Sat. Apr 19th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার২৪, রবিবার ১৯সেপ্টেম্বর ২০২১ঃ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি)‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লব: বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়নের জন্য ব্যবসার পুনর্গঠন’ শীর্ষক দু’দিনের এক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৭-১৮ সেপ্টেম্বর অনলাইনে সম্মেলনটির আয়োজন করে চবি’র ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ব্যুরো অব বিজনেস রিসার্চ। চিটাগং ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সিইউসিবিএ) ও হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড সম্মেলনটির পৃষ্ঠপোষকতা করে।

ব্যুরো এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোঃ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ১৭ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪:০০ টায় ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবু তাহের উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে চবি’র উপ-উপচার্য প্রফেসর বেনু কুমার দে, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর এস. এম. সালামত উল্ল্যাহ ভূঁইয়া এবং ব্যাংকিং ও ইন্সুরেন্স বিভাগের প্রাক্তন সভাপতি প্রফেসর ড. সুলতান আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে মূখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন সম্মেলনের আহ্বায়ক ও একাউন্টিং বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ আইয়ুব ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ব্যুরোর পরিচালক ও ফাইন্যান্স বিভাগের প্রফেসর ড. এস. এম. শোহরাবুদ্দীন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, পিএইচডি ও এম.ফিল গবেষকগণ এবং শিক্ষার্থীরা এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ২০৪১ সালেরমধ্যে উন্নত দেশের কাতারে উন্নীতকরণ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের জন্য আইসিটি জ্ঞানসমৃদ্ধ উদ্যোক্তা সৃষ্টির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রফেসর বেনুকুমার দে বলেন, পঞ্চম শিল্পবিপ্লব অত্যাসন্ন এবং ঐ শিল্পবিপ্লব হবে ডিএনএ প্রযুক্তি নির্ভর। প্রফেসর ড. তাহের বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ফলে ব্যবসায়িক পরিম-ল অত্যন্ত দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং এর সুফল পেতে হলে শিক্ষক-কেন্দ্রিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিবর্তন করে শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে হবে। বিশেষ অতিথি প্রফেসর ড. সুলতান আহমদ টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও সামাজিক সাম্যের উপর অধিকতর গুরুত্ব প্রদানের পরামর্শ দেন। প্রফেসর ভূঁইয়া বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব রোবটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ন্যানো টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, ইন্টারনেট অব থিংসের যুগান্তকারী সময় হিসেবে চিহ্নিত হবে।

সম্মেলনের মূল আলোচনায় জনাব মাহতাব টেকসই উন্নয়নের জন্য ডিজিটাল যুগে ব্যবসা-বাণিজ্যকে কিভাবে পুনর্বিন্যাস করতে হবে তা পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে প্রাণবন্তভাবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ডিজিটাল যুগ তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভরযুগ এবং এই প্রযুক্তির উৎকর্ষতা ও সদ্ব্যবহারের উপর ভবিষ্যতের গতিপথ অনেকাংশে নির্ভরশীল। নিত্য নতুন তথ্য-প্রযুক্তি কিভাবে উৎপাদন, মিডিয়া, বিনোদন, যোগাযোগ, পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতকে প্রভাবিত করছে এ বিষয়ে চমৎকারভাবে আলোকপাত করেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ব্লকচেইন-নির্ভর চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সামাজিক অসমতা নিরসনে কার্যকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই শিল্প বিপ্লবের সুফল পেতে হলে প্রাণবন্ত নেতৃত্ব (Resilient Leadership), রি-ইমাজিনিং অপারেশনস (Reimagining Operations), ডিজিটাল প্রযুক্তি অভিযোজন, মানবসম্পদের জ্ঞান-ভিত্তিক দক্ষতা অর্জন এবং টেকসই উদ্ভাবন এর উপর অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তাগণ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ফলে দৈনন্দিন জীবন-জীবিকা, চাকুরি, ব্যবসা, সর্বোপরি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর এর প্রভাব ও চ্যালেঞ্জসহ নানাবিধ দিক নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনা করেন। স্বাগত বক্তব্যে প্রফেসর ড. আইয়ুব অংশগ্রহণকারী সকলকে ধন্যবাদ জানান, এবং শিল্প বিপ্লবের পটভূমি বর্ণনা করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এ সম্মেলন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একাডেমিক কারিকুলামে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। পরিশেষে প্রফেসর ড. সেলিম সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি অনুষ্ঠানকে সাফল্য ম-িত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ১০টি স্বতন্ত্র পর্বে দেশের স্বনামধন্য শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ বিভিন্ন প্রতিপাদ্য বিষয়ে প্রায় ৫০টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত পর্বগুলোতে অধিবেশনর সভাপতিগণ, আলোচকবৃন্দ এবং অংশগ্রহণকারীরা নিজ স্বচিন্তা ভাবনা ও অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ মতামত তুলে করেন।