
খােলাবাজার২৪,শুক্রবার,২৭আগস্ট,২০২১ঃ লক্ষ্মীপুরে রামগতি-কমলনগরের বেডিবাঁধ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন। সেনাবাহিনীর অধীনে টেকসই বেড়িবাঁধ চাই- ভিটে-মাটি রক্ষায় কোন আপোষ নাই-এই স্লোগানে সামনে রেখে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতি উপজেলার মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ কাজ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ‘আমরা রামগতি-কমলনগর বাসী’ ও ‘রামগতি-কমলনগর নদী শাসন সংগ্রাম পরিষদ’।
শুক্রবার (২৭ আগস্ট) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘আমরা রামগতি-কমলনগর বাসী’ ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এসব মানববন্ধনে একই দাবীতে জানানো হয়, ভাঙন ঠেকাতে বাঁধ নির্মাণের জন্য গত ১ জুন তারিখে ৩ হাজার ৮৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। কিন্তু বড় প্রকল্পটি অনুমোদন হলেও পূর্বের আরেকটি প্রকল্পের অভিজ্ঞতার কারণে বাস্তবায়ন বিষয়ে এলাকার বাসিন্দারা শঙ্কায় রয়েছেন।
মানববন্ধনগুলোতে বক্তরা দাবি করেন, সাধারণ ঠিকাদারের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ করা হলে দুর্নীতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পূর্বে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে যে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, সেটি টেকসই এবং গুণগত মানের। অন্যদিকে ঠিকাদারের মাধ্যমে যে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে তার অনেকাংশ কয়েক বছরের মাথায় নদীতে বিলীয় হয়ে গেছে। তাই প্রায় সাড়ে ৩৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত ৩ হাজার ৮৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকার সঠিক ব্যবহারের জন্য সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততার দাবি জানান মানববন্ধনকারীরা।
এসময় বক্তারা আরও জানান, ২০১৪ সালের ৫ আগস্ট একনেকের বৈঠকে উক্ত এলাকায় ৩৭ কি.মি. বাঁধ নিমার্ণে ১৩শ ৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অধীন প্রথম পর্যায়ে ১শ ৯৮ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছিল একনেক। ২০১৪ সাল হতে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুন মাসে শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ ছিল। কিন্তু প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ১শ ৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই উপজেলায় সাড়ে পাঁচ কি.মি. বাধঁ নির্মাণ শেষ হয় ২০১৭ সালের মার্চ মাসে। এরপর কোন কারণ ছাড়াই পুরো প্রকল্পটি গোপনে বাতিল হয়ে যায়। সেখানে সেনাবাহিনী দিয়ে নির্মিত সাড়ে চার কি.মি. বাঁধ ভালোভাবে তৈরি হয়। কিন্তু একই সময়ে ঠিকাদার দিয়ে তৈরি করা ১ কি.মি. বাঁধে ৮ বার ধস নামে। অন্যদিকে প্রকল্প চলাকালীন সময়েও বহু এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যায়।ভাঙনের তীব্রতায় গত ৫ বছরেই বিলীন হয়েছে কমলনগর উপজেলার ৪ ইউনিয়ন পরিষদের ১৫টি ওয়ার্ড।
এদিন মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, মিয়া মোহাম্মাদ গোলাম ফারুক পিংকু, সভাপতি, জেলা আওয়ামীলীগ লক্ষীপুর, ডঃ আশ্রাফ আলী চৌধুরী সারু, সহ-সভাপতি, রামগতি উপজেলা আওয়ামীলীগ, আবু নাসের, সাংগঠনিক সম্পাদক, রামগতি উপজেলা আওয়ামীলীগ, মেজবাহ উদ্দিন হেলাল (ভিপি হেলাল), আহবায়ক, রামগতি উপজেলা যুবলীগ, ফরহাদ উদ্দিন, যুগ্ন সাধারন সম্পাদক, জাতীয়বাদী স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটি, তাওহীদুল ইসলাম (সুমন), চেয়ারম্যান, চরগাজী ইউনিয়ন, রামগতি, হাসান মাকসুদ, চেয়ারম্যান, বড়খালী ইউনিয়ন, রামগতি, তানবীর আহমেদ জুয়েল, প্রচার সম্পাদক, রামগতি উপজেলা বি,এন,পি, আশরাফুল আলম হান্নান, মোঃ নুরউদ্দিন রোকসার, রিয়াজ উদ্দিনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।। মানববন্ধনে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার সহস্রাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
ভূমি অফিসের দেয়া তথ্যে জানা যায়, সেগুলোতে মোট ভূমি ছিল ৭০ বর্গ কিলোমিটার। বর্তমানে ভাঙছে কমলনগর উপজেলার ৬ ইউনিয়নের ১৬টি ওয়ার্ড, রামগতি উপজেলার ৬ নং ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৩৪টি ওয়ার্ড এবং সদর উপজেলার একটি ইউনিয়নের ২টিসহ মোট ৫০টি ওর্য়াড। প্রত্যেকটি ইউনিয়নের ভূমি অফিসের পৃথক তথ্যে দুই উপজেলার আংশিক ভাঙা ওয়ার্ডগুলোতে প্রায় ১শ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিস এবং চেয়ারম্যানদের দেয়া তথ্য মতে, গত ৩০ বছরের প্রথম ২০ বছরে ৭০ বর্গ কিলোমিটার এবং পরের ১০ বছরে এ দুই উপজেলায় আরও ১শ ৪০ বর্গ কিলোমিটারসহ মোট ২শ ৪০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে।
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ মুঠোফোনে জানান, জেলার ৪টি উপজেলা উপকূলীয় হলেও রামগতি এবং কমলনগরে ব্যাপক হারে নদী ভাঙছে। সদর ও রায়পুরে তেমন নদী ভাঙন নেই।
তিনি জানান, জেলার দুটি উপজেলার ৩১ কিলোমিটার মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন হয়েছে। অর্থছাড় পেলে খুব শীঘ্রই কাজ শুরু করা যাবে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (১৭ আগষ্ট) ই-জিপি টেন্ডার পোর্টাল এবং বুধবার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, ৪টি প্যাকেজ এবং ১১ লটে বিভক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে মোট ৩৪শ মিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে রামগতি এবং কমলনগরে। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর তারিখে টেন্ডার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে।