Sat. Jun 7th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার২৪,বুধবার,১৫সেপ্টেম্বর,২০২১ঃ মুনিয়ার মৃত্যু নিয়ে এখন তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পুলিশের এলিট এই তদন্তকারী সংস্থার আলাদা একটি সুনাম ও গ্রহণযোগ্যতা ইতোমধ্যে দেশবাসীর কাছে তৈরি হয়েছে। যে কোনো জটিল মামলার তদন্ত করার ক্ষেত্রে তারা বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। বনজ কুমার মজুমদারের নেতৃত্বে এই সংস্থাটি এখন একটি মর্যাদাপূর্ণ বিভাগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি ২০১৬ সালে পিবিআইতে যোগ দেওয়ার পর মামলাগুলোর রেকর্ড সংরক্ষণের জন্য নতুন সফটওয়্যার তৈরি করা থেকে শুরু করে পিবিআইর জন্য আলাদা একটি অত্যাধুনিক ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন করেন। তাদের তদন্তের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নাতীত। এবং বিভিন্ন মামলায় তারা এ কথার প্রমাণ রেখেছে। তাদের অসাধারণ মেধায় বহু জটিল মামলার তদন্তে রহস্যের জট খুলেছে ইতোমধ্যে।

গত ছয় সেপ্টেম্বর ৮ নং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল মুনিয়াকে হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগে তার বোন তানিয়ার করা মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পিবিআই কে দেয়া হয়। পিবিআই এখন এই মামলার তদন্তের কাজ শুরু করেছে। এখানে উল্লেখ্য যে, গত ১৯শে এপ্রিল মুনিয়া রাজধানী গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে মারা যান। এ মৃত্যুর পর তার বোন নুসরাত তানিয়া এ মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মাস তিনেক তদন্তের পর গুলশান থানা চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। এবং এই ঘটনায় কোনো আত্মহত্যার প্ররোচনা নেই বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ম্যজিস্ট্রেট আদালতে পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর বাদি নুসরাত তানিয়া একটি নারাজি দরখাস্ত দেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে নারাজি দরখাস্তটি নাকচ করে দেন এবং মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করেন। এর কয়দিন পর গত ছয় সেপ্টেম্বর নুসরাত তানিয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নতুন করে মামলা করেন। এবার আর আত্মহত্যার প্ররোচনা নয় সরাসরি হত্যা ও ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন।

পিবিআই সূত্র বলছে, যে কোনো একটি হত্যা মামলার প্রধান উপজীব্য হল ঘটনাস্থলে কে উপস্থিত ছিল। কারণ হত্যা স্ব শরীরে উপস্থিত না হয়ে করা সম্ভব নয়। আর এ কারণেই মুনিয়ার মৃত্যুর আগে গুলশানের ঐ ফ্ল্যাটে কারা গিয়েছিল সেটি এই মামলার এখন প্রধান তদন্তের বিষয় বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য যে, মুনিয়ার কল রেকর্ড যাচাই করে দেখা গেছে মৃত্যুর দুই ঘণ্টা আগ পর্যন্ত মুনিয়া তার বোন নুসরাত তানিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন। এই সময় তিনি নুসরাতকে কলা আনার কথাও বলেছেন। অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি নুসরাত তানিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত মারা যাননি। কথা বলার পরবর্তী দুই ঘণ্টার মধ্যে মুনিয়া মৃত্যুবরণ করেছেন বলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। কাজেই প্রশ্ন উঠেছে এই সময়ে মুনিয়ার ফ্ল্যাটে কারা গিয়েছিল। এবং যাদেরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তাদের কেউ সে ফ্ল্যাটে গিয়েছিল কি না।

পিবিআই সূত্র বলছে, মুনিয়ার মামলাটি অত্যন্ত স্পষ্ট। মুনিয়া নিজ ফ্ল্যাটে মারা যান, বাহিরে কোথাও নয়। মৃত্যুর আগের ২৪ ঘণ্টা অথবা কথা বলার পরবর্তী সময় থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময় কেউ মুনিয়ার ফ্ল্যাটে গিয়েছিল কি না সেটি হল মামলার প্রধান উপজীব্য বিষয়। লক্ষণীয় ব্যাপার যে আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তাদের কেউেই ঐ সময়ের মধ্যে মুনিয়ার ফ্ল্যাটে যাননি। তাহলে মুনিয়ার বাড়িতে গিয়েছিল কে? সিসি টিভি ফুটেজটি প্রকাশ করা এবং নুসরাত তানিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমেই এর সমাধান হতে পারে বলে দাবি করছে একাধিক সূত্র।

বিশেষ করে মুনিয়ার মৃত্যুর আগে নুসরাতের নির্দেশে তিন জন ব্যক্তি মুনিয়ার বাসায় গিয়েছিল। তারা বিভিন্ন সময়ে মুনিয়ার বাসায় যেত। এরা নুসরাতের পরিচিত ও সহচর বলে জানা যায়। এই তিন জনকেই পরবর্তীতে নুসরাতের সঙ্গে গুলশান থানায় দেখা গেছে। পাশাপাশি সিএমএম আদালতেও এই তিন জন গিয়েছিল। এই তিন জনই নুসরাত তানিয়ার ঘনিষ্ট ব্যক্তি এবং যারা মুনিয়ার সম্পর্কে বিভিন্ন খোঁজ খবর নিতেন তাদের লোক বলে জানা গেছে।

কাজেই প্রশ্ন হলো যে মুনিয়ার বাসায় শেষ ‍দুই ঘণ্টায় যারা গিয়েছিল, যদি এটি হত্যাকাণ্ড হয় তাহলে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য তারাই দায়ী। অবশ্য পিবিআই পুরোপুরি বিষয়টি নিরপেক্ষ এবং নির্মোহ ভাবে তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ হলেই বুঝা যাবে মুনিয়া আদতে মুনিয়াকে হত্যা করা হয়েছে নাকি এটা আত্মহত্যা। যদি হত্যাই হয়ে থাকে তাহলে কারা হত্যা করল?