডিকাস রুগিওপারকুলেটাস’। ২০০৪ সালে মধ্য আমেরিকার বিভিন্ন দেশে নারকেল গাছে এর প্রকোপ দেখা গিয়েছিল। ২০১৬ সালে ভারতে প্রথম তামিলনাড়ুতে এর আক্রমণ দেখা যায়। এর পর পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দকুমার ও মহিষাদলে এই কীটের দেখা মিলেছে। নারকেল ছাড়াও আম, জামরুল, সপেদা, কাঁঠাল-সহ ৩৫টি গাছে এই কীট বাসা বাঁধে।
মাছির মতো দেখতে হলেও মাছির থেকে বেশ বড় এই কীটগুলি। পূর্ণাঙ্গ মাছির ডানায় এক জোড়া হালকা বাদামি বিন্দু থাকে। পাতার নীচে স্ত্রী মাছিগুলি চক্রাকারে প্রায় ২০০টি ডিম পাড়ে। এর পর তুলোর মতো আঁঠাল আস্তরণ দিয়ে ডিমগুলিকে ঢেকে দেয়। ডিম থেকে পূর্ণাঙ্গ মাছিতে পরিণত হতে প্রায় ১ মাস সময় লাগে।
কৃষিবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই পোকার আক্রমণে গাছের ব্যাপক ক্ষতি হতে থাকে। এই কীটের নিম্ফ গাছের পাতার রস চুষে খেতে থাকে। যার ফলে পাতা শুকিয়ে যায়। তাছাড়া এই পোকার মুখ থেকে এক রকম মিষ্টি রস নিঃসরণ হয়। যাতে শুটি মোল্ড ছত্রাকের আক্রমণ ঘটে। এর ফলে পাতা কালো হয়ে যায়। রাতে এই কীটের আক্রমণে প্রভাবিত পাতায় আলো পড়লে চকচক করে। এই পোকার তৈরি তুলোর মতো আঁঠালো পদার্থটি আলোর খুব ভাল প্রতিফলন ঘটায়। ফলে পাতা সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে না এবং গাছটি ধীরে ধীরে শুকিয়ে মারা যায়।
রাসায়নিক কীটনাশকে এই পোকা ধ্বংস করা সম্ভব নয় তার পরিবর্তে জৈব কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। সেজন্য এনকারসিয়া নামে একটি বন্ধু পরজীবীকে ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। সেজন্য এনকার্সিয়ার ডিম সহ পাতা আক্রান্ত গাছে গুঁজে দিতে হবে। এছাড়া আইসেরিয়া ছত্রাক প্রতি লিটার জলে ৫ গ্রাম হিসাবে আঁঠা দিয়ে গুলে সন্ধ্যায় স্প্রে করতে হবে। ১৫ দিন পর ফের একবার স্প্রে করতে হবে।