তিনি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেভাবে সীমিত পরিসরে কর্মকাণ্ড চলছে সেভাবেই আগামী ৩ অগাস্ট পর্যন্ত চলবে। মানুষকে সচেতন করতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এবং তথ্য মন্ত্রণালয় প্রচার-প্রচারণা চালাবে।”
সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে দোকানপাট খোলা রাখার সময় তিন ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে বলে বলে জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী। এতদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখা যেত।
চলচল নিয়ন্ত্রণের মেয়দ আগামী ৩ অগাস্ট পর্যন্ত বাড়িয়ে রাতে আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সেখানে নানা বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
এতদিন রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা আরও শিথিল করা হয়েছে।
আদেশে বলা হয়েছে, রাত ১০টা থেকে সকাল ৫টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (প্রয়োজনীয় ক্রয়-বিক্রয়, কর্মস্থলে যাতায়াত, ওষুধ কেনা, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না; বাইরে চলাচলের সময় অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এ নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাটবাজার ও শপিংমল খোলা রাখার বিষয়ে আদেশে বলা হয়েছে, “হাটবাজার, দোকান-পাটে ক্রয় বিক্রয়কালে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে। শপিংমলের প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শপিংমলে আগত যানবাহনগুলোকে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। হাটবাজার, দোকানপাট এবং শপিংমলগুলো সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।”
সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প কারখানা ও সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ জারিকৃত স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করে খোলা থাকবে।
এছাড় গণপরিবহনসহ সব ধরণের যান স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ জারিকৃত স্বাস্থ্য বিধি প্রতিপালন করে চলাচল করবে বলেও আদেশে বলা হয়েছে।
এই নিয়ন্ত্রণকালে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে না জানিয়ে আদেশে বলা হয়েছে, তবে অনলাইন কোর্স বা ডিস্টেন্স লার্নিং অব্যাহত থাকবে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রশাসনিক কার্যাবলি চালাতে পারবে।
“উক্ত সময়ে সভা-সমাবেশ সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত ও অনুষ্ঠান আয়োজন বন্ধ থাকবে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রতিপালন করে মসজিদগুলোতে জামাতে নামাজ আদায় এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসানালয়ে প্রার্থনা করা যাবে।”
সরকার বলছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রণীত কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঝুঁকি জোন ভিত্তিক সংযমন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন কৌশল বা গাইড অনুসরণ করে জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়ন করতে হবে।
“রেড জোন ঘোষণা করে সে এলাকায় কেবল গুরুতর সংক্রমিত পরিসীমাকে লকডাউনের আওতায় আনতে হবে। সেখানে সর্বসাধারণের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, বিয়য়াদির সরবরাহ বা প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ বিষয়ে সুস্পষ্ট অনুমোদন ও নির্দেশনা প্রদান করবে। সিটি করপোরেশন এলাকায় সিটি করপোরেশন এবং অন্যান্য এলাকায় জেলা প্রশাসন এ সংক্রান্ত কার্যাবলির সার্বিক সমন্বয় করবে।”
আসন্ন ঈদুল আজহার সময় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ জারিকৃত স্বাস্থ্য বিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করে কোরবানির পশুর হাট আয়োজনের অনুমতি দেওয়া যাবে।
সীমিত পরিসরে অফিস চলার সময় ঝুঁকিপূর্ণ, অসুস্থ কর্মচারী এবং সন্তান সম্ভাবা নারীরা কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিতকরণের জন্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ জারিকৃত নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।
জনসাধারণকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য করণীয় বিষয় অনুসরণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এবং তথ্য মন্ত্রণালয় সারা দেশে স্বাস্থ্য বিধির বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে বলেও আদেশে বলা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে চলা টানা ৬৬ দিনের লকডাউন ওঠার পর গত ৩০ মে থেকে সীমিত পরিসরে অফিস চলছে।
এই সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে জারি করা নির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে অনুসরণের পাশাপাশি সবাইকে মাস্ক পরে অফিস করতে হচ্ছে। বয়স্ক, অসুস্থ ও সন্তান সম্ভবাদের এ সময় অফিসে যেতে মানা করা হয়েছে। একসঙ্গে ২৫ শতাংশের বেশি কর্মকর্তার অফিসে থাকায় মানাও করা হয়েছে।
জুনের শুরুতে নানা বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ার পর দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণও বাড়ছে।
গত একদিনে সর্বাধিক ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর মঙ্গলবার দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখের কাছাকাছি পৌঁছেছে।