Tue. Apr 22nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার২৪,রবিবার ১৪ জুন, ২০২০:প্রথম দুবার পরীক্ষা করিয়েছিলেন নেহাত সন্দেহের বসে। সামান্য জ্বর ও সর্দি ছিল। পরে সেরে গেছে। কোভিড-১৯ ফলাফলও এসেছে নেগেটিভ। তবে দিন তিনেক আগে ফের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল এসেছে পজেটিভ। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর তখনই জানলেন করোনাভাইরাস ছুঁয়েছে তাঁকে। ওদিকে আগে থেকেই সহধর্মিনীর দেহে ছিল করোনার সংক্রমণ। তিনদিন আগের পরীক্ষার ফলাফল বলছে, ভাইরাসটি এখনো ছেড়ে যায়নি তাকে।

শনিবার রাতে ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপে এ বিষয়গুলো জানান সচিব নিজেই। বলেন, ‘মাঝে কিছুটা অসুস্থতা ছিল। তবে খুব দুর্বল হয়ে পড়িনি কখনো। হয়তো মনোবলের কারণেই। এখন অনেক ভালো অনুভব করছি। নিজের কাছে মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে পরীক্ষা করালে কোভিড নেগেটিভ আসবে।’

তাঁর সহধর্মিণী নাসরিন পারভীনের দেহে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত ২৫ মে। ঈদের দিন। সেই থেকে কোয়ারেন্টাইন মানছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব। তখন ঢাকাটাইমসকে সে কথা জানিয়েছিলেন তিনি। ওই সময় দুবার পরীক্ষাও করান। কিন্তু করোনার কোনো সংক্রমণ তার দেহে ছিল না।

সচিব আলী নূর বলেন, ‘গত তিনদিন আগে আমরা দুজনেই নমুনা পরীক্ষা করিয়েছিলাম। দুজনেরই পজিটিভ এসেছে। আমার স্ত্রী গত ২৫ মে আক্রান্ত হয়েছিল। শুরুতে বাসায় ছিল। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করাই। ওখানে কয়েকদিন থাকার পর ভালো হলে বাসায় নিয়ে আসি। বাসায় এনে চিকিৎসা চলছে। সে একটু বেশিই কষ্ট পেয়েছে। মাঝে তার অবস্থা বেশি খারাপ ছিল। তবে আমার শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়নি।’

তিনি জানান, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে বাসায় বসেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রয়োজনীয় ওষুধের কোর্সও শেষ দিকে।

আরও তিনদিন পর ফের নমুনা পরীক্ষা করাবেন জানিয়ে সচিব বলেন, ‘এখন শরীরিক অবস্থা অনেক ভালো অনুভব করছি। ইচ্ছে হচ্ছিল আজই (শনিবার) একবার নমুনা পরীক্ষা করি। কিন্তু পরে ভাবলাম আরও দুটি দিন যাক। কারণ কেবল তিনদিন হলো পজিটিভ এসেছে। এখন পরীক্ষায় হয়তো আসল চিত্রটি আসবে না। তিনদিন পর আমরা দুজনেই আমার নমুনা পরীক্ষা করাব বলে ঠিক করেছি। তখন নেগেটিভ আসলে বুঝতে পারব আমি করোনা থেকে মুক্ত।

শরীরে করোনার সংক্রমণ থাকলেও তা ভাবনায় আনছেন না। নিয়মিত দাপ্তরিক কাজে বাসায় থেকেই সময় দিচ্ছেন। মুঠোফোনে প্রয়োজনীয় দাপ্তারিক নির্দেশনা দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টদের। খোঁজ রাখছেন দেশের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর। কোথাও কোনো অসঙ্গতি বা প্রয়োজন মনে হলে নিজেই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ সচিব বলেন, ‘নিয়মিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে কথা হচ্ছে। তিনিও প্রতিদিন একবার করে আমার খোঁজ নিচ্ছেন। তিনি খুবই আন্তরিক মানুষ। বাসায় থাকলেও মানসিকভাবে সব সময় কাজের সঙ্গেই আছি।’

তিনি প্রত্যাশা করেন সুস্থ হয়ে দ্রুত অফিসে ফিরবেন। এজন্য তিনি নিজের ও সহধর্মিণীর জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব হিসেবে মো. আলী নূরের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এর আগে তিনি সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) মহাপরিচালক ছিলেন। প্রশাসনে চৌকস, মেধাবী ও দক্ষ প্রশাসক হিসেবে সুপরিচিত বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ৮ম ব্যাচের এই কর্মকর্তা।

তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। দিনাজপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার হিসেবে। পরে তিনি সহকারী কমিশনার, এনডিসি (নেজারত ডেপুটি কালেক্টর), আরডিসি (রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর), উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়া তিনি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (নন-ক্যাডার), মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির পরিচালক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে যুগ্মসচিব এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মো. আলী নূর ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। নবাবগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই মেয়ের বাবা।