Sat. Jun 7th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার২৪,রবিবার,০৪ জুলাই,২০২১ঃ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতান্ত্রিক আকাঙ্খাকে বিনষ্ট করে ক্ষমতায় বসে আছে সরকার।দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা পাকাপোক্ত করার চেষ্টা চলছে । এখন সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্র না থাকলে গণমাধ্যমও ভালো থাকে না। সাংবাদিককেও তারা শুধু জেলে পোড়েননি, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছেন।  ৪২ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন বর্তমান সরকারের আমলে।   প্রথমে তারা রাজনীতিকদের ধরেছে, এখন সাংবাদিকসহ ভিন্নমত দমন শুরু করেছে।

রোববার ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) উদ্যোগে ‘মহান স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী: গণমাধ্যমের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক  ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে যখন করোনাভাইরাসে  মানুষের জীবন চলে যাচ্ছে, তখন  স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি চলছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী কী নির্লজ্জ একজন ব্যক্তি যে পার্লামেন্টে তার বিরুদ্ধে তার দলের লোকেরাই কথা বলছেন, বিরোধী দলের কয়েকজন কথা বলেছেন, সারাদেশের মানুষ কথা বলছেন, তারপরেও তিনি পদত্যাগ করছেন না। আজকে এই জাতিকে বাঁচানোর জন্য,  অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কখনোই কোনো আন্দোলন সফল হয় না আমরা যদি ত্যাগ স্বীকার না করতে পারি। আমি অনুরোধ জানাবো, তরুণদের এখনই জেগে উঠতে হবে, এই ঘোরতর অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে উঠে দাঁড়াতে হবে।

তিনি বলেন,  আমাদের এই বাংলাদেশের সবই আছে-সরকার আছে, জাতীয় সংসদ আছে, বুরোক্রেসি আছে, কিন্তু মানুষের অধিকার নেই, গণতন্ত্র নেই। ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা, পাঁচশর বেশি মানুষ গুম হয়ে গেছেন, শত শত  মানুষ খুন হয়েছেন। মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্রের হন্য সোচ্চার হওয়ার কারণে আজকে বেগম  খালেদা জিয়া বন্দিজীবন যাপন করছেন।বাংলাদেশের জনগণ তাদের অধিকার ফিরে পেতে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার, জনগণের সংসদ, জনগণের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে।’ এই অধিকার আদায়ের জন্য গণমাধ্যমকে অতীতের মতো সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

 

ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ বলেন, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হলেও আমাদের দেশে গণমাধ্যমের ক্রান্তিকাল চলছে। ক্ষমতার প্রভাব বলয় থেকেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সবকিছু। যতটুকু স্বাধীনতা দিলে ক্ষমতবানদের সমস্যা হয় না ততটুকুই স্বাধীনতাই ভোগ করছে সংবাদমাধ্যম।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপার্সন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটির যখন জন্ম হয়, তখন ওই সময়ের জাতীয় নেতারা উপলব্ধি করেছিলেন, বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হলে এখানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা না গেলে এই দেশটিতে গণতন্ত্র বিকশিত হবে না। তাই ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তারা সংবিধানে ৩৯ ধারাটি জুড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যারা এই সংবিধান জাতিকে দিয়েছেন তারাই সংবিধানকে পদদলিত করে চারটি সংবাদপত্র রেখে বাকি সব সংবাদপত্র নিষিদ্ধ ঘোষনা করলো। একদলীয় বাকশাল গঠন করে গনতন্ত্র গলাটিপে হত্যা করলো।

বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেন, গণমাধ্যম সরকার ও জনগণের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। অসহায় মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, যন্ত্রণা, হতাশা, দুর্দশা, অধিকার, অসাম্য প্রভৃতি বিষয় তুলে ধরে সমাধানের পথ ত্বরান্বিত করবে গণমাধ্যম। আবার দুর্নীতি, অপরাধ, অনাচার, অবিচার তথা সমাজের নেতিবাচক দিকগুলোর বিরুদ্ধেও হবে সোচ্চার।

বিএফইউজে মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন বলেন, গণমাধ্যম হচ্ছে নির্বাক মানুষের সবাক বন্ধু। গণমাধ্যম শব্দহীনের মুখে শব্দ ফোটায়, শক্তিহীনকে শক্তি দান করে। অন্যদিকে অপরাধী, অন্যায়কারী ও দুষ্টুজনের জন্য মূর্তিমান আতঙ্কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া একটি সংশোধনকারী মাধ্যমও। তাই স্বাধীন বা নিরপেক্ষ গণমাধ্যম মানেই আপামর জনসাধারণের পক্ষে তাদের অব্যক্ত কথাগুলো বলার একটি বড় মাধ্যম। কিন্তু এদেশের গণমাধ্যমের সার্বিক অবস্থার দিকে তাকালে এর উল্টো চিত্রটাই চোখে পড়ে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ বলেন, গণতন্ত্র ও গণমাধ্যম একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গণতন্ত্রের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও অপরিহার্য।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের  সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ বলেন, গণমাধ্যম মানুষের জন্য তথ্যের বৃহত্তর প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে। সরকারের সমালোচনার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়, এতে গণমাধ্যমের ভূমিকাই সর্বাধিক।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের  সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। মত প্রকাশের স্বাধীনতা জনগণের একটি মৌলিক অধিকার। আলোচনা, মতপ্রকাশ হলো গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ সিঁড়ি। যেখানে গণমাধ্যম যত বেশি শক্তিশালী সেখানে গণতন্ত্র ততো বেশি শক্তিশালী।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মুরসালিন নোমানী বলেন, গণমাধ্যমের সঠিক চর্চা যেমন গণতন্ত্র রক্ষা করতে পারে, তেমনি প্রকৃত গণতন্ত্র পারে গণমাধ্যমকে স্বাধীন রাখতে। স্বাধীন গণমাধ্যম যে কোনো সরকারের সেরা বন্ধু।

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম স্বপ্ন ছিল বাক ও চিন্তার স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য বর্তমানে এর কোনোটিই কার্যকর নেই। মিডিয়ার স্বাধীনতা ততটুকু আছে যতটুকু সরকারের পক্ষে যায়।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন একাংশের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বর্তমান সভাপতি এম আবদুল্লাহ, কবি আবদুল হাই শিকদার, বিএফইউজে একাংশের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ডিইউজে একাংশের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন, বাসির জামাল, রাশেদুল হক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোরসালিন নোমানী প্রমুখ বক্তব্য দেন।