Mon. Apr 21st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার২৪,সোমবার ১৫ জুন, ২০২০:  প্রাণসংহারি ভাইরাস করোনা মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমে পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের ঘাটতি আছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সোমবার ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবেলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ’ উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, দীর্ঘসময় ধরে পরিকল্পনাহীনতা, সুশাসনের ঘাটতি ও অপ্রতুল বাজেট বরাদ্দের কারণে স্বাস্থ্যখাতের দুর্বলতা করোনাকালীন এই সঙ্কটে উন্মোচিত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে দেশের ৮৬ শতাংশ নার্সের করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক ‘আইপিসি’ প্রশিক্ষণ নেই বলে জানানো হয়। এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে ৭৪ দশমিক ৫০ শতাংশ দক্ষ জনবলের ঘাটতি রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণের ৫৯ দশমিক ৬০ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে বলে জানায় টিআইবি।

টিআইবি জানিয়েছে, প্রত্যক্ষভাবে সারা দেশের সকল বিভাগের ৩৮টি জেলা থেকে ৪৭টি হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত তথ্য নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৯টি মেডিকেল কলেজ, ৩৩টি উপজেলা পর্যায়ের হাসপতাল, ৫টি অন্যান্য হাসপাতাল রয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে টিআইবি বলেছে, গবেষণার অন্তর্ভুক্ত হাসপাতালগুলোর ২২ দশমিক ২০ শতাংশের সকল স্বাস্থ্যকর্মী প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। শুধু চিকিৎসক ও নার্স প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ২০ শতাংশ হাসপাতালের। শুধু চিকিৎসক প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ২০ শতাংশ হাসপাতালের।

করোনাভাইরাস পরীক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের মধ্যে ১৫৯ তম বলে সংবাদ সম্মেলনে জানায় টিআইবি। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নিচ থেকে দ্বিতীয় ।

টিআইবি জানায়, জনসংখ্যা অনুপাতে বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষার হার শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ। যেটা মালদ্বীপে ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ, ভুটানে ২ দশমিক ৬৬, নেপালে ১ দশমিক ০১, ভারতে শূন্য দশমিক ৩৯, শ্রীলঙ্কায় শূন্য দশমিক ৩৮, পাকিস্তানে শূন্য দশমিক ৩৭, আফগানিস্তানে শূন্য দশমিক ১৪ শতাংশ, আরব আমিরাত ২৬ দশমিক ৫৭, স্পেনে ৯ দশমিক ৫৫, যুক্তরাষ্ট্রে ৭.১৯ শতাংশ।

টিআইবি জানায়, কনোরা পরীক্ষাগারের সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে, গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত হাসপাতালসমূহের মধ্যে প্রায় ৫৭ শতাংশ হাসপাতালে চাহিদার তুলনায় কম পরীক্ষা করাতে পারছে। বাংলাদেশে পরীক্ষা সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও অধিকাংশ ঢাকাকেন্দ্রিক। ৬০টি পরীক্ষাগারের মধ্যে ২৭টি ঢাকা শহরে। বর্তমানে ২১টি জেলায় পরীক্ষার সুবিধা রয়েছে। করোনা পরীক্ষার প্রতিবেদন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ২ থেকে ৮ দিন পর্যন্ত বিলম্ব হচ্ছে।

বাংলাদেশে ২১ জানুয়ারি হতে করোনাভাইরাস আক্রান্তের নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। সর্বপ্রথম ৮ মার্চ তিনজন করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় এবং ১৮ মার্চ সর্বপ্রথম একজন মৃত্যুবরণ করে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে ১৪ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮৭ হাজার ৫২০ জন এবং ১ হাজার ১৭১ জন মৃত্যুবরণ করেছে। আক্রান্তের সংখ্যার হিসেবে ১৩ জুন পর্যন্ত সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ ১৮ তম অবস্থানে রয়েছে এবং নতুন রোগী শনাক্ত হওয়ার সংখ্যার দিক হতে ১১তম অবস্থানে রয়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ার কারণে বাংলাদেশে এই রোগের ঝুঁকি আরও বেশি।

টিআইবি জানায় , বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের কারণে দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকায় মারাত্মক সংকট তৈরি হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের আশঙ্কা অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫ কোটি মানুষ অতি দারিদ্র্যের কবলে পড়বে। এছাড়া এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক আশঙ্কা করছে, করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশ জিডিপির প্রায় ১.১% হারাবে, এবং প্রায় ১ কোটি লোক বেকার হবে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) মতে, করোনার প্রভাবে আয় কমে যাওয়ায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে এবং সার্বিকভাবে দারিদ্র্যের হার ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।