খােলাবাজার২৪, শুক্রবার ২৯ জানুয়ারি ২০২১ঃ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন দেশের জেলায় জেলায় পৌঁছাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছিল, গাজীপুরের বেক্সিমকো কারখানা থেকে এসব টিকা বিশেষ ফ্রিজার গাড়ি ও কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে জেলায় জেলায় পাঠানো হচ্ছে।
আজ শুক্রবার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসব টিকা পৌঁছাতে শুরু করেছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা প্রশাসনের সহায়তায় এসব টিকা গ্রহণ করে সংরক্ষণ করছেন। পরে এসব টিকা বিভিন্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে দেওয়া হবে।
ভারত থেকে আসা ৫০ লাখ ডোজ টিকা গাজীপুরে সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মোট ২৬ লাখ টিকা দেশের ৩৪ জেলায় পাঠানো হয়েছে।
এসব জেলা হচ্ছে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নরসিংদী, ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, পাবনা, নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, নওগাঁ ও জয়পুরহাট।
কুষ্টিয়া, সেখানে ৬০ হাজার ভ্যাকসিন পৌঁছেছে। আজ সকালে সুরক্ষিত ভ্যাকসিন বহনকারী পিকআপে করে পাঁচটি কার্টনে এসব ভ্যাকসিন পৌঁছায়। এগুলো জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই স্টোরে সংরক্ষণ করা হয়েছে। জেলায় ৬০ হাজার মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হবে।
আগামী রোববার ও সোমবার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী ও চিকিৎসকদের টিকার ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন আনোয়ারুল ইসলাম।
ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল, পুলিশ লাইন হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পরে ইউনিয়ন পর্যায়ে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আর ফেব্রুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে সাধারণ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া কার্যক্রম শুরু হবে।
ফরিদপুর, সেখানে টিকার ৬০ হাজার ডোজ পৌঁছেছে। সকাল সাড়ে ৯টায় ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. সিদ্দিুকর রহমান টিকাগুলো বুঝে নেন। এগুলো ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের ঔষধ সংরক্ষণাগারে রাখা হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. সিদ্দিকুর রহমান জানান, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকাগুলো ফরিদপুরের নয়টি উপজেলায় প্রদান করা হবে।
রাজশাহী , সেখানে এক লাখ ৮০ হাজার ডোজ টিকা পৌঁছেছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. মো. কাইয়ুম তালুকদার টিকাগুলো গ্রহণ করেন। এরপর ১৫টি কার্টনে করে টিকাগুলো জেলা ইপিআই স্টোরে সংরক্ষণ করা হয়। প্রতিটি কার্টনে এক হাজার ২০০ ভায়াল টিকা রয়েছে। প্রতিটি ভায়ালে টিকা রয়েছে ১০ ডোজ। সেই হিসাবে এক লাখ ৮০ হাজার ডোজ টিকা রাজশাহীতে এসেছে।
সিভিল সার্জন বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি জেলা পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হবে। আগামী ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যকর্মীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এরপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত কেন্দ্র, সিভিল সার্জনের নির্ধারিত কেন্দ্র এবং রাজশাহী সেনাবাহিনীর নির্ধারিত কেন্দ্রে একাধিক বুথে টিকা প্রয়োগ শুরু হবে।
ঝালকাঠি, সেখানে টিকার ১২ হাজার ডোজ পৌঁছেছে। আজ দুপুরে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে গাড়িতে করে ভ্যাকসিন এসে পৌঁছায়। জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী ও সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালি টিকা বুঝে নেন।
এ জেলায় ১৯ হাজার ডোজ টিকার চাহিদা পাঠানো হয়। ১৫ ক্যাটাগরিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হবে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপে টিকা দেওয়া হবে।
ভ্যাকসিন রাখার জন্য ফ্রান্সে তৈরি বড় আকারের ফ্রিজ সরবারহ করেছে ইউনিসেফ। সাড়ে নয় ফুট দৈর্ঘ্য ও সাড়ে তিন ফুট প্রস্তের ফ্রিজের উচ্চতা সোয়া সাত ফুট। দুই থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় টিকাগুলো রাখা হবে বলে জানান ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালি।
গোপালগঞ্জ, সেখানে ৩৬ হাজার ডোজ টিকা পৌঁছেছে। দুপুরে টিকা পৌঁছার পর গোপালগঞ্জ জেলা ইপিআই ভবনের দ্বিতীয়তলায় টিকার তাপমাত্রা ও গুগতমান পরীক্ষা করা হয়। পরে ওই কক্ষের আইচ লাইন রেফ্রিজারেটরে টিকা সংরক্ষণ করা হয়। টিকা বুঝে পেয়ে এ সম্পর্কিত জেলা কমিটির সদস্যরা রিসিভ ফর্মে স্বাক্ষর করেন।
গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ এসব তথ্য জানিয়ে বলেছেন, জেলার ৩৬ হাজার মানুষকে প্রথম পর্যায়ে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে। আমরা এখন টিকা গ্রহিতার তালিকা তৈরির কাজ করছি। গোপালগঞ্জ আড়াইশ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করে তা প্রয়োগ করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়া হবে। পরে পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকরা এ টিকা পাবেন। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে টিকা প্রয়োগ করা সম্ভব হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
ঝিনাইদহ সেখানে প্রথম ধাপে ৬০ হাজার ডোজ টিকা পৌঁছেছে। আজ দুপুরে জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম টিকা গ্রহণ করেন।
জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, টিকাগুলো ইপিআই ভবনের স্টোর রুমে রাখা হয়েছে। আগামী ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি সিভিল সার্জন কার্যালয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যায়ক্রমে অগ্রাধিকারভুক্ত ব্যক্তিদের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে।