জবা, ১৫ বছর হলো তার স্বামী দালালের মাধ্যমে ভারতে কাজ করতে গিয়ে নিরুদ্দেশ। তখন থেকেই জীবন নিয়ে সংগ্রামরত জবা।
দুই সন্তানের লেখাপড়া আর অভাবে-অনটনে সংসারের হাবুডুবু অবস্থা; মানবপাচারকারীদের টার্গেটে পড়েন তিনি। ফাঁদে পড়ে সৌদি আরব গিয়ে দুই বছরে সহ্য করেন শারীরিক নির্যাতন ও লাঞ্ছনা। প্রতি মাসের শ্রমের বিনিময়ে যে টাকা পাওয়ার কথা ছিলো, তাও পাননি। পরে বহু কষ্টে ফিরে এসেছেন দেশে।
জবা (ছদ্মনাম) জানান, ওখানে রাত-দিন খুব কাজ করতে হতো। এক বাড়িতে কাজ করার কথা থাকলেও অন্য বাড়িতেও কাজ করা লাগতো। না করলেন নির্যাতন করতো, মারধর করতো।
দক্ষিণাঞ্চলের এমন অনেক পুরুষ ও নারী বিদেশ গিয়ে আবার পালিয়ে দেশে ফিরেছেন, তাদের সবার গল্পটা একই রকম।
ভুক্তভোগীরা জানান, দালালে নিয়ে যাওয়ার পরে বলে আমার পনের হাজার টাকা বেতন। কিন্তু ঠিকমতো আমাকে টাকা দিতো না। অন্য আরেকজন জানান, দালাল আমাকে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে, তারপর বলে তোমরা এখানে কাজ করবা। টাকা-পয়সা দিবেন তো বলায় দালাল বললো কোন টাকা-পয়সা হবে না।
সচেতন মহল মনে করে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া এবং প্রতিরোধ পদক্ষেপগুলো কার্যকর না থাকায় এই অঞ্চলে মানবপাচার বেড়েছে।
আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী তাহমাদ আকাশ বলেন, মামলা হওয়ার পরে তাদেরকে অনেক সময় গ্রেফতার করা সম্ভব হয় না। সেই ক্ষেত্রে মামলাটা কিন্তু ঝুলে যায়।
খুলনা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ্যাডভোকেট এনামুল বলেন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, প্রসিকিউশন সবাই মিলে এবং জাজশীপ মানব পাচারকারী মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করবো।
তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় মানব পাচার কমেছে- এমন দাবি প্রশাসনের।
খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, আগের বছরগুলোর তুলনায় ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। এটি যে শূন্যের পর্যায়ে নিয়ে আসা গিয়েছে তা কিন্তু নয়।
গত তিন বছরে খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় দুই হাজার ২শ’ জনের বেশি মানুষ পাচারের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু বিচারের আওতায় আসেনি কোন পাচারকারী।