আব্দুল আউয়াল
বানারীপাড়া প্রতিনিধিঃ
বরিশালের বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে ৫ টি বাড়ীসহ বিস্তীর্ন এলাকা বিলীন হয়েগেছে। গত পাঁচ দিনে উপজেলার নাটুয়ারপাড় এলাকায় ওই ভাঙন দেখা দেয়। আরো নদী ভাঙার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে বহু পরিবার। সরেজমিনে দেখা যায় ওই এলাকায় এখনো বেশ কয়েকটি ফাঁটল রয়েছে। কয়েক বছর ধরে ওই এলাকায় ব্যাপক ভাঙনের ফলে বানারীপাড়ার মানচিত্রই পাল্টে গেছে। ১০/১৫ বছর ধরে সন্ধ্যা নদীর ভাঙন অব্যহত থাকলেও ভাঙন রোধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছেনা বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
বানারীপাড়া উপজেলাকে সন্ধ্যা নদী দু ভাগে ভাগ করেছে। এর পূর্র্ব পাড়ে একটি পৌরসভাসহ ৩ টি ইউনিয়ন ও বানারীপাড়া সদর এবং পশ্চিম পাড়ে বাইশারীসহ ৫ টি ইউনিয়ন অবস্থিত। বাইশারী ইউনিয়নটি সন্ধ্যা নদীর তীরে অবস্থিত। একসময় ওই ইউনিয়নে বহু রাইস মিলসহ ধানের বিশাল হাট বসত। যা একসময় দক্ষিন বাংলার ঐতিহ্য বহন করত। কালের বিবর্তনে আজ তা কেবল স্মৃতি। বেশ ক‘টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা সন্ধ্যা নদীর গহ্বরে বিলীন হয়েগেছে। ওই ইউনিয়নে প্রায় অর্ধেকাংশ আজ সন্ধ্যা নদীতেই অবস্থান করছে।
সরেজমিনে ওই এলাকায় গেলে দেখা যায় ডান্ডোয়াট ফেরিঘাট থেকে আধা কিলোমিটার উত্তরে নাটুয়ারপাড় গ্রামের অবস্থান। একসময় আরো একটি গ্রামের পর ছিল গ্রামটি। ভাঙতে ভাঙতে আজ গ্রামটির শেষ প্রান্তটি অবশিষ্ট রয়েছে। সম্প্রতি ঘরবাড়ী হারা হাফেজ আব্দুর রব আজকের পত্রিকাকে জানান, এক সময় গ্রামটিতে বহু মানুষের বসবাস ছিল। কিন্তু নদী ভাঙনের ফলে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার আছে। ভাঙনের যা গতি, তাতে যে কোন মূহুর্তে তা বিলীন হতে পারে বলে সকলেরই ধারণা। গত এক সপ্তাহে তার ঘরবাড়ীসহ সামসুল হক সরদার, শহীদুল ইসলাম, সুলতান বেপারী ও কবির সরদারের ঘর-বাড়ী বিলীন হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ওই এলাকায় একসময়ে বড় বড় দোতলা ঘর, দালান ছিল। আজ তা কেবলই স্মৃতি। তার অনেক আত্মীয়স্বজন কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে তাও তিনি বলতে পারেন না। তিনি বলেন কিছু দিন পূর্বে উত্তরকুল মসজিদ রক্ষার জন্য বালুর বস্তা ফেলানো হয়েছিল। সে কারনে ওইখান থেকে না ভাঙলেও পাশ থেকে অনবরত ভাঙছে। সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে বসতভিটা হারোনো খেজুরবাড়ীর বাসিন্দা আব্দুস সত্তার ফকির জানান, আমাদের বাড়িতে প্রায় ১০-১২টি কুটিয়াল ছিল। প্রত্যেক পরিবারের আলাদা আলাদা ধান শুকানোর উঠান ছিল। কিন্তু আজ কালের বিবর্তনে সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে আমাদের পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন কে কোথায় আছে জানা নেই। তিনি আরো বলেন, নদী ভাঙার কষ্ট শুধু যাদের ভাঙে তারাই কেবল বোঝে। এ ব্যাপারে সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যাতে করে সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে নতুন করে আর কোন পরিবার বিলীন না হয়।
এ বিষয়ে বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিপন কুমার সাহা’র সাথে কথা বললে তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান, নদী ভাঙা মানুষকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাহায্য দেওয়া হয়েছে। নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন দফতরকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নদী ভাঙা মানুষের ব্যাপারে সরকারী অনুদান ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারী যতো সুযোগ সুবিধা রয়েছে তা তারা অবশ্যই পাবে।