Sun. Apr 20th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার২৪, শুক্রবার ১৪ আগস্ট, ২০২০ঃ  স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের মধ্যে অবৈধ সুবিধা পাওয়ার জন্য জেকেজি হেলথ কেয়ারকে কাজ পাওয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে সুবিধা দিয়ে আসছেন এমন কিছু তথ্য প্রমাণ গণমাধ্যমের হাতে এসেছে।

জানা যায়, করোনা মহামারী শুরু হলে জেকেজি হেলথ কেয়ার টাকার বিনিময়ে করোনা স্যাম্পল সংগ্রহ করে। ওই স্যাম্পল পরীক্ষা না করেই সরকারি লোগো ব্যবহার করে জাল সার্টিফিকেট দেয় এবং প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

করোনাভাইরাস পরীক্ষায় জালিয়াতির মামলায় জেকেজি হেলথ কেয়ারের সিইও আরিফুল চৌধুরী ও চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীসহ আট জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে এসব কথা উল্লেখ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলী।

তেজগাঁও থানায় দায়ের করা মামলায় গত ৪ আগস্ট এই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। অভিযোগপত্রে সাবরিনা ও আরিফকে মূল হোতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাকিরা প্রতারণা ও জালিয়াতি করতে তাদের সহযোগিতা করেছেন। এমন কিছু অভিযোগপত্রের কপি গণমাধ্যমের হাতে এসেছে।

৬ আগস্ট ঢাকার চিফ ম্যাট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুলফিকার হায়াত মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) গ্রহণ করেন। এরপর তিনি মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকা ম্যাট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরাফুজ্জামান আনছারীর আদালতে বদলির আদেশ দেন।  ১৩ আগস্ট আসামিদের আদালতে তোলা হলে বিচারক আগামী ২০ আগস্ট অভিযোগ গঠন শুনানির পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।

অভিযোগপত্রে অন্য আসামিরা হলেন—আবু সাঈদ চৌধুরী, হিমু, তানজিলা, বিপুল, শফিকুল ইসলাম রোমিও ও জেবুন্নেসা। তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে হিমু, তানজিলা ও রোমিও দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

অভিযোগপত্রে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, চিকিৎসা বিষয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদ অবৈধ ও বেআইনিভাবে নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান জেকেজিকে করোনার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে স্যাম্পল কালেকশনের কাজটি দেন। যেখানে এই প্রতিষ্ঠানের শুরু কেবল সিটি করপোরেশন থেকে পাওয়া ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে। এ রকম একটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক ডিজি ডা. আবুল কালাম আজাদের ‘চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় প্রকাশ পায়’।

তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করেন, সরেজমিনে রাজধানীর মহাখালীতে ডিজি স্বাস্থ্য অধিদফতর অফিসে উপস্থিত হয়ে এডিজি-কে (প্রশাসন) জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান, জেকেজি হেলথ কেয়ার সংক্রান্ত সব ধরনের কাগজপত্র সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদের নির্দেশে স্বাক্ষর করেন। এডিজি (প্রশাসন) লিখিত বক্তব্য দিয়ে আরও বলেন, জেকেজি হেলথ কেয়ার কোনোভাবে স্যাম্পল কালেকশন বাবদ টাকা গ্রহণ ও স্যাম্পল দাতাদের রিপোর্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করতে পারবে না বলে শর্তে উল্লেখ ছিল। এরপরও জেকেজি হেলথ কেয়ার স্যাম্পল গ্রহণ ও টাকা সংগ্রহ করেছে। ফলে আসামিদের প্রতারণার বিষয়টি সুস্পষ্ট দেখা যায়।

অভিযোগপত্রে তিনি আরও উল্লেখ করেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী কোনও স্যাম্পল পরীক্ষার অনুমতি না থাকলেও জেকেজি হেলথ কেয়ার আইদেশী এর মাধ্যমে স্যাম্পল পরীক্ষা করে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এছাড়া আইদেশী এর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে, [email protected]  ইমেলটি তাদের প্রতিষ্ঠানের না। অথচ জেকেজি হেলথ কেয়ার গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে স্যাম্পল কালেকশন করে তা পরীক্ষা না করেই [email protected]  ই-মেইল ব্যবহার করে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট গ্রাহকদের ইমেইলে পাঠায়। এতেও জেকেজি হেলথ কেয়ার প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়।

একইভাবে জেকেজি হেলথ কেয়ার স্বাস্থ্য অধিদফতরের লিখিত আদেশের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নির্দিষ্ট বুথের বাইরে গিয়ে বাড়ি বাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতারণার উদ্দেশ্যে স্যাম্পল সংগ্রহ করেছে।

তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করেন, আসামি আরিফুল চৌধুরী ও ডা. সাবরিনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট পর্যালোচনায় দেখা যায় গত মে ও জুন মাসে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা লেনদেন হয়েছে। এতে স্পষ্ট হয় যে, করোনাকালীন সময় তারা টাকার বিনিময়ে করোনা স্যাম্পল সংগ্রহ করে ওই স্যাম্পল পরীক্ষা না করেই সরকারি লোগো ব্যবহার করে জাল সার্টিফিকেট দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করেছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদের দৃষ্টি গোচর করা হলেও তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেননি।

অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করেন, আসামি আরিফুল চৌধুরী জেকেজি হেলথ কেয়ার এবং ওভালগ্রুপে চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার পদে দায়িত্বে থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন, প্রজেক্ট প্রপোজালসহ কাজ প্রাপ্তিতে মূল ভূমিকা রাখেন। তিনি বেসরকারি অফিসে এবং বাসাবাড়িতে গিয়ে টাকার বিনিময়ে স্যাম্পল কালেকশন করার জন্য bookingbd.com সহ হটলাইন তৈরি, প্রচার ও নিজস্ব কম্পিউটার সিস্টেম থেকে জাল সার্টিফিকেট তৈরি করেন। এসব সার্টিফিকেট দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ আত্মসাৎ করেন বলে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন।

একই সঙ্গে আসামি ডা. সাবরিনা জেকেজি হেলথ কেয়ার এবং ওভালগ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োজিত থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন, প্রজেক্ট প্রপোজালসহ কাজ প্রাপ্তিতে মূল ভূমিকা রাখেন এবং বাসাবাড়িতে গিয়ে টাকার বিনিময়ে স্যাম্পল কালেকশন করার জন্য bookingbd.com সহ হটলাইন তৈরি, প্রচার ও নিজস্ব কম্পিউটার সিস্টেম থেকে জাল সার্টিফিকেট তৈরি করেন এবং তা বিতরণ করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেন।